ঢাকা: সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এসবিএসিবি) সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেন বিশেষ জজ আদালতের অনুমতি নিয়ে বিদেশ গেছেন এবং ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ফিরে আসবেন। তবে আদালতের শর্ত মোতাবেক তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দুদকে জমা দেননি।
সোমবার (১৫ নভেম্বর) দুদকের পক্ষ থেকে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে এমন প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর আদালত শুনানি মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) করেন।
এ বিষয়ে দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে রোববার (১৪ নভেম্বর) হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও এসএম আমজাদ হোসেন কীভাবে দেশ ত্যাগ করেছেন তা জানতে চেয়েছিলেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
সোমবার আদালতে দুদক জানায়, বিশেষ জজ আদালত শর্ত সাপেক্ষে ১৫ সেপ্টেম্বর বা তার নিকটবর্তী যে কোনো তারিখে আমজাদ হোসেনকে বিদেশ গমণের অনুমতি দেন। তিনি ৩০ নভেম্বরের মধ্যে দেশে ফিরে এসে আদালতকে অবহিত করবেন। তিনি কোথায় চিকিৎসা করবেন ও মেয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোথায় অবস্থান করবেন তা আদালতকে অবহতি করতে হবে। সহজে যোগাযোগের জন্য যে বাসায় অবস্থান করবেন সে বাসার ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ই-মেইল আইডিসহ আদালত ও দুদক সচিবকে অবহিত করার পর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি দেবেন। কিন্তু শর্ত মোতাবেক এই রেকর্ড পত্রাদি দুদক সচিবের কাছে দাখিল করার বিষয়ে আদালতের নির্দেশ থাকলেও তা দাখিল করেননি এবং দুদক এ বিষয়ে অবগত নন।
খুরশীদ আলম খান আদালতে আরও বলেন, কাগজপত্র সাবমিট না করে উনি বিদেশে চলে গেছেন। এখানে দেখা যাচ্ছে ১৫ সেপ্টেম্বরের আদেশ লঙ্ঘন করে বিদেশ গেছেন।
এরপর আদালত বলেন, ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ফেরার সময় আছে। আমরা আপাতত স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) রাখলাম।
‘হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ, দেশ ছাড়লেন সাউথ বাংলা ব্যাংকের আমজাদ’ শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে গত ৭ নভেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেন দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন।
স্থল সীমান্ত দিয়ে বুধবার (১০ নভেম্বর) ভারত হয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন। তার সঙ্গে স্ত্রী সুফিয়া আমজাদ এবং মেয়ে তাজরির আমজাদও রয়েছেন। তার পারিবারিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আমজাদ হোসেনের দুর্নীতির কারণে সম্প্রতি তার সব ব্যাংক হিসাব জব্দ (অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ) করেন আদালত। এছাড়া সাউথ বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ থেকে তিনি সরে যেতে বাধ্য হন। বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে আমজাদ হোসেনের বাংলাদেশি মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের মোবাইল ফোন নম্বরে ফোন দিলে পরিচয় দেওয়ার পর তিনি ফোন সংযোগ কেটে দেন।
এদিকে দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধান যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন।
তিনি বলেন, আমজাদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না।
ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন আমজাদ হোসেন। আমেরিকা, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতে একাধিক বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি। পাচার করা বিপুল অংকের অর্থে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রাসাদ গড়েছেন। আমজাদ হোসেনের নামে দুদকে নতুন করে আরও ৮২৯ কোটি টাকা জালিয়াতির তথ্য মিলেছে। এর কিছু দিন আগে আরও ৪৩০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ ছিল। এর অনুসন্ধানও শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে তার জালিয়াতি করা অর্থের পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্যে ৯ কর্মচারীর নামে তার ২৫ কোটি টাকা ঋণ তুলে আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পর আমজাদ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৯৩৫টি ব্যাংক হিসাব জব্দের (ফ্রিজ) আদেশ দেন আদালত।
দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ারের আবেদনের পর ২১ অক্টোবর ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ হিসাবগুলো জব্দের আদেশ দেন। তবে বেশির ভাগ হিসাবেই বর্তমানে কোনো টাকা নেই। হিসাবগুলোর মধ্যে ৬৭৯টিতে ব্যালেন্স শূন্য। শূন্য ব্যালেন্সের হিসাবগুলোর প্রতিটিতেই কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। শতকোটি টাকার ওপর লেনদেন হয়েছে এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যাও অনেক। বাকি ২৫৬টি অ্যাকাউন্টে থাকা ৫৫ কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে।
ইমিগ্রেশনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আমজাদ হোসেন বছরজুড়েই কলকাতা, দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুর ঘন ঘন যাতায়াত করতেন। যা স্বাভাবিক যাতায়াত নয় বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২১
ইএস/এমএমজেড