ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

শেষ বেলায় মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই : ববিতা

বিপুল হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৮ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১১

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন নায়িকা বলতে ববিতাকেই বোঝায়। সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনী সংকেত’ খ্যাত ববিতা সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্টের সেচ্ছাসেবী সংগঠন ডিসট্রেস্ড চিলড্রেন অ্যান্ড ইনফান্টস ইন্টান্যাশানল (ডিসিআইআই) -এর গুডউইল অ্যাম্বাসেডর নির্বাচিত হয়েছেন।

এর আগে হলিউডের সাড়া জাগানো অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন এই দায়িত্ব পালন করেছিলেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, এই প্রথম এশিয়ার কোনো তারকা বিশাল এই গৌরব অর্জন করলেন। এ বিষয়ে ববিতা বাংলানিউজকে দিয়েছেন বিশেষ সাক্ষাৎকার।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সত্তর ও আশির দশকের অন্যতম শীর্ষ নায়িকা ববিতা। সফলতা আর সম্মান তাকে যেন বার বার ছুঁয়ে যায়। সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনী সংকেত’ ছবিতে অনঙ্গ বউ চরিত্রে অভিনয় কওে তিনি পেয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি। ডার্লিং অব বার্লিন, তাসখন্দ, কান, বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে জুরিবোর্ডের সদস্য প্রভৃতি অসাধারণ অর্জনের পর আবারও তিনি পেয়েছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিরল সম্মান। ইউনিসেফের স্বীকৃত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন ডিসট্রেস চিলড্রেন অ্যান্ড ইনফ্যান্টস ইন্টারন্যাশনাল (ডিসিআইআই)-এর গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন ববিতা। বাংলাদেশের এই ঝলমলে তারকার সঙ্গে সম্প্রতি তার গুলশানের বাসভবনে বাংলানিউজ কথা বলে। সেখান থেকে নির্বাচিত কিছু অংশ পাঠকের জন্য।

ডিসট্রেস চিলড্রেন অ্যান্ড ইনফ্যান্টস ইন্টারন্যাশানল (ডিসিআইআই) সংগঠনটি সম্পর্কে কিছু বলুন ?

ববিতা : সংগঠনটির কাজ হলো অসহায় ও দরিদ্র শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যতের সুন্দর জীবন নিশ্চিত করা। ইউনিসেফের সহায়তায় ২০০৩ সালে আমেরিকায় স্বেচ্ছাসেবী অলাভজনক এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে। আমেরিকাসহ উন্নত দেশের শিশুরা তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি উপার্জিত অর্থের একটি অংশ দান করছে এ সংগঠনটিকে। সংগঠনটি এই অর্থ বিশ্ব জুড়ে গরিব শিশুদের উন্নয়নে ব্যয় করছে। উন্নত দেশের একটি শিশুই গরিব অভাবী রাষ্ট্রের একটি শিশুর পড়াশোনা, চিকিৎসা এবং ভবিষ্যতের দায়িত্ব নিবে, এ বিষয়ে আন্দোলন গড়ে তোলাই হলো ডিসিআইআই-এর মূল লক্ষ্য।

আপনি এই সংগঠনটির সঙ্গে জড়িত হলেন কীভাবে?

ববিতা : কয়েক সপ্তাহ আগে আমার কাছে ডিসিআইআই-এর শুভেচ্ছা দূত হওয়ার আমন্ত্রণ আসে। সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট ব্রায়েন এম ডিব্রফ এবং এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট এ এহসান হক স্বাক্ষরিত এক পত্রে আমার কাছে এই প্রস্তাব আসে। আমাকে জানানো হয় হলিউডের খ্যাতিমান নায়িকা অড্রে হেপবার্ন একসময় সংগঠনটির গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমার প্রিয় ছবি ‘রোমান হলিডে’-এর নায়িকা অড্রে হেপবার্নের সঙ্গে আমার কথা বলার সূযোগ হয়েছিল। ১৯৮৯ সাালে তিনি ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন। আমি তার কাছ থেকে জানতে পেরেছিলাম, তিনি অভিনয় করে যতো আনন্দ পান, তার চেয়ে অনেক বেশি আনন্দ পান মানব সেবা করে। তখন থেকেই আমার মনেও এ ধরনের ইচ্ছে বাসা বাঁধে। এবার সেই সুযোগ পাওয়া সানন্দে আমার সম্মতির কথা জানিয়ে দেই। গত ৩০ মে ডিসিআইআই-এর পরিচালক নিনা হক আমার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকায় আসেন এবং  বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে আপনার কি কি দায়িত্ব পালন করতে হবে?

ববিতা : সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখে আমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে আমার নাম ঘোষণা করা হবে। এই অনুষ্ঠানে তৃতীয় বিশ্বের শিশুদের নিয়ে আমাকে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে হবে। ডিসিআইআই-এর গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে আমাকে বছরের বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা ও ইউরোপে যেতে হবে। কথা বলতে হবে সেখানকার বাচ্চাদের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের শিশুদের জীবনযাত্রার পার্থক্য তুলে ধরতে হবে। আমি সংগঠনের গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে সারাবিশ্বের শিশুদের কাছে বাংলাদেশের শিশুদের সম্পর্কে ধারণা তুলে ধরব। সুবিধাবঞ্চিত প্রতিটি শিশুর মুখে হাসি ফোঁটানোর চেষ্টা করব।   এ সুযোগের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সমাজসেবার পথ খুঁজে পেলাম। আমি সারাজীবন মানুষের বিনোদনের জন্য কাজ করে গেছি। জীবনের শেষ বেলায়ও মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই।

অভিনয় নিয়ে বর্তমান ব্যস্ততা সম্পর্কে বলুন?

ববিতা : এ মুহূর্তে প্রায় ১০টি ছবিতে কাজ করছি। অসুস্থতার কারণে এপ্রিল মাসে অভিনয়ে কিছুটা অনিয়মিত হয়ে পড়েছিলাম। সিঙ্গাপুর গিয়েছিলাম চিকিৎসার জন্য। এখন অবশ্য পুরোপুরি সুস্থই। তকে আগের মতো এখন আর করবো না বলে ঠিক করেছি। পাঁচ দশক ধরে অভিনয় করছি। আর কতো? তাছাড়া ডিসিআইআই কাজে আমাকে ব্যস্ত থাকতে হবে। মানুষের কল্যাণে কাজ করার যে সূযোগ আমার কাছে এসেছে সেটা কাজে লাগাতে চাই।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের মান এখন কেমন?

ববিতা : ভালো চলচ্চিত্র যে নির্মাণ হচ্ছে না তা নয়। তবে এর হার খুবই কম। এখন গল্প, চিত্রনাট্য, নির্দেশনা সব জায়গায় কেমন যেন একধরণের দায়সারা ভাব। কাজের মধ্যে যতœ নেই, মায়া নেই।
আগের মতো শিক্ষিত ও দক্ষরা এখন আর এ শিল্পে আসছেন না। জহির রায়হান, এহতেশাম, খান আতা, কাজী জহির, সুভাষ দত্ত কিংবা আমজাদ হোসেনের মতো নির্মাতার এখন বড়ই অভাব। এ অভাব কখনো পূরণ হবে কিনা জানি না। অবশ্য টিভিমিডিয়া থেকে ইদানিং কয়েকজন মেধাবী নির্মাতা চলচ্চিত্রে এসেছেন। তাদের কাজে সম্ভাবনা দেখতে পায়।

আপনার প্রযোজনা সংস্থা ববিতা মুভিজ থেকে ছবি বানানো হচ্ছে না কেন ?

ববিতা : প্রতিষ্ঠানটি এখন পুরোপুরি নিষ্ক্রীয়। চলচ্চিত্র নগদ পয়সার বিষয়। আর এখন বিশ্বস্ত মানুষ খুঁজে পাওয়াও অনেক কঠিন। আমি একা মানুষ। তাছাড়া আমাকে প্রায়ই দেশের বাইরে কাটাতে হয়। ব্যবসা দেখা শোনার লোক কই! ছবির বাজারও এখন ভালো না। ববিতা মুভিজের প্রযোজনায় শেষ ছবি ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’-তে আমাকে মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তাই আপাতত আর প্রযোজনার কথা ভাবছি না।

আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা ?

ববিতা : মানুষের সেবা করা ছাড়া ভবিষ্যতের আর বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই।

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন নায়িকা বলতে ববিতাকেই বোঝায়। সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনী সংকেত’ খ্যাত ববিতা সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্টের সেচ্ছাসেবী সংগঠন ডিসট্রেস্ড চিলড্রেন অ্যান্ড ইনফান্টস ইন্টান্যাশানল (ডিসিআইআই) -এর গুডউইল অ্যাম্বাসেডর নির্বাচিত হয়েছেন।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।