ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

ভীতি-শঙ্কা-ফোবিয়া-জয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৬
ভীতি-শঙ্কা-ফোবিয়া-জয়

মাইকেল প্রিচার্ডের একটি মজার উক্তি দিয়ে শুরু করলে যা দাঁড়ায় “শঙ্কা বা ভীতি সেই ঘুঁপচির অন্ধকার কক্ষে আপনাকে নিয়ে যেতে পারে যেখানে একের পর এক কেবলই অজানা ও অচেনা ভয়  শাখা গজিয়ে আপনাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরবে। ‍‍” আর ফোবিয়া বা এই শঙ্কারোগ বা ভীতিরোগ  হলো সেই শাখাবিস্তৃত বৃক্ষ।



ফোবিয়া গ্রিকশব্দ ফিকস, ফোবস শব্দ থেকে এসেছে। চিকিৎসাশাস্ত্রে একে উদ্বেগ সৃষ্টিকারী সর্বাধিক বিস্তৃত মানসিক রোগ বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। একটি সাধারণ জরিপে দেখা গেছে আমেরিকার জনগণের শতকরা ৫.১ থেকে ২১.৫ হারে এ ধরনের গোপন ব্যাধি নিয়ে জীবন-যাপন করছে। এর পরিমাণ ইউরোপে এবং অস্ট্রেলিয়ায় বেশি বৈ কম নয়।

প্রতিটি মেয়ের ক্ষেত্রে গড়ে একটি করে হলেও এ ধরনের প্রতিবন্ধতার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

আসলে এই ফোবিয়া কী ধরনের সমস্যা বয়ে বেড়ায়? ফোবিয়া আমাদের মনের আবেগকে আলোড়িত করতে পারে এমন একটি বিশৃংখল এবং অতিমাত্রার ভয় বা উদ্বেগ সৃষ্টিকারী অবস্থা বিশেষ। সাধারণত ভয় তখনই ফোবিয়া হিসেবে আগমন করে যখন এর কোনো প্রত্যক্ষ যুক্তি থাকে না।

এটি দুশ্চিন্তালালিত রোগ যা মস্তিস্ক বিকৃতির জন্য যেমন হয় না তেমন অতি সাধারণ সমস্যা ভেবে প্রতিকার করাও যায় না। ভয় বা শঙ্কাকে পুঁজি করে জীবনপ্রেমী মানুষ এই ধরনের আতঙ্কের আবছায়া থেকে বাঁচতে প্রয়োজনে তার স্বস্তিময় বা বৈচিত্র্যময় জীবনকে সীমাবদ্ধ করে ফেলে অথবা বেঁচে থাকার অংকে ভাগশেষ মেলাতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

তবে হ্যাঁ, আশার কথা হলো সব বয়সেই চাইলে এ শঙ্কা বা আতঙ্কের রোগটিকে আমরা জয় করতে পারি।  

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথের জরিপে প্রায় ২ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কোনো না কোনো ফোবিয়ায় আক্রান্ত।

ফোরবিজ ম্যাগাজিনের একটি আর্টিকেলে ‘আমাদের সর্বাধিক প্রচলিত ভয়’ শিরোনামে ৯টি বিশেষ আতঙ্ককে প্রাধান্য দিয়ে বিশেষ সমীক্ষা তুলে ধরা হয়েছে। তার মধ্যে আর্চনো ফোবিয়া বা মাকড়সাভীতি আছে এমন নারীর সংখ্যা শতকরা ৫০ ভাগ এবং পুরুষের সংখ্যা শতকরা ১০ ভাগ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। অপর আরেকটি প্রচলিত আতঙ্কের নাম সোস্যাল ফোবিয়া বা সামাজিক হেনস্থাভীতি অনেকের মাঝে রয়েছে।

এছাড়া আরও কিছু ফোবিয়া বা ভীতি রয়েছে যেমন
•    অফিডিও ফোবিয়া: সর্পভীতি
•    সাইনোফোবিয়া : কুকুরভীতি
•    এরোফোবিয়া: উড্ডয়নভীতি(এরোপ্লেনে চড়ার প্রতি ভয়)
•    ক্লাসট্রোফোবিয়া: আবদ্ধ বা সংকীর্ণস্থানে আটকে মরার ভয়
•    একরোফোবিয়া: উচ্চতাভীতি
•    হাইড্রোফোবিয়া বা একুয়াফোবিয়া: জলভীতি
•    আর্সনফোবিয়া:অগ্নিভীতি

এমন কতগুলো ফোবিয়া আছে যা মানুষ তা সহজাত বা স্বাভাবিক বলে মেনে আসছে অথচ তা মানুষের মানসিক উদ্বেগকে প্রশমিত হতে বা স্বস্তি প্রদানে বাধা দিচ্ছে।
•    এন্ড্রফোবিয়া(মহিলাদের পুরুষভীতি)
•    গ্লসোফোবিয়া(জনগনের সামনে দাড়িয়ে বক্তব্য দিতে ভীতি)
•    এনোক্লোফোবিয়া(ভীড়ভীতি)
•    এজিরো ফোবিয়া (রাস্তাভীতি বা রাস্তা পার হওয়া নিয়ে আতঙ্ক)
•    এস্ট্রাপো ফোবিয়া (বজ্রপাতভীতি)

অটোফোবিয়া বা একাকীত্বভীতিকে অতি স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক ব্যাপার বলে মনে করে থাকি। তবু মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে কিছু পারিবারিক বিধি, বংশানুক্রম এবং কিছু মস্তিস্কসংক্রান্ত সমস্যায় মানুষ ফোবিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।

হার্ভাড মেডিকেল স্কুলের এক সমীক্ষা থেকে জানা যায় লিঙ্গভেদে এ ফোবিয়ার পরিসংখ্যান ভিন্ন এবং বৈচিত্র্যময়। সমীক্ষায় আলোচিত হয় যে কিছু হরমোনগ্রন্থির হরমোন উপস্থিতি এবং তা নি:সরনের ভিন্নতার কারণেই মূলত এই পরিসংখ্যানের ভিন্নতা রয়েছে।

আর সে কারণেই
•    নারীদের সামাজিক নিরাপত্তাভীতি কোনো না কোনোভাবে পুরুষদের চেয়ে দ্বিগুণ
•    আবার পরুষদের চেয়ে নারীদের এগোরা ফোবিয়া বা জনগনের মুখোমুখি হবারভীতি তিনগুণের চেয়েও বেশি
•    যেখানে মাত্র ৫-৬ শতাংশ পুরুষ দুর্ঘটনা পরবর্তী মানসিক চাপ সামাল দেয় সেখানে ১০-১৪ শতাংশ নারী তা করতে পারে

পরিশেষে ফোবিয়ারমুক্ত হবার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের কাছে এর সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা চারটি মূল সমাধানের পথ বাতলে দেন
•    কাউন্সিলিং
•    মেডিটেশন
•    সাইকোথেরাপি
•    কগনিটিভ বিহেবিয়ার থেরাপি

নিজের ভেতরের ফোবিয়ার জাল বিস্তার বন্ধ রাখতে সমস্যাটি গোপন না রেখে সবার সাথে শেয়ার করুন।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।