ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় দায়ের হওয়া ‘পুলিশ হত্যা মামলায়’ প্রধান দুই আসামি তাদের জবানবন্দি প্রত্যাহার করে নিলে ১৭ বছর বয়সী হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে আদালতে যেতে হতো না। জুলাইয়ের আন্দোলনকারী ফাইয়াজের মামলা এখনো প্রত্যাহার না হওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনার প্রেক্ষাপটে এ কথা জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
রোববার (২০ এপ্রিল) সকালে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সহকারী জজ ও সমপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ‘৫০তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স’র উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা জানান।
আসিফ নজরুল বলেন, যেই মামলা তদন্তের মধ্যে থাকে, সেই মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়ার অধিকার শুধু পুলিশ অথবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রয়েছে। যদি একটি মামলার চার্জশিট হয়ে যায় তখন এখানে আইন মন্ত্রণালয়ের মামলা প্রত্যাহার করার এখতিয়ার বা সুযোগ থাকে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা করেছিল, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তখনকার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পুলিশপ্রধানের (আইজিপি) সঙ্গে বৈঠক করে অনুরোধ করেছিলাম, এই মামলাগুলোর ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি যেন নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেটা অনুযায়ী ওনারা সব মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছেন জেনেছিলাম। পরে আমাদের জানানো হয়েছিল, অল্প কিছু মামলা এখনো রয়ে গেছে, যেগুলো হত্যা সংক্রান্ত। ফাইয়াজের মামলা এমন একটি মামলা, যেখানে দুইজন আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। আমি খবর নিয়ে জানলাম, ওনারা যদি ১৬৪ ধারার জবানবন্দিটা প্রত্যাহার না করেন, তাহলে এই মামলাটার নিষ্পত্তি বা ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া খুবই দুষ্কর। এটা সম্পূর্ণ পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারাধীন বিষয়। এখানে আইন মন্ত্রণালয়ের করার কিছু নেই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের যতই সদিচ্ছা থাক, একটি মামলা চার্জশিট পর্যায়ে আসার পরই কেবল আইন মন্ত্রণালয় কিছু করতে পারে। তার আগে কোনো কিছু করার সুযোগ আইন মন্ত্রণালয়ের নেই। আমি আশা করবো, যারা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ আছে, তারা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। যারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন, তারা যেন সেটি প্রত্যাহার করার পদক্ষেপ নেন। যাতে করে এই মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি (ফাইয়াজ) তার ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তাকে বলেছি, এটা হচ্ছে প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় যদি এগুনো হয়, তাহলে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব। আমি তাকে প্রক্রিয়াটি বুঝিয়ে বলেছি।
উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা আইন দ্বারা পরিচালিত হই। আইনের বাইরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ আইন মন্ত্রণালয় করতে পারবে না, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করতে পারবে না, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ মৎস্য মন্ত্রণালয় করতে পারবে না। এটা সবার বোঝার কথা। আমার যতই প্রত্যাশা, আন্তরিকতা, ইচ্ছা থাক, এই কাজটি প্রক্রিয়াগতভাবে ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের পরামর্শ ও অনুরোধ করা ছাড়া কিছু করার নেই।
ফাইয়াজের মামলা প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, যারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন, পুলিশ তাদের অত্যাচার-নির্যাতন করে সেটি নিয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি। এই সরকার এসেছে আট মাস হয়ে গেছে। ওনারা (জবানবন্দিদাতারা) এখনো সেটি প্রত্যাহার করে নেননি কেন? এটা ওনাদের জিজ্ঞেস করেন। এটা করলে তো শিশু ফাইয়াজকে কোর্টে যেতে হতো না।
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি মো. এমদাদুল হক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২৫
এসসি/এইচএ