ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘সরকারের নীতি-নির্ধারণী ও তৃণমূলের মাঝে দূরত্ব আছে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০২২
‘সরকারের নীতি-নির্ধারণী ও তৃণমূলের মাঝে দূরত্ব আছে’ এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘জাতীয় উন্নয়ন এবং স্থানীয় বাস্তবতা’ শীর্ষক জনশুনানি | ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: সিপিডির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, তৃণমূল ও সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের মধ্যে ফারাক বিদ্যমান। ফলে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ একই সমস্যা নিয়ে বারবার আওয়াজ তুললেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘জাতীয় উন্নয়ন এবং স্থানীয় বাস্তবতা’ শীর্ষক জনশুনানি অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

রেহমান সোবহান বলেন, আগেও বঙ্গবন্ধু আন্ততর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সারা দেশ থেকে মানুষ এসে নিজেদের নানা রকম সমস্যা ও কষ্টের কথা শুনিয়েছেন। এখানেও একই কথা বলা হচ্ছে। পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এখানে যে সব আওয়াজ ওঠে এবং সরকারের মন্ত্রণালয় থেকে যে প্রতিক্রিয়া করা হচ্ছে তার মধ্যে কোনো মিল নেই।

তিনি বলেন, তৃণমূল থেকে যে আলোচনা আসছে, মানুষ আওয়াজ দিচ্ছে। মন্ত্রণালয় পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, দেশ উন্নত হয়েছে। কিন্তু সমস্যাকে শনাক্ত করবে, সে ধরনের উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর যে সব তথ্য সরবারহ করছে, তার সাথেও তৃণমূলের আওয়াজের সঙ্গে মিল নেই।

বঙ্গবন্ধুর প্ল্যানিং কমিশনে কাজের স্মৃতিচারণ করে রেহমান সোবহান বলেন, আমার সৌভাগ্য হয়েছিল কর্মজীবনের শুরুতে ওনার প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য ছিলাম। সে সময়ে আমার ভালো স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা আছে। দেশ কয়েক বছরে অনেক উন্নতি করেছে, এটা অস্বীকার করা যাবে না। বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক দেশকে পিছিয়ে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন,  সন্তানের সমস্যা, আদিবাসীর সমস্যা, চা শ্রমিকের সমস্যা, তৈরি পোশাক শ্রমিকের সমস্যা, গত কয়েক বছরে ধরে একই সমস্যা চলে আসছে।

মূল সমস্যা কী, এত বছর পর এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না কেন, বছরের পর বছর একই সমস্যা থাকছে কেন, সমস্যার সমাধান হয়নি কেন-এমন সব প্রশ্ন করে তিনি বলেন, যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে আমাদের যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, স্বাক্ষরতার হার বাড়ছে, দারিদ্র্য কমছে। মাঠ পর্যায় থেকে মানুষ এ ধরনের আওয়াজ দিতে থাকলে আমাদের সব অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তৃণমূল জনমানুষের যে আওয়াজ তা সমাধানে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।



পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, জেলা পরিষদ ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সংলাপের আয়োজন করতে হবে। এ সব সংলাপে উঠে আসবে এসডিজি বাস্তবায়নে কোথায় ফারাক আছে, সেখানে থেকে প্রাপ্ত ফাইন্ডিংসগুলো চিহ্নিত করে মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় পর্যায়ের দূরত্ব কমানোর উদ্যোগ নিতে পারে। আদিবাসী মানুষ সেই কবে থেকে একই কথা বার বার বলছে। এক সময় আদিববাসী সংখ্যা অনেক ছিল। অবহেলা ও বৈষম্য নীতির কারণে এ সংখ্যা কমে গেছে। যারা আছে, তাদের সমস্যার সমাধান করতে হবে।

যেখানে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, মানুষের জন্য সরকারের খরচ হচ্ছে সেখানে সমস্যার সমাধান হওয়া জরুরি। তাদের জমির সমস্যা আছে, রেকর্ড হয় না। এর মূলে রয়েছে স্থানীয় মাস্তান। এই সব মাস্তান সমতল বা পাহাড়ের অধিবাসীদের জমি দখল করে আছে। যেখানে সরকারের প্রতিশ্রুতি আছে, যেখানে নীতি আছে, আইন আছে, সেখানে সমস্যার সমাধান না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন রেহমান সোবহান।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক রীতিনীতির চর্চা জোরদার করতে হবে। নির্বাচন প্রক্রিয়া এমন হতে হবে যেখানে ভয়ভীতিহীন, মুক্ত ও নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন হবে। কেউ যদি নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশিশক্তি ব্যবহার করে ক্ষমতায় আসে তাহলে জনগণের প্রতি তার কোনো দায়বদ্ধতা থাকবে না। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে জনগণকে তার ভয় থাকবে; জনগণের দাবি পূরণ না করলে পুনরায় নির্বাচিত হতে পারবে না। জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হলে টাকা খরচ করে ও অস্ত্র ব্যবহার করে সমস্যার সমাধান করে দেবে, এমন চিন্তা করবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২২
জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।