ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ শাবান ১৪৪৬

আইন ও আদালত

পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় যে সুবিধা পাবে বিচার বিভাগ

ইলিয়াস সরকার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৫
পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় যে সুবিধা পাবে বিচার বিভাগ

ঢাকা: ১৯৭২ সালে সংবিধানে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও গত ৫০ বছরে তা কার্যকর করেনি কোনো সরকার। এমনকি ১৯৯৯ সালে আলোচিত মাসদার হোসেন মামলার রায়েও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বাস্তবায়ন করেনি।

আমলে নেওয়া হয়নি এ বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় আইনজ্ঞ ও অংশীজনের দাবি।

এমন প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর প্রধান বিচারপতির উদ্যোগে বিচার বিভাগের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাবনা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পাশাপাশি বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ ও সর্বোপরি নির্বাহী বিভাগ থেকে এটিকে পৃথক করতে আলাদা সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপনেরও সুপারিশ করতে যাচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্টের এমন উদ্যোগ ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে আশার আলো দেখছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক বিচারক। তাদের মতে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতে এটা অবশ্যই জরুরি ও এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি বাস্তবায়ন করলেই কেবল অধস্তন আদালতের বিচারকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে। নয়তো, তাদের নির্বাহী বিভাগ তথা আইন মন্ত্রণালয় ব্যবহার করবে।

* বিচার বিভাগ পৃথককরণে প্রথম পদক্ষেপ
১৯৭২ সালের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ‘নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ’ সংক্রান্ত ২২ অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গসমূহ হতে বিচারবিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। ’

* মাসদার হোসেন মামলা
১৯৭২ সালের পর ২০ বছর অতিক্রান্ত হলে এ নিয়ে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এর মধ্যে ১৯৯৪ সালে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বেতন গ্রেড নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষোভ থেকে তৎকালীন বিচারক মাসদার হোসেনসহ ৪৪১ বিচারকের পক্ষে হাইকোর্টে রিট করা হয়। এই রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট ১৯৯৭ জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস করার আদেশ দেন। রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আপিল করে। সেই আপিলের শুনানি শেষে এরপর ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ রায় দেন।

রায়ে কয়েক দফা নির্দেশনা দেন আদালত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-  সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের থাকবে; বিচার বিভাগ জাতীয় সংসদ বা নির্বাহী বিভাগের অধীনে থাকবে না ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ সব বিচারক স্বাধীনভাবে কাজ করবেন; জুডিশিয়ারির (নিম্ন আদালত) বার্ষিক বাজেট প্রণয়নের ওপর নির্বাহী বিভাগের কোনো হাত থাকবে না। এই বাজেট সুপ্রিম কোর্ট প্রণয়ন ও বরাদ্দ করবে।

* পৃথক ঘোষণা
আপিল বিভাগের ওই রায় ঘোষণার প্রায় ৮ বছর পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর তৎকালীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সেই ঘোষণা কাগজে কলমে রয়ে যায়।

* নতুন উদ্যোগ
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান প্রধান বিচারপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন। একইসঙ্গে পদত্যাগ করেন আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, জাহাঙ্গীর হোসেন, মো. শাহিনুর ইসলাম ও কাশেফা হোসেন। এরপর ১০ আগস্ট দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। গত ২১ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেনে অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশ্যে অভিভাষণ দেন। সেখানে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের স্বার্থে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন একান্ত আবশ্যক। বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৬ক অনুচ্ছেদে অধস্তন আদালতের বিচারকগণ বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন মর্মে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বিচারকদের প্রকৃত স্বাধীনতা ততদিন পর্যন্ত নিশ্চিত হবে না; যতদিন না বিচার বিভাগে দীর্ঘ দিন ধরে বিরাজমান দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা, অর্থাৎ, সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের যৌথ এখতিয়ার সম্পূর্ণরূপে বিলোপ করে জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। এটি হবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকল্পে প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রথম ধাপ।

সরকারের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ন্যায় বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তাব প্রস্তুতক্রমে আমরা শীঘ্রই আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো।

* সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে
গত ২৭ অক্টোবর পৃথক সচিবালয়ের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ একটি সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দেশে ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে দীর্ঘদিন যাবত বিচার বিভাগের উপর নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব প্রয়োগের প্রবণতার যে চর্চা অব্যাহত রয়েছে তা রোধ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা রয়েছে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, এর ফলে স্বাধীনতার পর হতে অদ্যাবধি আমাদের দেশে আইনের শাসন ও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা চর্চার সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ, আমাদের সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ নিশ্চিতকরণকে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।  
তাই দেখা যাচ্ছে, আমাদের সংবিধানে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক রাখার কথা বলা হলেও সমকালীন রাজনৈতিক বাস্তবতায় এদেশে বিচার বিভাগের কার্যকর পৃথকীকরণ অসম্পূর্ণই থেকে গেছে। তবে এ কথা অনস্বীকার্য, এমন একটি প্রেক্ষাপট সত্ত্বেও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৭৯/১৯৯৯ নম্বর সিভিল আপিল মামলার রায়ে (যা মাসদার হোসেন মামলা নামেই অধিক সমাদৃত) নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের পূর্ণ রূপরেখা তুলে ধরার মাধ্যমে আমাদের দেশে ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির বাস্তবায়নের পথকে সুগম করে দিয়েছে। উক্ত রায়ে ক্ষমতার পৃথকীকরণের যে রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে তার অন্যতম মৌলিক ভিত্তি হলো দেশের বিচার বিভাগের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা।

প্রস্তাবনায় বলা হয়, ওই মামলার রায়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত বর্তমানে প্রচলিত দ্বৈত-শাসন কাঠামো তথা অধস্তন আদালতের বিচারকগণের নিয়োগ, বদলি, শৃঙ্খলা প্রভৃতি বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্টের যে যৌথ এখতিয়ার রয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে বিলোপ করে বিচার বিভাগের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠাকে ক্ষমতার পৃথকীকরণের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করেছে।  

এ কথা সত্য যে, বিগত বছরগুলোয় রাজনৈতিক সরকারের অনীহার কারণে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ সম্ভব হয়নি। এ কারণে বিগত জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বর্তমান সময় হচ্ছে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের শ্রেষ্ঠ সময়। এ প্রচেষ্টার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে নির্বাহী বিভাগ হতে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন একটি পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা। কেননা, কেবলমাত্র পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই আমাদের দেশে দক্ষ, নিরপেক্ষ ও মানসম্পন্ন বিচার কাজের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদে হাইকোর্ট বিভাগের অধস্তন সকল আদালত ও ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রি অধস্তন আদালতের বিভিন্ন বিষয় পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট তথা হাইকোর্ট বিভাগকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করে থাকে। কিন্তু হাইকোর্ট বিভাগের এই তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ নয়। কেননা বিদ্যমান কাঠামোতে আইন মন্ত্রণালয় হতে অধস্তন আদালত সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রস্তাব আসার পর হাইকোর্ট বিভাগ তার তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে। কিন্তু আমাদের সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদের মর্ম অনুসারে অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ হাইকোর্ট বিভাগের একচ্ছত্র অধিকার। তাই সাংবিধানিক এই বাধ্যবাধকতা সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা অত্যাবশ্যক।

* সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব
জেলা পর্যায়ের আদালতের বিচারকদের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়,

(ক) বিদ্যমান সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে মতে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ প্রদানকারী ভূমিকা পরিবর্তন করতে হবে এবং বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরি এবং বেতন-ভাতা ও আর্থিক সুবিধাদি নিয়ন্ত্রণ) ও শৃঙ্খলা বিধান সুপ্রিম কোর্টের উপর ন্যস্ত করতে হবে।
(খ) এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য মাসদার হোসেন মামলায় প্রদত্ত ১২ দফা নির্দেশনার আলোকে প্রণীত বিভিন্ন চাকরি বিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে।
(গ) বিচার-কর্মবিভাগের প্রবেশ পদে নিয়োগের সুপারিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত বর্তমান জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের কার্য পরিধির বিস্তৃতি ঘটিয়ে অ্যাটর্নি সার্ভিসের প্রবেশ পদে নিয়োগকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ উদ্দেশ্যে কমিশনের নাম পরিবর্তন করে লিগ্যাল অ্যান্ড জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন রূপে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এর জন্য সংবিধানে আনুষঙ্গিক বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে হবে অথবা বিদ্যমান সংবিধানের ১৩৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে হবে।
(ঘ) ওপরের প্রস্তাবমতে সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার যথাযথ ও কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং সমগ্র বিচার বিভাগের প্রশাসনিক, আর্থিক এবং আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাকে নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখার জন্য সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব সচিবালয় প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। সেই লক্ষ্যে বিদ্যমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের (সংসদ সচিবালয়) অনুরূপ বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে সংবিধানের ১১৩ অনুচ্ছেদ এই মর্মে সংশোধন করতে হবে যে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের দুটি ইউনিট থাকবে: (অ) সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব কাজকর্মে সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল। (আ) বিচার-কর্মবিভাগের বিষয়াদি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল।

(৩) বিচার-কর্মবিভাগের জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং বাজেট নিশ্চিত করতে হবে যার নিয়ন্ত্রণ থাকবে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের হাতে।

(৪) বিদ্যমান সংবিধানের ৮৮ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংযুক্ত তহবিলের উপর দায়যুক্ত ব্যয়ের তালিকায় বিচার-কর্মবিভাগে কর্মরত জনবলকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন এবং বিচার বিভাগের প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে ঘোষিত নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের মূলনীতিকে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে অর্থবহ ও কার্যকররূপে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কমিশন প্রস্তাবগুলো হলো:

(ক) বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ এবং সর্বোপরি নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে পৃথকীকরণের জন্য পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন করতে হবে।
(খ) সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপনের নিমিত্তে একটি স্বতন্ত্র আইন বা অধ্যাদেশ প্রণয়ন করতে হবে।
(গ) রুলস অব বিজনেস যথাযথভাবে সংশোধন করতে হবে।
(ঘ) অ্যালোকেশন অব বিজনেস সংশোধনপূর্বক আইন ও বিচার বিভাগ এবং সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের কার্যপরিধি পৃথকীকরণপূর্বক স্ব স্ব কার্য পরিধি সন্নিবেশিত করতে হবে।
(ঙ) বিচার বিভাগের দাপ্তরিক কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় নির্দেশমালা প্রণয়ন করতে হবে।
(চ) সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের জন্য পৃথক জনবল কাঠামো সম্বলিত সাংগঠনিক কাঠামো প্রস্তুত ও অনুমোদন করতে হবে। অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত জনবলের পদ সৃষ্টিসহ টিওএন্ডইতে অন্তর্ভুক্ত অফিস সরঞ্জামাদির প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
(ছ) সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের জন্য পৃথক অবকাঠামো, জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিত করতে হবে।

পৃথক সচিবালয়ের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, প্রধান বিচারপতির এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। পৃথক সচিবালয় স্থাপন করা হলে অধস্তন আদালতের কোনো বিচারকের রায় পছন্দ না হলে বা কথা না শুনলে সরকার আর তাদের বদলি করতে পারবে না। কারণ আমরা দেখেছি, গত সরকারের আইনমন্ত্রী কীভাবে অধস্তন আদালতের বিচারকদের ওপর হস্তক্ষেপ করেছিল।

তিনি বলেন, অনেকসময় কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে আসলে সুপ্রিম কোর্ট তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বললেও মন্ত্রণালয় সেটা নিতো না। গেজেট জারি করতো না। পৃথক সচিবালয় হয়ে গেলে সে সমস্যা আর থাকবে না। অধস্তন আদালতের বিচারকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে। তবে যদি সরকার এটা না করতে চায়, তাহলে সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রধান বিচারপতির সামনে আছে। সে অনুসারে প্রধান বিচারপতি ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

তবে সাবেক সিনিয়র জেলা জজ ড.শাহজাহান সাজু বলেন, পৃথক সচিবালয় স্থাপনের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী। এটা এবার হবে। এটা হলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, শৃঙ্খলার বিষয়টি এককভাবে উচ্চ আদালতের হাতে থাকবে। বিচারকরাও স্বাধীন থাকবেন।   

বাংলাদেশ সময়: ১০১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৫
ইএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।