ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

এনার্জি সেভিং ল্যাম্পে পরিবেশ দূষণ!

মোহাম্মদ দিদার খান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০২ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১২
এনার্জি সেভিং ল্যাম্পে পরিবেশ দূষণ!

আধুনিক বিশ্বে উন্নয়ন এবং উৎপাদনের মূল চালিকা শক্তি হলো বিদ্যুৎ শক্তি। বিদ্যুৎ ছাড়া একটি মূহুর্তও এখন কল্পনা করা সম্ভব নয়।



ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন অপ্রতুল হওয়ায় প্রতিনিয়ত আমাদের লোডশেডিংয়ের শিকার হতে হয়। সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা।

বিজ্ঞানীরা তাই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের নতুন নতুন পন্থা উদ্ভাবনে ব্যস্ত। এইসব চেষ্টার সফল এবং কার্যকরী একটি পন্থা হলো সাধারণ বৈদ্যুতিক বাতির বদলে এনার্জি সেভিং ল্যাম্প বা সিএফএল বাতি ব্যবহার করা।

সাধারণ বাতির তুলনায় এনার্জি সেভিং ল্যাম্পে প্রায় ৭০ ভাগ বিদ্যুৎ খরচ কম হয়, যা আমাদের মতো দেশে বিদ্যুৎ সঙ্কট মোকাবেলায় বড় ভূমিকা রাখবে। এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে দেশে ব্যাপক হারে এনার্জি সেভিং ল্যাম্প ব্যবহার শুরু হয়েছে। সরকারও বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে সরাসরি এর ব্যবহার সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে গ্রাম-গঞ্জ সর্বত্র।

সবাই শুধু এর প্রচার এবং প্রসারেই ব্যস্ত, অথচ এসব এনার্জি সেভিং ল্যাম্প ব্যবহার শেষে যদি সঠিকভাবে এটিকে ধ্বংস না করা হয় তাহলে যে তা অদূর ভবিষ্যতে কী বিপর্যয় নিয়ে আসবে তা অনুধাবন করা খুব জরুরি।

এনার্জি সেভিং ল্যাম্পের একটি অন্যতম উপাদান হলো মারকারি বা পারদ। পৃথিবীতে মারাত্মক ক্ষতিকর বা বিষাক্ত ধাতু বলে যেগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে মারকারি বা পারদ এদের অন্যতম। এই ধাতুটি মানুষ, পশু-পাখি এবং পরিবেশ সবার জন্যই ক্ষতিকর। এটি আমাদের মস্তিষ্ক, স্নায়ুতন্ত্র, লিভার, কিডনি ইত্যাদি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য মারাত্মক বিষাক্ত। গর্ভবতী মায়েদের শরীরেও এটি মারাত্মক প্রভাব ফেলে, যা গর্ভের সন্তানের বিকলাঙ্গতা, মস্তিষ্কের ত্রুটিপূর্ণ গঠন, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, হৃদরোগসহ নানা জটিল সমস্যার দিকে ঠেলে দেয়। এছাড়া পরিবেশ দূষণেও এর ভূমিকা অনেক। অনেক ক্ষেত্রে এটিকে আর্সেনিকের চেয়েও বিষাক্ত ধরা হয়ে থাকে।

এনার্জি সেভিং ল্যাম্প ব্যবহার শেষে যেখানে-সেখানে ফেলে দিলে তা ভেঙে গিয়ে এর মধ্যে থাকা মারকারি বিষ নির্গত হওয়া শুরু করে। এটি খুব সহজেই বায়ু এবং পানিতে মিশে যায়, যা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। পানি এবং মাটি দূষণের ফলে তা বিভিন্ন খাদ্যশস্য, মৎস সম্পদ, গবাদী পশুর মারাত্মক ক্ষতি সাধন করার মাধ্যমে আমাদেরও ক্ষতি করতে পারে। মোট কথা আমরা যে এর মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছি এ কথা অনস্বীকার্য।

উন্নত বিশ্বে সিএফএল বাতি ব্যবহার শেষে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হয়, যা পরে সঠিক উপায়ে ধ্বংস করা হয়। আমাদের দেশেও এ রকম ব্যবস্থা গ্রহণের চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। অনেকে হয়তো বলতে পারে একটি এনার্জি সেভিং ল্যাম্পে খুব কম পরিমাণে মারকারি থাকে। কিন্তু শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, একটি এনার্জি সেভিং ল্যাম্পে যে পরিমাণ মারকারি আছে তা ২৩ হাজার লিটার পানি দূষিত করতে যথেষ্ট!

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে যে হারে দিন দিন এ ল্যাম্পের ব্যবহার বাড়ছে তাতে যদি সঠিকভাবে এটিকে ধ্বংস করার ব্যবস্থা করা না হয়, তাহলে আগামী দশ/পনের বছরের মধ্যে যে আমরা মারকারি দূষণের মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পরতে পারি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

তাই ব্যাপক বিপর্যয়ের কথা মাথায় রেখে, ব্যবহার শেষে সঠিকভাবে  সিএফএল বাতি ধ্বংস করতে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সম্পাদনা: শিমুল সুলতানা, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।