শারমিন আক্তার ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মাহতাব উদ্দিন কলেজে স্নাতক ১ম বর্ষে পড়ছেন। এসএসসি পড়ার সময় তার পরিবার থেকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়।
বিয়ের পর স্বামীর পরিবার থেকে সাফ জানানো হয় শারমিনকে আর পড়তে দেয়া হবে না। পড়াশোনার জন্য কোনো টাকা খরচ করা হবে না।
অথচ মেয়েটির পড়াশোনায় বেশ আগ্রহ। টাকার অভাবে তার পড়াশোনা একেবারেই প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। শারমিনের মতো মুনমুন বিশ্বাস, আমেনা খাতুন, সাথী খাতুনও ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ৪৫জন ছাত্রী টাকার অভাবে পড়াশোনা করতে পারছিলো না।
কালীগঞ্জ উপজেলার মোস্তবাপুর গ্রামের খাদিজা খাতুন টাকার অভাবে এইচএসসি পরীক্ষার ফি না দিতে পারায় গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করে।
২০০৩ সালে পত্রপত্রিকায় এমন খবর জানার পর জাপানী মহতি নারী হিরোকো কোবাইসি আসেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায়। তিনি শিক্ষা বঞ্চিত মেয়েদের খুঁজে বের করে পড়াশোনা চালানোর জন্য সহায়তা দেয়ার উদ্যোগ নেন। তার এই কাজে সহায়তা করে হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড।
সেই থেকে জাপানী নারী হিরোকো কোবাইসির আর্থিক সহায়তায় কালীগঞ্জের ৪৫জন গরীব মেধাবী ছাত্রী পড়াশোনা করছেন। তাদের দেখভালের জন্য প্রতি বছরের মার্চ মাসে সুদূর জাপান থেকে হিরোকো কোবাইসি ছুটে আসেন কালীগঞ্জ শহরে।
এবারো হিরোকো কোবাইসি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ আসেন। শুক্রবার তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার বলিদাপাড়া গ্রামে প্রশিক্ষণ ও বিকাশ কেন্দ্রে দরিদ্র মেধাবী ছাত্রীদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে ওঠেন।
হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের কান্ট্রি ডিরেক্টর আতাউর রহমান মিটন বাংলানিউজকে জানান, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ১৬ জন শিক্ষার্থী প্রতিমাসে পান তিনশ টাকা। আর মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ের ২৯ জনকে প্রতিমাসে দেওয়া হয় দুইশ টাকা করে।
জাপানী নারী হিরোকো কোবাইসি বাংলানিউজকে জানান, তিনি পেশায় একজন ফটোগ্রাফার। তাছাড়া তিনি জাপানে একটি ফুলের দোকানা আছে। তিনি নকশার কাজেও পারদর্শী।
স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ছোট বেলায় তিনি খুব গরীব ছিলেন। অন্যের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি লেখাপড়া করেছেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যদি কখনো বড় কিছু হতে পারি তাহলে তিনি গরীব মেধাবী মেয়ের লেখাপড়ায় সহযোগীতা করবেন। সেই প্রতিজ্ঞা থেকে কোবাইসি এই শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করেন।
হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের কালীগঞ্জ অফিসের ইনচার্জ হাফিজুর রহমান জানান, যাদের বৃত্তি দেয়া হচ্ছে তারা আমাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন কমপক্ষে এইচএসসি পাস করার আগ পর্যন্ত তারা বিয়ে করবে না।
হিরোকো কোবাইসি এক ভীন দেশি নারী। তার দেয়া অর্থের পরিমাণ আজকের দিনের জন্য হয়ত খুব বেশি নয়। কিন্তু তার আন্তরিকতা, অবহেলিত পিছিয়ে পড়া নারীদের সাহায্য করার মনোভাব আমাদের বিত্তবান নারীদের কাছেই তো হতে পারে উদাহরন।
সমাজে আজ শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত নারীর সংখ্যা কিন্তু কম নয়। আমরা যদি নিজেদের আয় থেকে একটি ছোট্ট অর্থ দরিদ্র নারীর পড়ালেখা বা কোনো কাজ শেখায় সাহায্য করি তবে সেও একদিন সক্ষমতা অর্জন করবে অন্যকে সাহায্য করার।
আপনি যদি এগিয়ে আসতে চান এমন কোনো নারীর সাহায্যে তবে সমাজের দুঃস্থ ও আর্তপীড়িত মানুষের সাহায্যে পরিচালিত বাংলানিউজের বিএনএসএস(বাংলানিউজ সোশ্যাল সাভির্স) রয়েছে আপনার পাশে।
যোগাযোগ: বিএনএসএস কমিটির আহ্বায়ক শারমীনা ইসলাম-ফোন: ০১৯৩৭১৯৯৩৭৬, ইমেইল-help.bnss24@gmail.com