ডায়াবেটিস রোগ হয় ব্লাড গ্লুকোজ অর্থাৎ ব্লাড সুগার লেভেল অনেক ওপরে চলে গেলে আর এ সমস্যাটির ফলে দেখা দিতে পারে হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, চোখের সমস্যা, পায়ের সমস্যা ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষয়। ডায়াবেটিসের উপসর্গগুলো যে সবসময় স্পষ্টভাবে প্রতীয়মাণ হয় তা কিন্তু নয়।
সাধারণভাবে সতর্ক সংকেতগুলোর একটি আঘাত হানতে পারে রাতেরবেলা এবং তা হতে পারে এমন একটি লক্ষণ যেখানে হাই ব্লাড সুগার লেভেল আপনার স্নায়ুতন্ত্রগুলোকে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলেছে।
আপনার শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে ব্লাড সুগার লেভেলের পরিমাণ কম হওয়ার কারণে এবং ব্লাড সুগারের দ্বারা স্নায়ুতন্ত্র বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে। যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে তাহলে অপ্রত্যাশিত ঘাম হতে পারে ডায়াবেটিস সংশ্লিষ্ট নার্ভাস সিস্টেম অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার একটি লক্ষণ। অতিরিক্ত ব্লাড সুগার অথবা উচ্চমাত্রার চর্বিও নার্ভাস সিস্টেমকে খুব ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে অথবা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে সেইসব রক্তনালীকে। স্নায়ুতন্ত্রের পরিচর্যা করে দ্য আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন জানায় যে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রায় অর্ধেক মানুষই স্নায়ুতন্ত্র খুব ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সমস্যায় ভোগেন। যখন স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি ঘটে তখন এটি আপনার ঘর্মগ্রন্থিগুলোকে প্রভাবিত করে এবং শরীরের অন্যান্য প্রক্রিয়ার ওপরও প্রভাব ফেলে।
যে নার্ভসমূহ ঘর্মগ্রন্থিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে সেগুলোতে বেশি ক্ষয় হলে রাতেরবেলা আপনার খুব বেশি ঘাম হতে পারে, বিশেষ করে খাওয়ার সময় হয়তো আপনার ঘর্মগ্রন্থিগুলো একেবারেই কাজ করবে না অথবা দেখা যাবে যে, শরীরের কোনো নির্দিষ্ট অংশ ঘামছে এবং অন্যান্য অংশ শুকনো থাকছে।
ঘর্মগ্রন্থিগুলোর সঠিক কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া আপনার শরীরে সঠিক তাপমাত্রা বজায় থাকাকে কঠিন করে তুলতে পারে। ঘামের বিষয়টি বাদ দিলে স্নায়ুতন্ত্রের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াটা আপনার শরীরে নানা ধরনের উপসর্গের জন্ম দিতে পারে যা নির্ভর করে আপনার শরীরের কার্যক্ষমতা কতোটা প্রভাবিত হয় তার ওপর।
অটোমেটিক নিউরোপ্যাথি ঘর্মাক্ত হওয়াটা নিয়ন্ত্রিত হয় অটোমেটিক নার্ভাস সিস্টেম দ্বারা। এ অটোমেটিক নার্ভাস সিস্টেম আবার নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দন, চোখ, মূত্রথলি, পরিপাক ক্রিয়া ও যৌন অঙ্গাদিকে। এসব অঙ্গের যে কোনোটির কার্যক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে ডায়াবেটিস।
স্নায়ুগত ও জীবনযাপনসংক্রান্ত আরও কিছু বিষয়াদি আছে যা স্নায়ুতন্ত্র ক্ষয় করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, কিডনি আমাদের রক্তে টক্সিনের যোগান দেয় সেটিকে নষ্ট করে দিতে পারে ডায়াবেটিস। আপনি যদি অধিক ওজনের অধিকারী হয়ে থাকেন যা দ্বারা বুঝায় আপনার বডি ম্যাস ইনডেক্স (বিএমআই) ২৫ কিংবা তারও বেশি তাহলে আপনি ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন। আপনি যদি ধূমপায়ী হোন তাহলে জেনে রাখুন যে, ধূমপান আপনার ধমনীকে সংকীর্ণ ও শক্ত করার মাধ্যমে আপনার স্নায়ুতন্ত্রকে ক্ষয় করে ফেলতে পারে। এটি আপনার রক্ত সঞ্চালন কমিয়ে দেয়। যার ফলে আপনার গোটা শরীরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
যদি আপনি বড় কোনো উপসর্গ দেখতে পান, যেমন- আপনার পায়ের মধ্যে দাগ দৃশ্যমান হয় যা দূর হচ্ছে না, মাথা ঝিমঝিম করে কিংবা নিস্তেজ বোধ করেন, শরীরে শির শির অনুভূতি টের পাওয়া, দুর্বলতা অনুভব করা, হাত কিংবা পায়ে ব্যথা অনুভব করা। যেগুলো আপনার দৈনন্দিন কাজের অথবা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। তা দেখা দিলে ডাক্তারের সঙ্গে আলাপ করুন। হজমের সমস্যা, প্রশ্রাবের সমস্যা, যৌনক্রিয়ার সমস্যা প্রভৃতিকে অবহেলা করবেন না। যা সবচেয়ে ভালো হবে তা হলো এসব উপসর্গের কোনো একটি দেখা গেলে একজন দক্ষ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আপনার ব্যক্তিগত খাদ্যতালিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। উচ্চ প্রক্রিয়াজাত শর্করা এবং পরিশোধিত শস্যকণা যেগুলো আপনার ব্লাড সুগার বাড়িয়ে দেয়, সেগুলোর পরিবর্তে প্রাকৃতিক ও উদ্ভিদজাত খাবার বিশেষ করে আঁশযুক্ত খাবার খান। আঁশ রক্তে সুগার ও কোলেস্টেরেলের নিসরণ কমিয়ে দেয়। ব্লাড সুগার লেভেল স্বাভাবিক রাখার জন্য নিয়মিত শরীরচর্চাও গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি নিয়মিত পায়ের যত্ন নিন এবং প্রতিবার ডাক্তার দেখানোর সময় খেয়াল করে পা পরীক্ষা করিয়ে নিন।
সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া
বাংলাদেশ সময় ১১০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২২
এসআইএস/জেডএ