ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকা ও হাতের কাজের দক্ষতা ছিল মনিকার। স্কুল কলেজে সব সময়ই ছবি আঁকা ও রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম হতেন।
সব সময়ই নিজের নকশা করা হাতের কাজ ও পেইন্ট করা ড্রেস পরতেন। বানিয়েও দিতেন অনেককে। প্রশংসাও পেতেন বেশ। পরবর্তীতে মেয়েকেও বানিয়ে দিতেন কুরুশ কাটার উলের তৈরি বিভিন্ন ধরনের জামা, জুতা, হেয়ারব্যান্ড।
ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে বসবাস করা মনিকা জানান, ইংরজিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টে এমবিএ করি। ইচ্ছা ছিল ব্যাংকে চাকরি করার। কিন্তু শুরুতেই একটি ফোন কোম্পানিতে চাকরি হওয়ায় ওখানেই কাজ করি। বেশ কিছুদিন চাকরি করার পর সন্তানকে সময় দিতে চাকরি ছেড়ে দিই।
তবে চাকরি ছাড়ার পর একটা সময় আমার ভেতরে হতাশা কাজ করতো। সেই মুহূর্তে কথা হয় আমার ডিপার্টমেন্টের এক ছোট বোনের সঙ্গে। যার অবদান আমি কখনই ভুলবো না। তার প্রচেষ্টাতেই আমি ফেসবুকের মাধ্যমে সেল পোস্ট দিয়ে প্রথম অর্ডার পাই। তিন বছর আগে এভাবে শুরু হয় আমার উদ্যেক্তা হওয়ার পথচলা। আমার অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামটি আমার মেয়ের নামেই করা হয়। ‘লিরিক হ্যান্ডিক্রাফটস’ আমার স্বপ্ন পূরণের আরেক নাম।
তিনি বলেন, প্রথমে বেবি রেডি শাড়ি ও কুরুশের উলের পণ্য পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে শিশুদের পোশাক, মা-মেয়ের ম্যাচিং শাড়িও যুক্ত করেছি। এই ম্যাচিং শাড়িই আমার প্রতিষ্ঠানের সব থেকে উল্লেখযোগ্য ও বেশি বিক্রি হওয়া পণ্য।
আমার প্রতিষ্ঠানের মূল বিশেষত্ব হলো এখানে যেসব পোশাক রয়েছে তা আমার নিজের নকশা করা। এখানে তিন মাস বয়সের বাচ্চাদের শাড়িও পাওয়া যায়।
শাড়ি ছাড়াও শিশুদের জন্য ওড়নার সেট এবং ধুতি-পাঞ্জাবির সেট পাওয়া যায়। আর এখন শুধু পোশাকেই সীমাবদ্ধ নয় বিভিন্ন ধরনের খাবারও তৈরি করছি। নারিকেলের নাড়ু, সন্দেশ ও শতভাগ খাঁটি গাওয়া ঘি পাওয়া যাচ্ছে। খুব দ্রুত সবার কাছে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই পণ্যগুলো। শুধু দেশেই নয় বিশ্বের প্রায় দশ বারোটা দেশে আমার পণ্য গিয়েছে। আর যারাই আমার পণ্য নিয়েছেন সবাই খুব পছন্দ ও প্রশংসা করেছেন।
তিনি জানান, ছোট পরিসরে শুরু করলেও বর্তমানে বেশ কিছু কর্মী আমার সঙ্গে রয়েছে। এক্ষেত্রে আমি প্রধান্য দিয়েছি গৃহবধুদের, যারা তাদের সংসারের পাশাপাশি আমার সঙ্গে কাজ করছেন। বর্তমানে তাদেরকে কর্মদক্ষ করে ও আর্থিক সহায়তা দিতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত। এটা আমার আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দিয়েছে। মনে হচ্ছে সমাজের জন্য কিছু একটা করতে পারছি।
করোনার কারণে অনেকেই চাকরি বা কাজ হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন, এসময় নতুন করে যারা উদ্যোক্তা হওয়ার কথা ভাবছেন, তাদের জন্য মনিকা বলেন, ধৈর্য ও কর্মদক্ষতার ওপর সব থেকে বেশি জোর দিতে হবে। আমি পারবো, আমাকে পারতেই হবে এই বিশ্বাস থাকতে হবে।
অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন মনিকা। তবে ক্রেতার চাহিদার কথা বিবেচনা করে ভবিষ্যতে শোরুম দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তার।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৮ঘণ্টা, আগষ্ট ২৭, ২০২০
এমআরএ/এসআইএস