ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম জাদুঘর

তোফাজ্জল লিটন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৬ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১০

‘শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা’ বাংলাদেশের প্রথম স্বয়ংসম্পূর্ণ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক জাদুঘরের নাম । রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত এ জাদুঘর  ১৯৭৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীদের অংশগ্রহণকে উপস্থাপন এবং আত্মত্যাগকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে শুরু হয় এ সংগ্রহশালার পথচলা। পরে এর কার্যক্রম সম্প্রসারিত করা হয়।

সংগ্রহশালার মূল ভবনটি তিনটি কক্ষ নিয়ে। এগুলোতে ক্রমান্বয়ে সাজানো হয়েছে সারা দেশের ’৫২ থেকে ’৭১-এর বিভিন্ন সংগ্রহ ও দলিল-দস্তাবেজ। এখানে আছে ভাষা আন্দেলনের আমতলার সভা, প্রথম কালো পতাকা উত্তোলন, ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার প্রস্তুতির ছবিসহ এ সংগ্রামের অন্যান্য ছবি।

সারা দেশে ’৬৯-এর গণআন্দোলনের আলোকচিত্রর মধ্যে আছে গণআন্দোলনে মাওলানা ভাসানীর অংশগ্রহণ, গণবিক্ষোভ আর মিছিল এবং পুলিশের নানা নির্যাতনের চিত্র। আছে ’৬৯-এ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মিছিল এবং ছাত্রদের বাঁচাতে মিছিলে গুলিবিদ্ধ হওয়া তৎকালীন প্রক্টর ড.শামসুজ্জোহার বিভিন্ন ছবি। উল্লেখ্য, তাঁর স্মরণেই ১৮ ফেব্রুয়ারিকে করা হয়েছে জাতীয় শিক্ষক দিবস।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ থেকে শুরু করে এখানে আছে মুক্তিযুদ্ধকালীন কিছু দুর্লভ ছবি। এগুলোতে ফুটে উঠেছে নির্যাতন, প্রতিরোধ সংগ্রাম আর বিজয়ের কথা। উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে আছে হিন্দু না মুসলমান তা নগ্ন করে পাকিস্তানি সৈন্যদের দেখা, আল বদর বাহিনীর শিকার দুজন মুক্তিযোদ্ধা, রণাঙ্গনে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা, শত্রুর কবলে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিসেনার কবলে পাকিস্তানি সেনা ইত্যাদি। আছে বীরশ্রেষ্ঠ ও সমরনায়কদের ছবিসহ বর্ণনা এবং জেড ফোর্সের বৃত্তান্ত।

এসব ছাড়া এখানে সংরক্ষিত আছে শহীদদের দৈনন্দিন ব্যবহৃত জিনিসপত্র। অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশীদুল হাসান ও সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের ডায়েরি এবং পা-ুলিপি। বধ্যভূমি থেকে উদ্ধারকৃত মুক্তিযুদ্ধে নিহত মানুষের হাড়গোড় ও খুলি।
শিল্পকর্মের মধ্যে আছে কামরুল হাসানের পোস্টার, আমিনুল ইসলামের চিত্রকর্ম শ্বেতপত্র ’৭১, রফিকুন্নবীর একাত্তরে ফেরা। আছে মোস্তফা মনোয়ার, কাইয়ুম চৌধুরীসহ দশজন বরেণ্য শিল্পীর প্রায় ত্রিশটি চিত্রকর্ম।

আছে দুটি ভাস্কর্য। আবদুর রাজ্জাকের একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রণব দাশের আর্তনাদ। ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে চলচ্চিত্র’ নামে একটি বিভাগ আছে, যেখানে সংরক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রের পোস্টার ও স্টিল ছবি।

মুক্তিযুদ্ধের বই নিয়ে এ জাদুঘরের একটি লাইব্রেরিও আছে। এখানে আছে প্রায় দুই হাজার বই।

তিনটি কক্ষ ঘুরে দেখতে সময় লাগে ২০-২৫ মিনিট। এসব দৃশ্য দেখে দর্শনার্থীদের মধ্যে কিছুটা হলেও দেশপ্রেম জাগ্রত হয়, যার প্রমাণ পাওয়া যায় মন্তব্য খাতায়। সেখানে অনেকেই লিখেছেন ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই’। এ জাদুঘরে প্রতিদিন গড়ে শ খানেক  দর্শনার্থী আসেন।

এ জাদুঘরের কিওরেটর ড. সফিকুল ইসলাম জানালেন, ‘আমাদের বর্তমানে কোনো সংগ্রাহক নেই! তাই পরিকল্পনা থাকলেও জাদুঘরকে সম্প্রসারিত করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে খুব তাড়াতাড়ি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ’

এ সংগ্রহশালার তত্ত্বাবধানে আছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র বধ্যভূমি, যা বাংলাদেশ সরকারের নির্বাচিত ছয়টি বড় বধ্যভূমির একটি।   বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং একমাত্র মুক্তমঞ্চটিও এর তত্ত্বাবধানে ।

শুক্রবার বাদে প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে। এ ছাড়া একুশে ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ এবং ১৬ ডিসেম্বরেও খোলা থাকে এ জাদুঘর। মূল প্রবেশকক্ষে খাতায় নাম-ঠিকানা লেখা ছাড়া কোনো প্রবেশমূল্য লাগে না।

বাংলাদেশের স্থানীয় সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১০
এসকেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।