ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

অপ্রতিদ্বন্দ্বী নোবেল

অনন্যা আশরাফ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১১

‘একজন রাজ্জাক বা সালমান শাহ যেমন পাল্টে দিয়েছিলেন ঢালিউডের বানিজ্যিক চালচিত্র, মডেল নোবেল যদি চলচ্চিত্রে আসতেন তিনি হতে পারতেন ঢালিউডের বরপুত্র। একজন হিরোর যা যা থাকা দরকার তার সবই আছে নোবেলের।

’ নাহ, এটি আমাদের মন্তব্য নয়। বানিজ্যিক চলচ্চিত্রের একজন নামকরা নির্মাতা নোবেলকে চলচ্চিত্রে আনার অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর খানিকটা আপসোস নিয়েই বলেছিলেন এসব কথা। আসুন শুনি সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে উঠা নোবেলের গল্প।

দীর্ঘ দুই দশক ধরে শোবিজে আছেন মডেল নোবেল। মডেলিংয়ে আজও তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। আজকের প্রতিষ্ঠিত অনেক মডেলের কাছেই আইডল নোবেল। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নোবেল অধ্যবসায়, নিষ্ঠা আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে পথ চলছেন । এ কারণেই ব্যক্তিগত জীবন, চাকরি জীবন কিংবা তারকা জীবন সবত্রই  তিনি পেয়েছেন সাফল্য।

চট্টগ্রামের উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়ে উঠা আদিল হোসেন নোবেল ঢাকায় আসেন ১৯৮৯ সালের দিকে। স্কুল আর কলেজের পাট চুকিয়ে তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যুবক। এক কাজিনের পরামর্শে র‌্যাম্প মডেল হিসেবে শোবিজে অভিষেক হয়েছিল তার। ফ্যাশন শোতেই তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সুপ্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞাপন নির্মাতা ও অভিনেতা আফজাল হোসেনের। তার মাধ্যমেই মডেলিংয়ে নোবেলের হাতে খড়ি। nobel

মডেলিংয়ে অভিষেক সম্পর্কে বাংলানিউজকে নোবেল বলেন, আফজাল হোসেন নির্মিত স্প্রাইটের একটি বিজ্ঞাপনে আমি প্রথম কাজ করি। টেকনিক্যাল কারণে ওই বিজ্ঞাপনটি প্রচার হয়নি । এরপর আফজাল হোসেনের নির্দেশনায় কাজ করি আজাদ বলপেনের বিজ্ঞাপনে। এটাই আমার প্রচার হওয়া প্রথম কাজ। ‘লোনলি ডে লোনলি নাইট’ শিরোনামের সেই বিজ্ঞাপনটি এতোই জনপ্রিয়তা পায় যে, এক বিজ্ঞাপনেই আমি সুপরিচিতি হয়ে যাই। এই একটি বিজ্ঞাপনই আমার নামের আগে যোগ করে দেয় মডেল শব্দটি। মডেলিংটাকে এনজয় করি বলেই এখন পর্যন্ত লেগে আছি।

দেশের মডেলিং সেক্টরে দুই দশক ধরে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন নোবেল। এখন পর্যন্ত তিনিই দেশের সবচেয়ে দামি এবং নামী মডেল। এই সাফল্যের পেছনের রহস্যের কথা জানতে চাইলে নোবেল বললেন, আমি সবসময় নিয়ম-নিষ্ঠা আর পরিমিতির মধ্যে থাকার চেষ্টা করেছি। ইচ্ছে করলে চাকরি ছেড়ে দিয়ে একের পর এক বিজ্ঞাপন কাজ করে যেতে পারতাম। এতে আর্থিকভাবেও হয়তো লাভবান হতাম। কিন্তু কখনোই আমি এমনটি ভাবি নি। যে কোনো কাজ করার আগে তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা করেছি।

প্রতিদিন আমাকে শুটিং করতে হবে, কাজ করতে হবে, এমনটি আমি মাথায় আনিনি। আমি সব সময় চেয়েছি, প্রতিটি কাজে বৈচিত্র্য আনতে এবং যেটা করব সেটা ভালোভাবে বুঝে মনোযোগ দিয়ে করব।

এ প্রসঙ্গে নিজের কাজের একটি উদাহরণ তুলে ধরে নোবেল বলেন, একটি বিজ্ঞাপনে আমাকে বক্সারের চরিত্রে রূপদান করতে হবে জানলাম। আমি নিজের উদ্যোগেই আমার পরিচিত এক বক্সারের কাছে গিয়ে কয়েক সপ্তাহ ট্রেনিং নিয়ে বক্সিংয়ের কলাকৌশলগুলো রপ্ত করি। তারপর ক্যামেরার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। প্রায় প্রতিটি কাজেই আমি আগে নিজেকে এভাবে প্রস্তুত করি।

নোবেল যখন মডেলিংয়ে আসেন তখন তিনি টগবগে তরুণ। এর ২০ বছর পরে পৌছে তার মধ্যে হয়তো বয়সের একটা ভারিক্কি এসেছে, কিন্ত মিইয়ে যায়নি তারুণ্য। আশ্চর্যভাবে তিনি ধরে রেখেছেন ফিটনেস। এ বিষয়ে নোবেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম মেনে পরিকল্পনা অনুযায়ী জীবনযাপন করি। কখনোই আমি নিজস্ব সেই খোলস ভেঙে বেরিয়ে আসি নি। এক দিন গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করলাম, আর পরের দিন দুপর পর্যন্ত ঘুমালাম। একদিন খেলাম না তো পরের দিন একগাদা খাবার খেয়ে ঘুমালাম, এটা আমার অভ্যাস নয়। আমি প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম, সুইমিং, জিম, সময়মত খাওয়া, রেস্ট নেয়া এবং অফিস করা সবই ছক বেঁধে করি। আজ পর্যন্ত আমি কারো দেওয়া ডেট অনুযায়ী কাজ করিনি। আমার ছুটির সঙ্গে মিলিয়ে শুটিং করেছি। চাকরি ঠিক রাখার পাশাপাশি শোবিজের ক্যারিয়ারটাও তাই ঠিক রাখা আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে। Nobel0

বিজ্ঞাপনের বাইরেও মাঝেমধ্যে কিছু নাটকেও অভিনয় করে থাকেন। নোবেল অভিনীত প্রথম নাটক ‘প্রাচীর পেরিয়ে’। ১৯৯৫ সালে প্রচারিত এ নাটকটি ছিল প্যাকেল প্রোগ্রামের আওতায় দেশের প্রথম টিভি নাটক। এরপর মাঝে মধ্যেই তিনি নাটক করেছেন, তবে তা বিশেষ বিশেষ দিবসে। এখনও তার নাটকে কাজ করার ইচ্ছে আছে, তবে ঈদ বা বিশেষ দিবসকে ঘিরে। গত ১৫ বছরে নোবেল অভিনীত নাটকের সংখ্যা বড়জোর বিশ।

টিভি নাটকের অভিনয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মডেল হয়েছি আমি ঘটনাচক্রে। কিন্তু এটাকে জীবনের অবলম্বন করিনি। কাজ পছন্দ হলেই শুধু কাজ করেছি। ইচ্ছে ছিল না অভিনয়ের। কিন্তু শুরুতে এমন কিছু জায়গা থেকে অনুরোধ আসলো যে, নাটকে অভিনয় করতেই হলো। তারপর একবার যখন করলাম, তখন হাতে সময় থাকলে কাজটা ভালো হলে না করি না। তবে বিশেষ বিশেষ নাটকেই আমি শুধু অভিনয় করি। গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেই নি, আর দেবোও না।


বিজ্ঞাপন আর নাটকের বাইরে নোবেল সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব। কিন্তু চলচ্চিত্র তাকে আকর্ষণ করে নি বলেই কাজ করা হয়ে উঠে নি। এ প্রসঙ্গে নোবেল বললেন, চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ব্যাপারে বহু প্রস্তাব আর অনেক চাপের মধ্যে আমাকে পড়তে হয়েছে। কিন্তু আমি কখনোই সিনেমার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করিনি। আর যেসব প্রস্তাব নিয়ে আমি দু-একবার ভেবেছি, সেগুলোর প্রস্তুতি দেখে আমি হতাশ হয়েছি বলেই সিনেমা থেকে দূরে থেকেছি।

এই সময়ের বিজ্ঞাপন সম্পর্কে নোবেলের মত জানতে চাইলে তিনি বলেন, , এখন অনেক ভালো ভালো বিজ্ঞাপন হচ্ছে। আগে হতো বিনোদন বিজ্ঞাপন। অর্থাৎ নাচ গান দিয়ে। আর এখন হচ্ছে থিমভিত্তিক। এ ধরণের বিজ্ঞাপনগুলো দর্শকরাও বেশ ভালোই গ্রহণ করতে শুরু করেছেন। কিন্তু কাজগুলো সেভাবে আলোচনায় না আসার কারণ হলো, এখন এতো বেশি বিজ্ঞাপন প্রচার হচ্ছে যে দর্শকদের পক্ষে ভাল-মন্দ বাছাই করাটা হয়ে উঠেছে কঠিন।

বর্তমানে নোবেল ওয়ারিদের কর্পোরেট অ্যান্ড এসএমই সেলস ডিপার্টমেন্টের হেড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বরে এমজিএইচ গ্রুপের শিপিং ডিভিশনে। পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান কোটস বাংলাদেশ লিমিটেডে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে প্রায় ১২ বছর কর্মরত ছিলেন। একাডেমিক পর্যায়ে নোবেল ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন। এছাড়াও তিনি সিঙ্গাপুর ইন্সটিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট, ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট এবং জেভিয়ার লেবার রিলেশনস ইন্সটিটিউট থেকে ‘কি অ্যাকাউন্টস ম্যানেজমেন্ট’ এর উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।


এবারের ঈদে নোবেলকে দর্শক দেখতে পাবেন উপস্থাপকের ভূমিকায়। গান আর আড্ডার এই অনুষ্ঠানের নাম ‘অবাক তারার ফুল’। এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন ফাহমিদা নবী, বাপ্পা মজুমদার, এলিটা, মাহাদী ও আরফিন রুমী। আড্ডার পাশাপাশি এবার ঈদে প্রকাশিত অ্যালবাম থেকে নিজেদের নতুন গান গেয়েছেন তারা। অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে নোবেল বললেন, ‘গানের প্রতি আমার এক ধরনের আগ্রহ রয়েছে। এ ধরনের অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে সবার খুব ভালো জমে। তা ছাড়া অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনার ব্যাপারে প্রিন্স মাহমুদেরও একটা অনুরোধ ছিল। শুটিংয়ের দিন অনেক রাত পর্যন্ত আমরা আড্ডা দিয়েছি। ’ বাংলাভিশনে ঈদের দিন দেখানো হবে অনুষ্ঠানটি।

এছাড়াও এই ঈদে নোবেল অভিনীত ‘আমাদের ছোট নদী’ নাটকটি প্রচার হবে চ্যানেল আইতে। তাহের শিপনের পরিচালনায় এ নাটকে নোবেলের বিপরীতে অভিনয় করেছেন ভিট চ্যানেল আই টপ মডেল শিরোপা বিজয়ী হাসিন রওশন আরা।   উল্লেখ্য. এই প্রতিযোগিতায় নোবেল ছিলেন অন্যতম বিচারক।

বাংলাদেশ সময় ০০২৫, আগস্ট ২৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।