ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ধর্ষণের পর প্রতিবন্ধী নারীকে পুড়িয়ে হত্যা করে সুজন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০২২
ধর্ষণের পর প্রতিবন্ধী নারীকে পুড়িয়ে হত্যা করে সুজন

সাভার (ঢাকা): ঢাকার কেরানীগঞ্জে এক বাক প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণের পর শরীরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করার পাঁচ দিন পর প্রধান আসামি সুজন মিয়া (২৫) কে গ্রেফতার করেছে ঢাকা জেলা পুলিশ।

শনিবার (০৩ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকা জেলা কার্যালয়ে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান রিপন।

 

এর আগে, শুক্রবার (০২ ডিসেম্বর) সকালে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানা থেকে আসামি সুজনকে গ্রেফতার করা হয়৷

জানা গেছে, গত ২৮ নভেম্বর রাত সাড়ে দশটায় দিকে জরুরি সেবা ৯৯৯ কল এর মাধ্যমে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ সংবাদ পায় যে, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন সাবান ফ্যাক্টরি রোডের পাশে একটি শুকনো খাদের মধ্যে একজন নারীর শরীরে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশের একটি মোবাইল টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় অগ্নিদগ্ধ নারীকে উদ্ধার করে প্রথমে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিডফোর্ড হাসপাতাল) ও পরে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। অগ্নিদগ্ধ নারীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানা যায় তিনি একজন বাক প্রতিবন্ধী। তখন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ সিআইডির ক্রাইমসিনের মাধ্যমে বাক প্রতিবন্ধি নারীর ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে তার নাম-পরিচয় শনাক্ত করে। পুলিশ সেই রাতেই ভিকটিম লতা সরকারের কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন কলাতিয়ায় অবস্থিত তার পরিবারকে উক্ত ঘটনার সংবাদ দেয়। ভিকটিম লতার ভাইয়েরা জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যা হতে লতা নিখোঁজ ছিলেন। পরবর্তীতে ভিকটিম লতা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮ টায় মারা যান। পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে চৌকস টিম মামলার পাঁচদিন পর ২ ডিসেম্বর মুল আসামী সুজন মিয়াকে শশুর বাড়ি পটুয়াখালী কলাপাড়া গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, নিহত বাকপ্রতিবন্ধী লতা সরকার ও আসামী সুজন মিয়া কেরানীগঞ্জ মডেল থানার কলাতিয়া ইউনিয়নে একই গ্রামে বসবাস করতেন। লতা সরকার একটি বালুর গদিতে কাজ করতেন। সুজন ইশারায় ইঙ্গিতে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে রাজি হন ওই নারী। ঘটনার দিন বিকেল বেলায় সুজন বালির গদির খাটে লতার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন। তারপর লতা সুজনকে বিয়ের জন্য জোর-জবরদস্তি করতে থাকেন। সুজন তখন লতাকে কাপড়-চোপড় নিয়ে রাতে বাড়ির পাশে গাব গাছ তলায় অপেক্ষা করতে বলেন। লতা চলে গেলে সুজন লতাকে দূরে কোনো নির্জন জায়গায় নিয়ে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন।

তিনি আরও বলেন, ভিকটিম লতা সরকারের সঙ্গে হত্যার আগেও শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন ঘাতক সুজন।  

লতাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলে আটি বাজার এলাকাসহ বেশ কিছু স্থানে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শেষে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা শুভাঢ্যা সাবান ফেক্টরি এলাকায় এনে হত্যা করতে রাস্তার পাশে একটি শুকনো খাদে ফেলে দেন। লতা চিৎকার করলে সুজন তার গলা টিপে ধরে পাশেই পড়ে থাকা জমাট পড়া সিমেন্টের বস্তার ওপর মাথা রেখে ইট দিয়ে পিটিয়ে মাথা থেতলে দেন। পরে খাদের লতা সরকারের ব্যাগে থাকা কাপড় দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় লতা সরকারের শরীরের ৬৫ শতাংশ পুড়ে যায়। মৃত্যুর আগে লতা সরকার হাতে ইশারায় ঘটনার বর্ণনা দেন পুলিশকে। এরপর ২৯ নভেম্বর ভিকটিম লতা সরকার মারা যান।  

এ সময় সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ তদন্ত) আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মোবাশিশরা হাবিবা খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ হিল কাফি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেরানীগঞ্জ (সার্কেল) শাহাবুদ্দিন কবির ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ শাহ জামানসহ কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২২
এসএফ/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।