ইমপ্রেস টেলিফিল্মের বিনোদন পাক্ষিক আনন্দ আলোর উদ্যোগে ‘কেমন হলো ঈদ অনুষ্ঠান ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় চ্যানেল আই ভবনে গত ৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকাল ৪টায়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন আনন্দআলো সম্পাদক রেজানুর রহমান।
প্রতি বছরের মতো এবারের ঈদে দেশের প্রায় প্রতিটি টিভি চ্যানেল বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছিল। নাটক, টেলিফিল্ম, গানের অনুষ্ঠান, সিনেমা, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ও আড্ডা আয়োজনে প্রতিটি চ্যানেল ব্যস্ত ছিল। চ্যানেলগুলোয় আগামী ঈদের ব্যস্ততাও শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। সবকিছু মিলিয়ে সার্বিক অবস্থা কেমন? কেমন হলো অথবা কেমন হওয়া উচিত ঈদের অনুষ্ঠান? এসব বিষয়ে আনন্দ আলোর গোলটেবিল বৈঠক আলোচনা হয়েছে।
মূল প্রবন্ধে রেজানুর রহমান বলেন, আনন্দ আলোর ঈদ সংখ্যায় একটি প্রতিবেদন লেখার জন্য আমরা দেশীয় টিভি চ্যানেলের একটি তালিকা তৈরি করেছি। তালিকায় উঠে এসেছে ২১টি টিভি চ্যানেলের নাম, যথাক্রমে- বিটিভি, বিটিভি ওয়ার্ল্ড, এটিএন বাংলা, চ্যানেল আই, একুশে টেলিভিশন, এনটিভি, বাংলা ভিশন, আরটিভি, দেশ টিভি, বৈশাখী টেলিভিশন, এটিএন নিউজ, সময়, মাছরাঙা, মোহনা টিভি, দিগন্ত, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি, বিজয়, জিটিভি, ইসলামিক টেলিভিশন, মাই টিভি এবং চ্যানেল নাইন। চ্যানেল ওয়ান বন্ধ রয়েছে। চ্যানেল ৭১ নামে আরও একটি নতুন টিভি চ্যানেল অচিরেই আত্মপ্রকাশ করবে।
প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ঈদ উপলক্ষে আমরা ১০টি টিভি চ্যানেলের ঈদ অনুষ্ঠান সূচি নিয়ে এই প্রতিবেদন লেখার চেষ্টা করেছি। এক হিসেবে দেখা গেছে ১০টি টিভি চ্যানেল যথাক্রমে বিটিভি, চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা, মাছরাঙা, দেশ টিভি, এনটিভি, একুশে টেলিভিশন, বৈশাখী, বাংলা ভিশন ও দিগন্ত টেলিভিশনে ২ শতাধিক নাটক, টেলিফিল্ম, ছায়াছবি প্রচার হয়েছে। এর মধ্যে নাটক-টেলিফিল্মের সংখ্যা ১৭৩। ঈদে এটিএন বাংলায় ১৮টি নাটক, ৫টি টেলিফিল্ম, ৫টি ছায়াছবি, চ্যানেল আইতে ১৭টি নাটক, ৮টি টেলিফিল্ম ও ২টি ছায়াছবি, বাংলাভিশনে ৬টি নাটক, ৬টি টেলিফিল্ম ৬টি ছায়াছবি ও ১টি ধারাবাহিক নাটক, আরটিভিতে ৮টি নাটক, ৭টি টেলিফিল্ম, ৭টি ছায়াছবি, ৩টি ধারাবাহিক, মাছরাঙায় ৮টি নাটক, ৫টি টেলিফিল্ম, ৫টি ছায়াছবি, দেশ টিভিতে ৭টি নাটক, ৭টি টেলিফিল্ম ও ৭টি ছায়াছবি, এনটিভিতে ৯টি নাটক, ৬টি টেলিফিল্ম, ৬টি ছায়াছবি, ২টি ধারাবাহিক, একুশে টিভিতে ১৯টি নাটক, ৩টি ছায়াছবি, বৈশাখীতে ৭টি নাটক, ৭টি টেলিফিল্ম, ৪টি ছায়াছবি, দিগন্ত টিভিতে ১০টি নাটক, ৪টি টেলিফিল্ম ও ১টি ছায়াছবি প্রচারিত হয়েছে।
রেজানুর রহমান আরও বলেন, আমরা অহংকারের সাথে বলতে চাই প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই আমাদের টিভি মিডিয়া অনেক ব্যপ্তি পেয়েছে। একদল সৃষ্টিশীল মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল আজকের টিভি অঙ্গন। কিন্তু সাম্প্রতিক বাস্তবতা কি? আমরা কি এগুচ্ছি না পেছাচ্ছি? এক ঈদ উৎসবে যে মিডিয়ায় ২ শতাধিক নাটক - টেলিফিল্ম নির্মিত হয় সেই মিডিয়ার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা অযৌক্তিক। তবুও কেন যেন কিছু কিছু প্রশ্ন মাঝে মাঝেই দেখা দেয়। এতদিন কোয়ানটিটির পেছনে ছুটেছি অনেকে। এখন জরুরি কোয়ালিটির পেছনে ছোটা। এত বড় মিডিয়ায় প্রশিক্ষণের সুযোগ কোথায়? আর কিছু না হোক একটা প্রশিক্ষণ একাডেমী হতে পারে। আজকের এই বৈঠকে বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত আছেন। আমরা চাই চলমান বাস্তবতার নিরিখে সকলেই তাদের মূল্যবান মতামত তুলে ধরবেন।
অনুষ্ঠানে অতিথি বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, প্রডিউসার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তারিক আনাম খান, নির্মাতা শাহজাহান চৌধুরি, প্রাবন্ধিক আহমদ মাজহার, চ্যানেল আই-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার আমীরুল ইসলাম, লেখক-নাট্যকার-সাংবাদিক আনিসুল হক, চিত্রগ্রাহক ও নির্মাতা খালিদ মাহমুদ মিঠু, উপস্থাপক ও নির্মাতা আবদুন নুর তুষার, প্রযোজক মনোয়ার হোসেন পাঠান ও তুহিন বড়–য়া, নাট্যকার জিনাত হাকিম ও বৃন্দাবন দাস, নির্মাতা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী, রেদওয়ান রনি, মোস্তফা কামাল রাজ, কায়সার আহমেদ, দেবাশীষ বড়–য়া দ্বীপ, নোমান রবিন, রাজু আলীম। অভিনয় শিল্পী ডি এ তায়েব, হাসান মাসুদ, হিল্লোল, সোহেল খান এবং স্বাগতা।
বক্তারা বাংলাদেশের টিভি মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন ও ব্রডকাস্টিং নীতিমালা প্রনয়ণের উপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি ভারতে বাংলাদেশের চ্যানেলগুলোর অবাধ সম্প্রচার নিশ্চিত করার ব্যাপারে সরকারী পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। একই সাথে অনুষ্ঠানের মান, বাজেট, বাজার সহ সামগ্রিক বিষয়ে নিজ নিজ মতামত ব্যক্ত করেন। তারা আরও বলেন, আমাদের টেলিভিশন জগৎ আগামীতে কেমন হবে তার আগাম রূপরেখা এখনই প্রণয়ন করা জরুরি। বক্তারা টিভি ইন্ডাস্ট্রির জন্য দেশে একটি মানসম্মত ও গ্রহণযোগ্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপনের উপর জোর দেন। আর এসব বিষয়ে একমত হতে পারলে ঈদ সহ আগামী দিনের মানসম্মত টিভি অনুষ্ঠান দর্শকরা দেখতে পারবেন বলে সভায় সকলে একমত পোষণ করেন।
বাংলাদেশ সময় ১৫২৫, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১১