ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

উল্টো নিজেই ফেঁসে গেলেন সেই গাড়িটির কথিত মালিক!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৭
উল্টো নিজেই ফেঁসে গেলেন সেই গাড়িটির কথিত মালিক! হাইকোর্ট; ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ভাটারা থানাপুলিশের আটক করা গাড়িটি নিজের বলেই দাবি করেছিলেন ব্যবসায়ী মোমিন উদ্দিন। ফেরত না পেয়ে হাইকোর্টে রিট পর্যন্ত করেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার উল্টে গেল সব। ওসির বিরুদ্ধে রিটকারী ব্যবসায়ী মোমিন উদ্দিন উল্টো নিজেই ফেঁসে গেলেন। কেননা গাড়িটি আসলে তার নয়, অন্য একজনের।

অন্যের গাড়ি নিজের বলে দাবি করে ব্যবসায়ী মোমিন উদ্দিন এখন নিজেই হয়ে গেলেন অপরাধী। গাড়ি ফিরে পাওয়া তো দূরের কথা, বরং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হলো তাকে।

আর ওসির বিরুদ্ধে জারি করা রুল খারিজ করে আদালত ওসিকে দিয়েছেন অব্যাহতি।

এ সুবাদে গাড়ির প্রকৃত মালিক বিচারিক আদালতে আবেদন করে আইন অনুসারে গাড়িটি ফেরত নিয়ে যেতে পারবেন। আদেশে একথাও বলেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস। গাড়ির মালিক বলে দাবি করা মোমিন উদ্দিনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন।

বেলায়েত হোসেন তার মক্কেলের পক্ষে দাবি করেছিলেন, রাজধানীর কুড়িলের ব্যবসায়ী মো. মোমিন উদ্দিন গত ১৩ জুলাই ভাটারা থানাধীন একটি শপিং মলের সামনে গাড়ি (টয়োটা অ্যালিয়ন ১৫০০ সিসি, ঢাকা মেট্রোগ-২৭-৮৯৫৫) রেখে কেনাকাটা করতে যান। পরে নিচে এসে দেখেন গাড়িটি নেই। খবর নিয়ে জানতে পারেন ভাটারা থানার এস আই মো.শহীদুল ইসলাম গাড়িটি থানায় নিয়ে গেছেন।

তার ভাষায়, ‘গাড়ির মালিকানার প্রমাণ হিসেবে বিআরটিএ’র প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করেও’ গাড়িটি আর ফেরত পাওয়া যায়নি। ০৭ আগস্ট গাড়ি ফেরত পেতে করা লিখিত আবেদনও নাকি গ্রহণ করেননি ওসি। তাই গাড়ি ফেরত পাবার নির্দেশনা চেয়ে ২২ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন তারা।

প্রাথমিক শুনানি শেষে ভাটারা থানার ওসির বিরুদ্ধে রুল জারি করে গাড়িসহ ওসিকে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে হাজির হবার নির্দেশ দেন আদালত। এআদেশ অনুসারে সকালে হাইকোর্টে হাজির হন ভাটারা থানার ওসি কামরুজ্জামান ও এসআই শহীদুল ইসলাম।

শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস বলেন, ১৩ জুলাই পুলিশ পরিত্যক্ত অবস্থায় গাড়িটি আটক করে পরের দিনই বিচারিক আদালতে জব্দ তালিকা দাখিল করা হয়। এদিকে গাড়ির প্রকৃত মালিক কে তা জানতে চেয়ে পুলিশ বিআরটিএকে চিঠি দেয়। বিআরটিএ জানায়, গাড়ির প্রকৃত মালিক মাহজাবিন চৌধুরী নামের একজন। এছাড়া গাড়ির মালিক বলে দাবিকারী ব্যবসায়ী মোমিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে ভাটারা ও দাউদকান্দি থানায় তিনটি মামলাও আছে।

এ সময় আদালত মালিকানা বিষয়ে জানতে চাইলে মোমিন উদ্দিনের আইনজীবী বেলায়েত হোসেন জানান, ‘গাড়িটি নোবেল কার হাউজ থেকে কেনা হয়েছে। তারা নিয়েছেন মাহজাবিন চৌধুরীর কাছ থেকে। আমরা বিআরটিএ’র কাছে মালিকানা হস্তান্তরের আবেদন করেছি। সব ফি-ও পরিশোধ করেছি। ’

এ সময় আদালত বলেন, চুক্তিনামা, মালিকানা হস্তান্তরের কাগজপত্র কিছুই তো দেখাতে পারছেন না!বিআরটিএ তো বলছে গাড়িটির মালিক মাহজাবিন চৌধুরী!’

ওসি কামরুজ্জামান আদালতে জানান, গাড়িটি নিম্ন আদালতের আদেশে জব্দ করা অবস্থায় থানায় রাখা হয়েছে।

গাড়ির মালিক বলে দাবিকারী মোমিন উদ্দিন অপর তিন মামলায় জামিনে আছেন কিনা আদালত সে বিষয়ে খোঁজ নিতে বলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে। এজন্য দুপুর ২টা পর্যন্ত মোমিন উদ্দিনকে কোর্ট পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়। পরে তিন মামলায় জামিনে আছেন বলে আদালতকে জানানো হয়।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস বলেন, গাড়ির মালিক বলে দাবিকারী মোমিন উদ্দিন নিজের দাবির পক্ষে সঠিক তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেননি। তিনি গাড়িটির প্রকৃত মালিক নন। এ কারণে আদালত তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। এখন গাড়ির মূল মালিক বিচারিক আদালতে আবেদন করে গাড়ি ফেরত নিতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়:১৭৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৭
ইএস/জেএম


 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।