ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘শ্যামল কান্তি ছাত্রকে মারধর করেছেন, কটূক্তি করেননি’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৭
‘শ্যামল কান্তি ছাত্রকে মারধর করেছেন, কটূক্তি করেননি’

ঢাকা: লাঞ্ছনার শিকার নারায়ণগঞ্জের স্কুল শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ওই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ রিফাত হাসানকে গত বছরের ০৮ মে মারধর করেছেন বলে বিচারিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।  তবে ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে শিক্ষক শ্যামল কান্তির কটূক্তি করার সত্যতা পাওয়া যায়নি।

রোববার (২২ জানুয়ারি) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এরপর আদালত এ বিষয়ে করা অভিযোগ (জিডি) ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে।

হাইকোর্ট বলেছেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) তদন্ত প্রতিবেদনটি হাইকোর্টে দাখিল করা হয়।

রোববার সেটি আদালতে উপস্থাপন ও রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। ইসলাম ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়ানোর পর গত বছরের ১৩ মে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত লাঞ্ছনার শিকার হন।

এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর আদালতের নজরে আনেন সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মহসিন রশিদ। এরপর আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। পাশাপাশি এ ঘটনায় কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা সংশ্লিষ্টদের আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এরপর শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে ওঠ-বস করানোর ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সম্পৃক্ততা না পাওয়া সংক্রান্ত পুলিশের প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর গত বছরের ১০ আগস্ট এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

আদালতের এ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অক্টোবর মাসে ঢাকার সিএমএম শেখ হাফিজুর রহমান নারায়ণগঞ্জে তদন্তে যান। তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকার সিএমএম আদালতের দুই হাকিম গোলাম নবী ও মাজহারুল ইসলাম।   মোট ৬৫ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনে ২৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

বিচারিক প্রতিবেদনে ছয়টি সিদ্ধান্ত তুলে ধরা হয়। সেগুলো হচ্ছে-শ্যামল কান্তি ওই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ রিফাত হাসানকে গত বছরের ৮ মে মারধর করেছেন। ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে শ্যামল কান্তির কটূক্তি করার সত্যতা পাওয়া যায়নি। গত বছরের ১৩ মে ওই স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভা চলাকালে স্থানীয় জনৈক শামসুল হকের ছেলে অপুর নেতৃত্বে ১০-১২ জন সভাকক্ষে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে মারধর করার বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে অপু ছাড়া বাকি ১০ -১২ জনের নাম কোনো সাক্ষীই প্রকাশ করেননি।

সভা চলাকালে আনুমানিক বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় মসজিদ থেকে ঘোষণা প্রদান করা হয় যে, ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন শ্যামল কান্তি। কে বা কারা ওই ঘোষণা দিয়েছেন, তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে কমিটির সদস্যদের মধ্যে বিরোধের কারণে এমন ঘোষণা দেওয়া হতে পারে বলে বিশ্বাস করার কারণ আছে।

গত বছরের ১৩ মে বিকেল পাঁচটার দিকে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান প্রধান শিক্ষকের রুমে ঢুকে তাকে গাল-কান জুড়ে দুই হাত দিয়ে পর পর চারটি থাপ্পড় দিয়েছেন-এমন দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের নির্দেশে শ্যামল কান্তি ভক্ত কান ধরে ওঠ-বস করতে বাধ্য হয়েছেন- ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে সাক্ষীদের সাক্ষ্য পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়েছে যে, উপস্থিত স্থানীয় জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ সদস্য ওই নির্দেশ দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।