অভাব আর দারিদ্রকে পিছু ফেলে শিক্ষা জীবনে একের পর সাফল্য অর্জন করলেও হতাশা আর দুঃখ তাড়া করছে ওদের। এ বছর এইচএসসিতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করলেও উচ্চ শিক্ষার ভবিষাৎ নিয়ে ওরা ৪ জন আজ বিমর্ষ।
তবুও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে ওরা। সমাজের বিত্তবানদের একটু সহানুভুতি ওদের জীবনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছে দিতে পারে। আর ওদেরও ইচ্ছা সমাজ, রাষ্ট্র ও আত্মমানবেতর সেবায় নিজেদেরকে বিলিয়ে দেয়ার। এমনই এক দৃষ্টিভঙ্গি আর অদম্য ইচ্ছা নিয়ে ওরা সবাই শিক্ষাজীবন গড়তে চায়।
মৌমিতা মন্ডল: এবছর এইচএসসিতে মংলা কলেজ থেকে মৌমিতা বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। বাবা দিবস মন্ডল একজন দরিদ্র মৎস্যজীবী। মা মিনা মন্ডল একজন গৃহিণী। তাদের অভাবের সংসার চলছে কোনো মতো। দুইসন্তানের মধ্যে মৌমিতা বড় মেয়ে। মেয়ের উচ্চশিক্ষার জন্য বিক্রি করতে চায় সহায়-সম্পদ। আর মৌমিতারও ইচ্ছা ভবিষ্যতে ডাক্তার হয়ে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের সেবা করার। কিন্তু কীভাবে লক্ষে পৌঁছাবে এ নিয়ে চরম দূচিন্তা তার। প্রাইভেট মাস্টার ছাড়াই এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ এবং ২০০৫ সালে প্রাথমিকে বৃত্তি লাভ করে সে। তার উচ্চশিক্ষার ভবিষাৎ নিয়ে বাবা-মা এখন চরম হতাশার মধ্যে রয়েছে।
মিলি মন্ডল: মিলি মন্ডল মংলা কলেজ থেকে এ বছর বাণিজ্যিক বিভাগে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। বাবা সরজিৎ মন্ডল দিনমজুর ও মা সূচিত্রা মন্ডল একজন গৃহিণী। তিন ভাই বোনের মধ্যে মিলি মন্ডল সবার বড়। তার লেখা পড়ার খরচ যোগাতে ইতিমধেই শেষ সম্বল বসত ভিটার সাড়ে ৩ কাঠা জমিও বিক্রি করতে হয়েছে। বর্তমানে স্বপরিবারে আশ্রয় নিয়েছে বাজুয়ায় অন্যের বাড়িতে। বাবার একার আয়ে মিলি ও তার ছোট ভাইয়ের লেখাপড়া তো দূরের কথা সংসারও চলে না। এ অবস্থায় শিক্ষা জীবনের ভবিষাৎ নিয়ে চরম হতাশায় তার পরিবার। তবুও পড়াশুনা শেষ করে ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন মিলির।
ইসরাত জাহান রিতু: ইসরাত জাহান রিতু এবার এইচএসসিতে মংলা কলেজ থেকে বানিজ্যিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার এসএসসি পরীক্ষায় রয়েছে একই সাফল্য। বাবা আজাহার আলী হাওলাদার দীর্ঘদিন অসুস্থ, মা ঝর্না বেগম গৃহিণী। তাই ৪ মেয়ে ও ১ ছেলেসহ ৭ জনের সাংসার চলছে অভাব অনাটনে। তাই পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করলেও রিতুর ভবিষাৎ শিক্ষা জীবন অনেকটাই অনিশ্চিত। কোথায় কীভাবে ভর্তি হবে এবং কেইবা যোগান দেবে লেখাপড়ার খরচ এ নিয়ে দুচিন্তায় তার অসুস্থ বাবা। রিতু আইবিএ করতে চায় এবং শিক্ষা জীবন শেষ করে সমাজ ও মানুষের সেবা করতে চায় রিতু।
সুমি আক্তার: বাণিজ্যিক বিভাগে এ বছর মংলা কলেজ থেকে সুমি আক্তার জিপিএ-৫ পেয়েছে। বাবা আবুল বাসার প্যারলাইস্ট আক্রান্ত হয়ে বিছানায় রয়েছেন দীর্ঘদিন। মা ফুলজাহান বেগম আকড়ে ধরেছেন স্বামীর মৎস্যজীবীর পেশা। তাই তারই ওপর নির্ভর ৪ জনের সংসার। সুমি ছাড়ও ছোট আরেক বোন নবম শ্রেনীতে পড়ছে। অর্থের অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না বাবার। তাই নিজের লেখাপড়ার ইচ্ছা থাকলেও শিক্ষা জীবনের ভবিষাৎ নিয়ে সুমি চোখের জল ফেলছেন।
ওদের সাহায্য করতে চাইলে যোগাযোগ করুন: বিএনএসএস কমিটির আহ্বায়ক শারমীনা ইসলাম-ফোন: ০১৯৩৭১৯৯৩৭৬, ইমেইল- lifestyle.bn24@gmail.com