ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

মেঘনার পাড় ভরাট ও নির্মাণকাজে স্থিতাবস্থা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২১
মেঘনার পাড় ভরাট ও নির্মাণকাজে স্থিতাবস্থা

ঢাকা: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় মেঘনা নদীর অংশবিশেষ ও নদীর সঙ্গে সংযুক্ত সোনারামপুর খাল ভরাট এবং সেখানে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এপিএসসিএল) স্থাপনা নির্মাণ কার্যক্রমের ওপর তিন মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেছেন হাইকোর্ট।

জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার (৮ নভেম্বর) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি জনাব মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিট আবেদনটি দায়ের করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। আদালতে বেলার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ আশরাফ আলী।

পরে বেলা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সরকারি মালিকানাধীন আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এপিএসসিএল) কর্তৃপক্ষ সোহাগপুর ও বাহাদুরপুর মৌজায় মেঘনা নদীর পাড় ও নদীর ভেতরের শত শত একর জায়গা অবৈধভাবে ভরাট করছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এপিএসসিএল তাদের নিজস্ব জায়গা ভরাট করছে বলে দাবি করলেও বিআইডব্লিউটিএ এবং পাউবোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জায়গাটি পরিদর্শন করে ভরাট করা জায়গা নদীর বলেই তাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।

বালু ভরাট অংশের পশ্চিম-উত্তর পাশ দিয়ে সোহাগপুর গ্রামের দিকে বড় খাল গেছে। সম্প্রতি বেলা প্রতিনিধিদের সরেজমিন পরিদর্শনে প্রতীয়মান হয়, আশুগঞ্জ বন্দর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তর দিকে এপিএসসিএলের রেস্টহাউস। এর পেছনে সীমানাপ্রাচীর থেকে নদীর দিকে ১৫০ থেকে ২০০ ফুট প্রস্থের ও দুই থেকে আড়াই হাজার ফুট দৈর্ঘ্যের নতুন করে দেওয়াল নির্মাণ করে বালু ভরাট করা হয়েছে। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ কৌশলে কেন্দ্রের রেস্টহাউসের পেছনে নিজেদের সীমানাপ্রাচীরের বাইরে মেঘনা নদীর পাড়ে এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নতুন করে প্রতিরক্ষা দেওয়াল নির্মাণ করেছে। মেঘনা নদী থেকেই বালু উত্তোলন করে নতুন সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে ফেলে পাড় ভরাট করে জায়গা দখলে নিয়েছে এপিএসসিএল কর্তৃপক্ষ।

এতে পরিবেশগত বিপর্যয়ের পাশাপাশি নদীর গতিপথ পরিবর্তন, আশুগঞ্জ নৌবন্দর এলাকায় ব্যাপক নদীভাঙন, মেঘনা নদীতে জেগে ওঠা চর সোনারামপুর গ্রামটি নদীতে বিলীন, গ্রামটিতে বসবাসকারী প্রায় দুই হাজার মৎস্যজীবী পরিবার তাদের বাসস্থান, আশুগঞ্জ এলাকার একমাত্র শ্মশান এবং চরে অবস্থিত ২৩০ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের টাওয়ার নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এ অবস্থায় মেঘনা নদী ও নদীর সঙ্গে সংযুক্ত সোনারামপুর খাল রক্ষায় বেলা জনস্বার্থমূলক মামলাটি দায়ের করে।

শুনানি শেষে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর ও সোনারামপুর মৌজায় প্রবাহিত মেঘনা নদীর অংশবিশেষ ও নদীর সঙ্গে সংযুক্ত সোনারামপুর খাল বিবাদীদের (বিবাদী নং ১, ৫ ও ১৮) অবৈধ, অননুমোদিত ও নির্বিচার মাটি ভরাটের মাধ্যমে দখল কার্যক্রম থেকে বিরত রাখতে ও অবৈধ, অননুমোদিত ও নির্বিচার মাটি ভরাট থেকে মেঘনা নদীর অংশবিশেষ ও নদীর সঙ্গে সংযুক্ত সোনারামপুর খাল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রতিবেশ ব্যবস্থা রক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতাকে কেন সংবিধানবিরোধী, বেআইনি, আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

পাশাপাশি মেঘনা নদীর অংশবিশেষ ও নদীর সঙ্গে সংযুক্ত সোনারামপুর খাল ভরাটের কার্যক্রম ও ওই স্থানে এপিএসসিএল কর্তৃক যে কোন স্থাপনা নির্মাণের ওপর তিন মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আদালত। একইসঙ্গে বিবাদীদের (বিবাদী নং ৬, ৭ এবং ১০) আদালতের আদেশ প্রাপ্তির ষাট দিনের মধ্যে অবৈধভাবে মেঘনা নদীর অংশবিশেষ ও নদীর সাথে সংযুক্ত সোনারামপুর খাল ভরাটের ফলে যে ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ এবং আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিবাদীরা হলেন—বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সচিব, নৌ-পরিবহন সচিব, পানিসম্পদ সচিব, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ১৮ জন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০২১
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।