ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নিতে ফের আহ্বান প্রধান বিচারপতির

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৬
ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নিতে ফের আহ্বান প্রধান বিচারপতির   বক্তব‌্য দিচ্ছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা /ছবি দীপু মালাকার

সুপ্রিম কোর্টের স্থান সংকটের কারণে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নিতে আইন মন্ত্রণালয়কে ফের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

ঢাকা: সুপ্রিম কোর্টের স্থান সংকটের কারণে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নিতে আইন মন্ত্রণালয়কে ফের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

তিনি বলেছেন, ‘বিচারপতিদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না।

সীমিত পরিসরে সুপ্রিম কোর্ট জাদুঘরে ঐতিহাসিক স্মারকগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে। পুরনো হাইকোর্ট ভবন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হলে সুপ্রিম কোর্টের তীব্র অবকাঠামোগত সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে। এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণে আমি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে আবারো অনুরোধ করছি’।

 

শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন-২০১৬’ উদ্বোধনকালে এ আহ্বান জানান তিনি।

দুই দিনব্যাপী বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘বিচার বিভাগীয় তথ্য বাতায়ন’ এরও উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার সংক্রান্ত বস্তু ও ঐতিহাসিক স্মারকগুলো সংগ্রহ করে সুপ্রিম কোর্ট জাদুঘরে সংরক্ষণ ও একটি আর্কাইভ থাকা আবশ্যক। কিন্তু দুঃখের বিষয়, স্থান সংকুলানের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না।

সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘গত ৩০ জুনের পরে পুরনো হাইকোর্ট ভবন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অন্যত্র সরিয়ে নিতে অনুরোধ করা হলেও এর কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জেল হত্যা মামলা, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হত্যার মতো মর্মান্তিক মামলাগুলো যদি জেলা আদালতে হতে পারে, তাহলে যুদ্ধাপরাধীর মামলার বিচার সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনের বাইরে হতে কোনো অসুবিধা নাই’।

তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টে বিচারকদের বসার স্থান সংকট রয়েছে। আমাদের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকরা  বারান্দায় চেম্বার করেন। সুপ্রিম কোর্টে কোনো প্রশাসনিক ভবন নেই। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শিশুদের পরিচর্যায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ডে কেয়ার সেন্টার এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট মেডিকেল সেন্টারের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার তীব্র সংকট রয়েছে’।

‘সুপ্রিম কোর্টে পুলিশ ব্যারাকের জন্যও কোনো স্থান নাই। ফলে সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না’।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের দেশের উচ্চ আদালতের বিচারকদের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। একটি পূর্ণাঙ্গ ও আধুনিক মধ্যম মানের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি স্থাপনে কমপক্ষে ২৫ একর জমি প্রয়োজন। এজন্য জমি বরাদ্দ প্রদানে গত ২২ মার্চ সংশ্লিষ্ট সকলকে চিঠি দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা করেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত আশাব্যঞ্জক কোনো ফল পাওয়া যায়নি’।

‘আমি ইদানিং ভারতের প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করে ভারতীয় হাইকমিশনে একটি মেমোরেন্ডাম পাঠিয়েছি। এটিতে স্বাক্ষর করেছি। এটি হলে নিম্ন আদালতের ৫০০ জন বিচারক ভারতে ট্রেনিং নিতে পারবেন। আমি আশা করি, প্রধানমন্ত্রীর পরবর্তী ভারত সফরে চুক্তি হলে এটি কার্যকর হবে’।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ছাড়াও দেশের নিম্ন আদালতের বিভিন্ন পর্যায়ের বিচারক ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘বিচার বিভাগীয় তথ্য বাতায়ন’ এরও উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা/ছবি-দীপু মালাকারউদ্বোধনী অধিবেশনে অতিথি ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরী, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি। সভাপতিত্ব করেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা।
সম্মেলনের কর্ম অধিবেশনে ‘অধস্তন আদালত পরিদর্শনের ভিত্তিতে আদালত ও মামলা ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আপিল বিভাগের বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের কর্ম অধিবেশন রোববার (২৫ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। কর্ম অধিবেশনে বেশ কিছু বিষয় আলোচনার জন্য রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে,‘সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রমে এনজিও’র ভূমিকা’, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ বাস্তবায়নে সমস্যা ও সমাধান’, ‘আদালত প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধিতে করণীয়’,‘মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের করণীয়’, ‘আধুনিক বিচার ব্যবস্থায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতি প্রয়োগের অপরিহার্যতা’।

এসব বিষয়ের ওপর জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারক, অতিরিক্ত দায়রা জজ, যুগ্ম জেলা জজ,সিনিয়র সহকারী জজ, চিফ মেট্টোপলিটন ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কর্মকর্তা এবং স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটররা (পিপি) বিষয় ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেবেন।

সভাপতি ও সঞ্চালকের ভূমিকায় থাকবেন আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বেশ কয়েকজন বিচারপতি।

** চালু হলো ‘বিচার বিভাগীয় তথ্য বাতায়ন’

** জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন চলছে

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৬
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।