ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

টক শোর রাজা ল্যারি কিং

রবাব রসাঁ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১০

গত পঁচিশ বছরে তিনি নিয়েছেন ৫০ হাজারেরও বেশি লোকের সাক্ষাৎকার। কে নেই এই দীর্ঘ তালিকায়! রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনীতিবিদ, চলচ্চিত্র-তারকা, সঙ্গীতশিল্পী, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব, সমাজসেবক, ব্যবসায়ী, এমনকি দুর্গত জনসাধারণ, সবাই আছেন তার সাক্ষাৎকারের তালিকায়।



যিনি এসবের নায়ক, তার নাম ল্যারি কিং। খ্যাতি অর্জন করেছেন টেলিভিশন টক শো অনুষ্ঠান ‘ল্যারি কিং লাইভ’-এর মাধ্যমে। সিএনএনে প্রচারিত এই অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে অর্জন করেছেন টক শো অনুষ্ঠানের রাজার মর্যাদা। ১৯৮৫ সালের ৩ জুনে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানটি তিনি রাজকীয় ভঙ্গিমায় চালিয়ে গেছেন এ বছরের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। টানা ২৫টি বছর।

‘এটাকে ল্যারির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বলা যাবে না,’ মন্তব্য করেন কৌতুকাভিনেতা বিল মাহের। ‘আমেরিকান আইডলের’ উপস্থাপক রিয়ান সিক্রেস্টের সঙ্গে তিনি ১৬ ডিসেম্বর সিএনএন লস অ্যাঞ্জেলেস স্টুডিওতে যোগ দিয়েছিলেন ল্যারির অনুষ্ঠানটির শেষ পর্বে। মাহেরের বিশ্বাস, এর মাধ্যমে একটি প্রভাব বিস্তারকারী অনুষ্ঠানের ইতি ঘটেছে বটে, কিন্তু সেই প্রভাব বিস্তারকারী মানুষটির ইতি হয়নি।

ল্যারিরও বিশ্বাস এমন। তাই অবসর করছেন কিনা- এমন প্রশ্ন শুনে ভ্রƒ কুঁচকে উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি, ‘অবসর? এটা আবার কী?’ তিনি বলেন, ‘অবসরে যাচ্ছি না। জীবনে অবসর বলে কিছু নেই। ’

‘ল্যারি কিং লাইভ’ অনুষ্ঠানটির শেষ পর্বে ভিডিওবার্তা পাঠিয়েছিলেন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা এবং ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার। শেষ অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে ছিলেন আমেরকিার সাবেক রাষ্ট্রপতি বিল কিনটন।

লরেন্স হার্ভে বা ল্যারি কিংয়ের জন্ম নিউ ইয়র্কে। ১৯৩৩ সালের ১৯ নভেম্বর। বাবা ছিলেন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী। আর মা বেলারুশ থেকে আসা এক পোশাকশিল্প কর্মী। ল্যারি ফোরিডার স্থানীয় সাংবাদিক হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করেন। ১৯৫০-এর দশক থেকে কাজ করেন রেডিও ইন্টারভিউয়ার হিসেবে। ১৯৭০-এর দশকে তিনি রেডিও উপস্থাপক হিসেবে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন।

পরে, ১৯৮৫-তে সিএনএনে শুরু করেন ‘ল্যারি কিং লাইভ’ অনুষ্ঠান। এরপর হেঁটে যান সাফল্যের গালিচা বিছানো পথে। ‘আমার সাফল্যের গোপন রহস্য লুকিয়ে আছে আমার গুছিয়ে কথা বলার ভেতর। আমার আন্তরিকতা। আর সবার ওপরে রয়েছে আমার অনুসন্ধিৎসু মন। ’ নিজের অর্জন সম্পর্কে মূল্যায়ন ল্যারির।

ল্যারি সাক্ষাৎকারের দীর্ঘ তালিকায় খ্যাতিমানদের ভেতর রয়েছেন দালাই লামা, বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লু বুশ, বিল কিনটন, ভøাদিমির পুতিন, সাদ্দাম হোসেন, মাহমুদ আহমেদিনেজাদ, হামিদ কারজাই, মাইকেল মুর, জ্যানেট জ্যাকসন, অপরাহ উইফ্রে, শাকিরা ও অন্যান্য।

ল্যারির অনুষ্ঠানের শেষ পর্ব নিয়ে ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক ‘দ্য টেলিগ্রাফের’ এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়, বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সিএনএনের বিশ্বাসযোগ্যতা যখন নিচের দিকে, তখন ল্যারি কিং তার বাস্তবতা জ্ঞান ও বাস্তবসম্মত বিষয় উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে দর্শকদের ধরে রেখেছিলেন।

সাতাত্তর বছর বয়সী এই টেলিভিশন উপস্থাপক বিয়ে করেছেন আট বার। নারী ছিলেন সাতজন। আঠারো বছর বয়সেই বিয়ে করেন ফ্রেডা মিলার নামের এক নজরকাড়া তরুণীকে। সর্বশেষ বিয়েটি করেন ১৯৯৭ সালে। কনে ছিলেন শন সাউথউইক।

এই বিয়েটিও ভাঙ্গার আওয়াজ উঠেছিল গত ১৪ এপ্রিল। অবশেষে দুইজনই পিছু হটেন। ঘোষণা দেন, ‘সন্তান-সন্ততি নিয়ে একসঙ্গে থাকতেই ভালোবাসেন তারা’। এই দম্পতির রয়েছে দুই সন্তান। রয়েছে একটি পালকপুত্রও।

একজন রাগী মানুষ হিসেবে পরিচিতি আছে ল্যারির। তবে কম রসিক নন তিনি। বিয়ে সম্পর্কে বলেন, ‘বিয়ে এবং বিয়েবিচ্ছেদ আমাকে একই অবস্থায় নিপতিত করে। ’ আর নারীদের সম্পর্কে তার মন্তব্য, ‘আমার চোখে স্টিফেন হকিং জগতের সবচেয়ে স্মার্ট মানুষ। একদিন হকিংকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কোন বিষয়টি তিনি বুঝতে পারেন না। তিনি উত্তরে বলেছিলেন ‘নারী’। এখন বুঝুন, আমি তো কোন ছার। ’

চিরতরুণ এই মানুষটি আজও অবচেতন মনে নয় বছরের বালক হয়ে হেঁটে বেড়ান। তাই শেষ অনুষ্ঠানে তিনি অশ্রু সামলে নেন। সবাইকে ধন্যবাদ জানান। বিদায়ের পরিবর্তে বলেন, ‘আবার দেখা হবে। ’

ল্যারির অনেক প্রাপ্তির ভেতর যোগ হলো আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের নতুন ঘোষণা। এখন থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর পালন করা হবে ‘ল্যারি কিং ডে’।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৯০০, ডিসেম্বর ২০, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।