ঢাকা, সোমবার, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০৯ সফর ১৪৪৭

আইন ও আদালত

হাসিনার মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল বললেন—সর্বোচ্চ শাস্তি চাই

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৩৯, আগস্ট ৩, ২০২৫
হাসিনার মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল বললেন—সর্বোচ্চ শাস্তি চাই অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান | সংগৃহীত ছবি

জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচার শুরু হওয়া পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, জুলাইতে ইতিহাসের নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সে হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে এসে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অবশ্যই সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। সেই সর্বোচ্চ শাস্তি চাই আইনি পরিকাঠামোয়।

রোববার (৩ আগস্ট) বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ সূচনা বক্তব্যের আগে অ্যাটর্নি জেনারেল এমন বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এরপর সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

এ সময় তিনি জুলাই আন্দোলন নিয়ে দুটি ভিডিও চিত্র উপস্থাপন করেন। তারপর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষ্য দিয়েছেন যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে মুখের আকৃতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া খোকন চন্দ্র বর্মন।

বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমরা ইতিহাসের পাতা খুললে দেখতে পাই বিশ্বের দেশে দেশে স্বৈরশাসক, ফ্যাসিস্টদের জন্ম হয়েছে। এডলফ হিটলার, মুসোলিনি, ফ্রান্সিসকো ফ্রান্স, মার্কোস—এ সমস্ত ফ্যাসিস্টদের অনেকে বিচারের মুখোমুখি হয়েছে।

ব্রিটেনের শাসক অলিভার ক্রমওয়েলের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৬৬১ সালে মত্যুবরণ করেন। ক্রমওয়েলকে গণহত্যার দায়ে এমনভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, কবর থেকে তুলে এনে পচাগলা লাশকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে জনসম্মুখে দেখানো হয়েছিল গণহত্যার মানবতাবিরোধী অপরাধের শাস্তি কী হওয়া উচিত। দেহ কবরে পাঠিয়ে দিয়ে মাথার খুলির মধ্যে রড ঢুকিয়ে ২০ বছর ওয়েস্টমিনিস্টারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। ৩০০ বছর পরে সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে সেই লাশকে সমাধিত করা হয়েছিল। কারণ আগামীর ব্রিটেন যেন মানুষদের গণহত্যা না করে সেই রকম একটা বিচার করেছিল অলিভার ক্রমওয়েলের বিচারের মধ্য দিয়ে।

মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের রাষ্ট্র অনেক এগিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে। আমাদের আইনে আমরা বলেছি, যে জঘন্য অপরাধ হয়েছে, আমরা হয়তো অলিভার ক্রমওয়েলের মতো এরকম নির্মম নিষ্ঠুর এভাবে লাশ ঝুলিয়ে রেখে... ফাঁসি দেব অতটা অমানবিক আমরা নই। একইসঙ্গে জুলাইতে ইতিহাসের নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সে হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে এসে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অবশ্যই সর্বোচ শাস্তি চাই। সেটি চাই আইনি পরিকাঠামোয়। যে উপাদান আদালতের সামনে প্রসিকিউশন আনবে... আমরা যদি সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারি, আপনারা ন্যায়বিচার করবেন।

শেখ হাসিনার বিষয়ে তিনি বলেন, স্বৈরাচারদের যদি কোনো সমিতি করা হয় তাহলে আজকে যে স্বৈরাচার, খুনির বিচারের মুখোমুখি এই রাষ্ট্র করেছে, সে সমিতির সভাপতি হতে পারে। হিটলারের গোয়েবলস যদি বেঁচে থাকতেন হয়তো ভাবতেন মিথ্যা কথা শেখার জন্য, মিথ্যা কথা বলার জন্য, মিথ্যা সংস্কৃতি চালু করার জন্য পিএইচডি করার প্রয়োজন, সেই পিএইচডি করতে হয়তো উনি এই স্বৈরাচারের কাছে আসতেন। এই স্বৈরাচারের নাম শেখ হাসিনা ওয়াজেদ। যিনি আদালতের সামনে একজন আসামি ছাড়া আর কিছুই নন।

অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, আমাদের এখানে ব্যক্তিগত কোনো আক্রোশ নেই। আমরা অপরাধের বিচারের জন্য এসেছি। ঘটনাক্রমে সেই অপরাধের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তারা ব্যক্তি। হয়তো অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো রাজনৈতিক দলও আসতে পারে ভবিষ্যতে। আমরা জানি না। আমরা ন্যায়বিচার চাই।

ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আইন ও আদালত এর সর্বশেষ