আমরা অনেকেই মাথাব্যথাকে অবজ্ঞা- অবহেলা করি। অথচ সাধারণ রোগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক এমন কি জীবননাশী বিচারে মাথাব্যথা নার্ভাস সিস্টেমের কমন সমস্যার মধ্যে অন্যতম।
মাথাব্যথা সব বযসের, সব শ্রেণীর, সব দেশের মানুষের একটি কমন সমস্যা। কারও অল্প কারও বা বেশি হয়। এমন অনেকেই থাকে যাদের মাথাব্যথার সাথে বমি হয়। কারও আবার জ্বরও আসে। এ এমন এক সমস্যা সাধারণত যাকে আমরা রোগ না বলে বলি উপসর্গ।
মাইগ্রেন মাথাব্যথার ধরনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কমন। ব্রেনের ভেতরে ব্যথা তৈরির ইনফ্লামেটরি রস স্নায়ুতন্ত্র এবং মাথার রক্তনালীর চারধারে নি:সরিত হয়, ফলে মাথাব্যথা হয়। মাথার একদিকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর এই অসহ্য ব্যথা হয়। বেশির ভাগ মাইগ্রেন রোগীর বমি হয়। লাইট অফ করে অন্ধকারে ঘুম এলে মাথাব্যথা কমে। ইদানিং মাইগ্রেনের মাথাব্যথায় কার্যকরি অনেক ওষুধ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তবে এদের বেশিরভাগই লম্বা সময় ধরে নিয়মিত ব্যবহারে কিছুটা ফল পাওয়া যায় একবারে নির্মূল করা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না।
মাইগ্রেনের পরই মাথাব্যথার কারণ হলো টেনশান বা দুশ্চিন্তা। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মাথাব্যথার কারণগুলোর মধ্যে ৭০ শতাংশই এই দুশ্চিন্তার জন্য হয়। টিন এজার মেয়েদের এই ব্যথা বেশি হয়। তবে যেকোন রয়সেই হতে পারে। সাধারনত হতাশা, চিন্তা, ব্যর্থতা থেকে এ ব্যথার শুরু হলেও যখন ব্যথা হয় তখন কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন থাকতে পারে। যারা ক্রণিক ভাবে এই মাথাব্যথায় ভুগে তাদের অনেকেই দিনের পর দিন এই সমস্যায় একেবারেই অথর্ব হয়ে পড়ে। স্বাভাবিক জীবন থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এধরনের ব্যথায় রোগীর মনে হয় তার মাথার চারদিকে কেউ যেন টাইট করে কিছু একটা বেঁধে রেখেছে। দুশ্চিন্তা কমানোর জন্যে অনেক ভাল ভাল ওষুধই এখন বাজারে রয়েছে।
ক্লাস্টার মাথাব্যথা, কারণ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম সংক্রমিত সমস্যা। একহাজার জনে মাত্র একজনের এ ধরনের মাথাব্যথা হয়। চোখ লাল হয়, নাকে পানি ঝড়ে এবং অনেক সময়ই অসহ্য ব্যথা হয়। মাইগ্রেন, টেনশান এবং ক্লাস্টার মাথাব্যথা হলো প্রাথমিক কারণ। এছাড়া সাইনোসাইটিস জাতীয় অনেকগুলো সেকেন্ডারি কারনে মাথাব্যথা হয়। এমনকি বেশি বেশি ওষুধ খাওয়ার কারনেও মাথাব্যথা হয়। মাথাব্যথার কারণ খুঁজতে গিয়ে অনেকের দেখা যায় ব্রেন টিউমার- যদিও সংখ্যাটা খুব বেশি না কিš‘ হতে পারে। তাই নিয়মিত মাথাব্যথা হলে হেলাফেলা করার সুযোগ কিন্তু একেবারেই নেই।
মাথাব্যথা সমস্যা ব্যক্তি এবং সামাজিক জীবনের অন্যতম অভিশাপ যা জীবনে নিয়ে আসে পঙ্গুত্ব, অর্থকড়ির অপচয়। খুব কম সংখ্যক লোকের মাথাব্যথার কারণ মাত্র চিকিৎসকরা নিরুপণ করতে সক্ষম হয় ফলে অধিকাংশই মাথাব্যথার যন্ত্রণাকে নিত্যসঙ্গী করে নেয়। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা তার কাছে হয়ে পড়ে অর্থহীন। পূর্ণবয়স্ক মানুষের মধ্যে গত এক বছরে ৪৭% একবার অন্তত: মাথাব্যথা সমস্যায় ভুগেছে। নিজের জন্য বা পরিবারের জন্য, সমাজের জন্যে কিছু করার সময় যখন ঠিক তখন এই অসহ্য ক্রণিক মাথাব্যথা কাজে মনোযোগ নষ্ট করে। প্রায় সময়ই মাথাব্যথা থাকে তাই সে ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ডাক্তারের পর ডাক্তার বদল করে, একগাদা ওষুধ খায় ফলে অর্থের অপচয় হয়।
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্র্রতি মাথাব্যথাকে সারা বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে অবহেলিত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এধরনের একটি কমন সমস্যায় সকলের সচেতনতা আহ্বান করেছেন তারা।
ডা. অপূর্ব পন্ডিত
সম্পাদক: আমার হেলথ্
মেইল- amadersastho@gmail.com