বন্ধুত্ব, এ এক মানবিক সম্পর্ক। যার মধ্যে থাকে আস্থা, নির্ভরতা আর সহমর্মিতা।
আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গনের শিল্পীদের অনেকের মধ্যেই রয়েছে বন্ধুত্বের সম্পর্ক। সব বন্ধুত্ব অবশ্য দীর্ঘদিন টিকে থাকে না। সময়ে ব্যবধানে অনেক সময় ম্লান হয়ে যায় বন্ধুত্বের সম্পর্ক। অল্প কিছু বন্ধুত্ব-ই কেবল টিকে থাকে বছরের পর বছর। নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গে কণ্ঠশিল্পী খুরশীদ আলমের রয়েছে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। আলী যাকের, আসাদুজ্জামান নূর আর আবুল হায়াতও একে অন্যের ভালো বন্ধু। আফজাল হোসেন, হুমায়ুন ফরীদি, ইমদাদুল হক মিলন ও ফরিদুর রেজা সাগরের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। শোবিজে কিছু মানিক জোড় বন্ধু জুটি আছে, তাদের কথা আলাদাভাবে শোনা যাক।
নাট্যব্যক্তিত্ব আলী যাকের ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর পরস্পরের খুব ভালো বন্ধু। যদিও আলী যাকের বয়সে আসাদুজ্জামান নূরের চেয়ে দু বছরের বড়। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে এটা কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ১৯৭২ সালে আসাদুজ্জামান নূর ‘চিত্রালী’ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করার সময় ইন্টারভিউ নিতে যান আলী যাকেরর। সেই সময়ের তরুণ সাংবাদিক নূরকে ভালো লেগে যায় আলী যাকেরের। তিনি তরুণ সাংবাদিককে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যোগ দিতে বলেন। এভাবেই তাদের বন্ধুত্বের শুরু। তারা একসঙ্গে মঞ্চ ও টিভিনাটকে কাজ করছেন, তিন যুগ ধরে পরিশ্রম করে গড়ে তুলেছেন আজকের বিখ্যাত বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক। এখন তাদের কর্মক্ষেত্রের পরিধি আরো বেড়েছে। এখন আর দীর্ঘ সময় পাশাপাশি থাকা সম্ভব না হলেও যোগাযোগ হয় প্রতিদিন ফোনে। যে কোনো বিষয়ে তারা একে অন্যের পরামর্শ নেন। এই বন্ধুত্ব গড়িয়েছে দুই পরিবারের সদস্যদের মাঝেও।

অভিনেতা-নির্মাতা আফজাল হোসেন ও অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি দীর্ঘদিনের বন্ধু। যদিও তাদের কথা-বার্তা আর আচার-ব্যবহার একেবারেই আলাদা। হুমায়ুন ফরীদি কথা বলেন দ্রুতভঙ্গিতে, বেফাঁস কথাও মুখে আটকায় না। আফজাল হোসেন কথা বলেন ধীরস্থির ভঙ্গিমায়, বলেন মেপে মেপে। তাদের একজন বহির্মুখী আর অন্যজন অন্তর্মুখী প্রকৃতির। দুই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের এই দুই মানুষের মধ্যে দীর্ঘ ৩৩ বছরের গাঢ় বন্ধুত্ব। একসঙ্গে তারা ঢাকা থিয়েটার করেছেন একসময়। আফজাল হোসেনই হুমায়ুন ফরীদিকে টিভি নাটকে অভিনয়ের সুযোগ করে দিয়েছেন। হুমায়ুন ফরীদি আফজাল হোসেনকে দিয়েছেন মানসিক সঙ্গ ও অনুপ্রেরণা। জীবন-বাস্তবতায় দুই বন্ধুর মধ্যে এখন দেখা-সাক্ষাৎ হয় খুব কম। এমনকি ফোনেও মাসে দু-একবার কথা হয়। তবু তারা দুজনেই মনে করেন, এখনো তাদের বন্ধুত্ব আগের মতোই অটুট । একে অন্যের প্রয়োজনে তারা ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত সবসময়। সম্প্রতি হুমায়ুন ফরীদির ষাট বছর পদার্পন অনুষ্ঠান ‘বালাই ষাট’-এ আয়োজনে সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন আফজাল হোসেন।

অভিনেত্রী-নির্মাতা আফসানা মিমি আর নাট্যকার-নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী একে-অন্যের ভালো বন্ধু। তাদের বন্ধুত্বের সূচনা সেই দুরন্ত কৈশোরে। একই বিল্ডিংয়ের ওপরের আর নিচের তলায় থেকেছেন তারা দীর্ঘদিন। কেউই তখনও তারকা হয়ে ওঠেননি। শোবিজে আসার পরও তাদের এই বন্ধুত্বে ছেদ পড়েনি। পাল্টে যাওয়া বাসা বা নিজ নিজ কাজের ব্যস্ততা দুজনকে দুদিকে ঠেলে দিলেও বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আজও তারা টিকিয়ে রেখেছেন। মাঝেমধ্যে কথা চলে মুঠোফোনে আর মাসে-তিন মাসে কখনো কখনো দেখা হয়। আফসানা মিমি আর চয়নিকা চৌধুরী দেখা হলে আগের মতোই একে-অন্যেকে জড়িয়ে ধরেন। কথাবার্তায় ওঠে আসে আনন্দময় সেই দিনগুলোর স্মৃতি।

বাংলাদেশ সময় ১৭১০, আগস্ট ২৬, ২০১১