ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

বেসিকের মামলার তদন্ত শেষ করতে দুদক ব্যর্থ: হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২২
বেসিকের মামলার তদন্ত শেষ করতে দুদক ব্যর্থ: হাইকোর্ট

ঢাকা: আলোচিত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর করা একটি মামলার তদন্ত কাজ ছয় বছরেও শেষ করতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

ওই মামলার আসামি বেসিক ব্যাংকের শান্তিনগর শাখার তৎকালীন ম্যানেজার মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর জামিনের রায়ে এমন মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।

গত বছরের ১৪ মার্চ ওই রায় দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। সম্প্রতি এই রায় প্রকাশিত হয়েছে।

বেসিক ব্যাংকের প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায়  অন্তত ৫৬টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে এটি একটি।

আদালতে আসামি পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও আইনজীবী মো. সগির হোসেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পল্টন থানার করা মামলায় আসামি ৬ জন। বেসিক ব্যাংকের শান্তিনগর শাখা থেকে বেআইনিভাবে ৪৮ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ আন হয় মামলায়। আসামি মোহাম্মদ আলী চৌধুরী শান্তিনগর শাখার প্রধান ছিলেন।

রায়ে আদালত বলেন, ‘এটা বাস্তবতা যে, এই মামলায় ২০১৫ সালে এজাহার হলেও অদ্যবধি অর্থাৎ প্রায় ছয় বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও কমিশন মামলার তদন্ত কার্য সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। কমিশনের হলফনামা হতে দেখা যায় যে, কমিশন ফলো দ্য মানি অর্থাৎ টাকার গতিপথ শনাক্ত করতে পারেনি বলে তদন্ত কার্য সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। ’

‘কমিশন মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানিলন্ডারিং (এপিজি) এর নির্দেশনা অনুসরণ করছে বলে দাবি করছে। হলফনামা দৃষ্টে আরও মনে হয় যে, আত্মসাৎকৃত টাকার গতিপথ শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত কমিশনের পক্ষে মামলার তদন্ত কার্য সমাপ্ত করা সম্ভব নয়। ’

রায়ে আদালত বলেন, ‘আদালত ক্ষোভ, হতাশা ও দুঃখের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছে যে, কমিশনের এ হেন বক্তব্য আদালতের কাছে বিভ্রান্তিকর মনে হয়েছে। ’

এ মামলায় ১ নম্বর আসামি ঋণ গ্রহীতা। ৩ জন বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা অর্থাৎ সরকারি কর্মচারী উল্লেখ করে আদালত বলেন, ‘এই মামলার তদন্তের মূল বিষয়বস্তু হওয়া উচিত সরকারি কর্মচারী অথবা ব্যাংকার হিসেবে আসামিগণ কর্তৃক অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ এবং অপরাধমূলক অসদাচরণ সংঘটিত হয়েছে কিনা। ’

এ বিষয়ে আদালতের সুচিন্তিতি অভিমত হলো—‘উপরোক্ত অপরাধ প্রমাণে আত্মসাৎকৃত অর্থের গতিপথ শনাক্ত করা আদৌ কোনো অপরিহার্য বা বাধ্যতামূলক শর্ত হতে পারে না। আর এ মামলাটি অর্থপাচারের অধীনে নয় যে, অর্থের গতিপথ নির্ধারণ অপরিহার্য বা বাধ্যতামূলক। ’

দণ্ডবিধির ৪০৫ অনুযায়ী অভিযুক্তরা তাদের নিকট জিম্মাকৃত কিংবা কর্তৃত্ব বা অধীনে থাকা সম্পত্তির/অর্থের ক্ষেত্রে বিশ্বাসভঙ্গ হয়েছে কিনা এটাই মুখ্য বিবেচ্য বিষয়।

আদালতে বলেন, ‘কমিশন ফলো দ্য মানি অনুসরণ করে তদন্তের যে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাতে আদালতের বলতে কোনো সংকোচ নেই যে, কমিশন বর্তমান বর্তমান মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে ভুল পথ অনুসরণ করেছে এবং করছে। ’

দুদকের দায়িত্ব সম্পর্কে আদালত বলেন, ‘কমিশনের দায়িত্ব দুর্নীতি চিহ্নিত করা এবং অপরাধীদের আইন ও বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। আত্মসাৎকৃত সম্পদ বা অর্থ উদ্ধারে কমিশনের মুখ্য কোনো কাজ নয়। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২২
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।