শনিবার (২৮ অক্টোবর) রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
ডিআইজি বলেন, গত ১৯ অক্টোবর গ্রেফতার হওয়া বিজয় জাপানি নাগরিক কুনিও হোসি, কাউনিয়ার মাজারের খাদেম রহমত আলী ও গাইবান্ধার ডা. দিপ্তী হত্যাসহ বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডে জড়িত।
গত ১৯ অক্টোবর র্যাব সদস্যরা বগুড়ার শাজাহানপুর থানার ডেমাজানিতে নিজের দর্জি দোকান থেকে মোহাদ্দেছ আলীকে ওরফে বিজয়কে গ্রেফতার করেন। পরে বগুড়ার আদালত বিজয়ের দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে থাকাকালে কুনিও হত্যায় নিজের জড়িত থাকার কথাসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন মোহাদ্দেস আলী বিজয়।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কুনিও হোসি হত্যার দায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) পাঁচ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেন রংপুরের বিশেষ জজ নরেশ চন্দ্র সরকারের আদালত। মামলার জীবিত ছয় আসামির মধ্যে অন্যজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জেএমবি’র পীরগাছার আঞ্চলিক কমান্ডার উপজেলার পশুয়া টাঙ্গাইলপাড়ার মাসুদ রানা ওরফে মামুন ওরফে মন্ত্রী (২১), একই এলাকার ইছাহাক আলী (২৫), বগুড়ার গাবতলী এলাকার লিটন মিয়া ওরফে রফিক (২৩), বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কুড়িগ্রামের রাজারহাটের মকর রাজমাল্লী এলাকার আহসান উল্লাহ আনসারী ওরফে বিপ্লব (২৪) এবং গাইবান্ধার সাঘাটার হলদিয়ার চর এলাকার সাখাওয়াত হোসেন (৩২)।
হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পেয়েছেন পীরগাছার কালীগঞ্জ বাজারের আবু সাঈদ (২৮)।
চার্জশিটভুক্ত আট আসামির মধ্যে অন্য দু’জন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাদেরকে মামলার অভিযোগ থেকে বাদ দিয়ে রায় ঘোষিত হয়। তাদের মধ্যে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের গজপুরি এলাকার নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক হাসান (২৮) অভিযোগ গঠনের আগেই গত বছরের ০১ আগস্ট রাজশাহীতে এবং কুড়িগ্রামের রাজারহাটের চর বিদ্যানন্দ এলাকার সাদ্দাম হোসেন ওরফে রাহুল ওরফে চঞ্চল ওরফে সবুজ ওরফে রবি (২১) অভিযোগ গঠনের পরে গত ০৫ জানুয়ারি ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
জেএমবি’র ওই আট জঙ্গির বিরুদ্ধে গত বছরের ০৭ আগস্ট রংপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী।
পরে মামলাটি রংপুরের বিশেষ জজ নরেশ চন্দ্র সরকারের আদালতে স্থানান্তরিত হলে গত বছরের ১৫ নভেম্বর সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।
মামলায় বাদীপক্ষের ৫৫ জন সাক্ষী এবং আসামিপক্ষের একজন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আসামি সাখাওয়াত হোসেনের পক্ষে আব্দুল মজিদ মণ্ডল আদালতে সাফাই সাক্ষ্য দেন। এর মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শেষ হয়।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচার কাজ শেষ হলে ২৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন ধার্য করেন আদালত।
বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রথীশ চন্দ্র ভৌমিক। আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট আফতাব হোসেন ও আবুল হোসেন।
২০১৫ সালের ০৩ অক্টোবর সকালে জাপানি নাগরিক কুনিও হোসিকে কাউনিয়া উপজেলার আলুটারি এলাকায় গুলি করে হত্যা করেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র জঙ্গিরা।
বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৭
এএসআর