পাবনা (ঈশ্বরদী): নদী ড্রেজিং করে উত্তোলন করা সর্বোচ্চ দরদাতার বালুর দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু'পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
এতে যুবলীগকর্মী গুলিবিদ্ধসহ ৫ জন আহত হয়েছেন।
আহতদের মধ্যে যুবলীগের গুলিবিদ্ধ দুই কর্মী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অপর দুইজনকে স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পাকশী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শহীদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সংঘর্ষের সময় হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে পুলিশের একটি টিম ছিল। পুলিশ দ্রুত সংঘর্ষ থামিয়ে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের সময় গুলির শব্দ শোনা যায় এবং একটি জিপ গাড়ি, পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাকশী এলাকায় পদ্মা নদীর ড্রেজিং করে তোলা সরকারি বালুগুলো গত এপ্রিল মাসে বিআইডব্লিউটিএ থেকে ওপেন টেন্ডার হয়। যেখানে ঈশ্বরদীর ১৪ জন অংশ নেন।
৭৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা সর্বোচ্চ দরে ১ লাখ ঘনফুট বালু নেওয়ার অনুমতি পান পাকশী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুজ জামান পিন্টু। প্রতি ঘনফুট ৬১ টাকা হিসেবে সেই বালু কিনে নেন তিনি।
টেন্ডারে অংশ নিয়েছিলেন প্রস্তাবিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহুরুল হক মালিথা। তিনি বালু কিনতে না পারায় ক্ষুব্ধ হন। বালু কিনতে না পারা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পাকশী ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুজ জামান পিন্টুর সাথে তার বিরোধ দেখা দেয়।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) বালু উত্তোলন করা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তার আগে থেকে যুবলীগের দুই গ্রুপ সেখানে দুটি গ্রুপ সেখানে অবস্থান নেয় ।
এক গ্রুপে ছিল - পাবনা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, প্রয়াত ভূমিমন্ত্রীর ছেলে, ঈশ্বরদী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শিরহান শরীফ তমালের নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মীরা, এদিকে অপর গ্রুপে ছিল পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান বিশ্বাসের ছেলে, যুবনেতা তৌহিদুজ্জামন দোলনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা।
এদিন বিকালে পাকশী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ এসে যুবলীগের একটি গ্রুপকে চলে যেতে বললে জহুরুল মালিথার লোকজন বালু দখল নিতে প্রথমে গুলিবর্ষণ করে। এসময় প্রতিপক্ষ বাধা দিলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে লাঠি, পাথর ও ইটের আঘাতে চারজন আহত হন।
পাকশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ জামান পিন্টু বলেন বাংলানিউজকে বলেন, বিআইডব্লিউটি' থেকে টেন্ডারে আমি বালু কিনেছি। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল, বালু পরিবহন ও বিক্রিতে বাধা দেয় এবং চাঁদা দাবি করে। এজন্য তিন মাস বালু বিক্রি বন্ধ আছে। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ৩ ডিসেম্বর থেকে বালু বিক্রি শুরুর কথা ছিল। এরমধ্যে অপরপক্ষ বালু দখল নিতে আমাদের ওপর হামলা চালায়।
ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত সাংগঠনিক সম্পাদক জহুরুল হক মালিথা বাংলানিউজকে বলেন, বিআইডব্লিউটিএ থেকে কেনা বালু সাইফুজ্জামান পিন্টু অনেক আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন যে বালু আছে সেগুলো পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের। সেগুলো দখল করে বিক্রি করার জন্য পিন্টু সেখানে লোকজন জমায়েত করেন। আমাদের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশে খাওয়া ধাওয়ার আয়োজন করেছিল। সেখানে এই ঘটনা ঘটে।
পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, বীর-মুক্তিযোদ্ধা হবিবুল ইসলাম হব্বুল বলেন, বিষয়টি সুরাহা করতে দুপুরে আমিসহ পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। আমরা চলে আসার পর শুনতে পাই দুপক্ষের মারামারি হয়েছে।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বাংলানিউজকে বলেন, বালু ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরোধ ছিল। সবার সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সুরাহা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে গোলাগুলি ও হামলার ঘটনা ঘটে। তবে কোন অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০২২
এসএএইচ