আমার চাচা আলম খান একজন বিশিষ্ট নামকরা সুরকার তা জেনেছিলাম সেই ছোট বেলাতেই। শৈশবে পাশাপাশি বাসায় অবস্থান করে শুনতে পেতাম প্রায়ই নতুন নতুন গানের সুরধ্বনি যা আমার শ্রদ্ধেয় চাচার গভীর মনোনিবেশের ফসল।
চাচার বাসায় গেলে দেখতে পেতাম নানান বাদ্যযন্ত্র সাজানো রয়েছে চাচার বৈঠকখানায় । দেখতে পেতাম বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের সমাগম। চাচা শিল্পীদের সুর-লয়-তাল বুঝিয়ে দিতেন। কখনওবা হারমোনিয়ামে নিজের কন্ঠে তুলে ধরতেন গান। চাচার অবদানে বাংলা সিনেমার জগতে রয়েছে অসাধারণ কিছু জনপ্রিয় গান যা সত্যি সকলের মন জয় করার মত।
আমার দাদী জোবেদা খানম (যিনি ছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার দরবারের শিল্পীর বংশধর) প্রায়ই মেজ চাচার বাসায় বেড়াতে যেতেন। আমিও মাঝে মাঝে দাদীর সাথে মেজ চাচার বাসায় যেতাম। চুপচাপ বসে বসে তাদের গল্প গুজব শুনতাম। আমার দাদীও ভালো গান করতেন। আমার মেজ চাচীর হাতের রান্না ভীষণ প্রশংসা করার মত। মাঝে মাঝে চাচী রান্না করে আমাদের জন্য বাসাতেও খাবার পাঠিয়ে দিতেন। চাচাচাচী দেশের বাইরে গেলে আমাদের জন্যেও নানান রকমের উপহার সামগ্রী নিয়ে আসতেন। ঈদের দিন চাচাকে সালাম করলে চাচা সবাইকে সালামি দিতেন। তখন পরিবারের মাঝে আনন্দ-হাসি খেলে যেত। শুনেছি আমার বাবা যখন প্রথম অবস্থায় গানের ভুবনে পদার্পণ করেন তখন আমার মেজ চাচা এবং বড় ফুপির অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা ছিল সর্বাধিক।
আমার বাবার প্রথম গানের রেকর্ডিং হয়েছিল আমার মেজ চাচা আলম খানের তত্ত্বাবধানে। আজ অনেকেই হয়তো জানেন না যে বাংলার পপ গানের জনক আজম খান এবং এই পপ স্টার সংগীতশিল্পী আজম খানের `জনক` হচ্ছেন আমার শ্রদ্ধেয় চাচা আলম খান। আজ আমার চাচা অসুস্থ অবস্থায় আছেন। আফসোস হয় এটা ভেবে যে আমার সৌভাগ্য হয়নি চাচার সুর করা একটি গান করার। জীবনে যদি চাচার সুর করা একটি গান করারও সৌভাগ্য হত তো নিজেকে আমি ধন্য মনে করতাম। চাচার জন্য দোয়া করি তিনি যেন সুস্থ্ হয়ে ওঠেন এবং যেন সর্বদা সসম্মানে ভাল থাকেন।
(ইমা খান প্রয়াত পপগুরু আজম খানের মেয়ে)
বাংলাদেশ সময় ১১৩০, আগস্ট ০৬, ২০১১