ফেনী: এই শীত, এই খানিক গরম, শীতটা আসি আসি করেও যেন আসতে চাইছে না। এদিকে শীত আসুক আর না আসুক তাকে নিয়ে মানুষের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে তাপমাত্রা ধারাবাহিক ভাবে কমবে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে শীত বাড়তে পারে। শনিবার (১৭ ডিসিম্বের) দুপুর ২টার দিকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর সর্বনিম্ন ছিল ভোর ৬টায় ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শীতের আগমনে প্রস্ততি হিসেবে মোটা কাপড়ের বিক্রি বেড়েছে ফেনী শহরের বিপনী বিতান ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার (১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর) ফেনী শহরের বিভিন্ন এলাকায় গরমর কাপড়ের দোকানগুলো ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
শহরের রাজাঝির দিঘী পাড়ের ফুটপাতের দোকানগুলোতে দেখা গেছে নতুন-পুরাতন, আধা পুরাতন গরম কাপড়ের হাট বসেছে। সর্বনিম্ন ৭০ টাকা থেকে শুরু করে হাজার টাকায় এখানে মিলছে শীতের মোটা কাপড়। এসব দোকানে নিম্নআয়ের মানুষদেরই বেশি দেখা গেছে। এখানে সোয়েটার, চাদর, কম্বল, মোটা বিছানার চাদর থেকে শুরু করে সব ধরনের গরম কাপড় মিলছে। নারী-পুরুষ সবাইকেই দেখা গেছে এখানে কোনা কাটা করতে।
নুরুল আলম নামে এক ক্রেতা জানান, বড় মার্কেটের চাইতে এখানে কাপড় চোপড় অনেক সস্তা। তাই এখান থেকেই প্রতি বছর শীতের কাপড় কেনেন।
শ্রমজীবী কবির আহম্মদ বলেন, সাধ্যের মধ্যে এখানে সব পাওয়া যায়। মার্কেটে গেলে টাকায় কুলিয়ে ওঠা যায় না। সেখান থেকে নিলে সন্তান সন্ততি সবার জন্য কেনা সম্ভবও হয় না।
শফিক আহমেদ নামে এক বিক্রেতা বলেন, এখানে অনেক ধরনের পোশাক পাওয়া যায়। নতুন, পুরাতন, আধা পুরাতন সব ধরনের কাপড় এখানে সূলভ মূল্যে তারা বিক্রি করেন।
শহরের বড় বাজারের কম্বলের পাইকারি দোকানগুলোয় দেখা গেছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। এখানে ২শ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের কম্বল বিক্রি হচ্ছে। শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে গিয়ে দেখা যায় অনেকেই এসেছেন হতদরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য কম্বল কিনতে। কেউ কেউ এসেছেন পাইকারি কেনার জন্যও। আবার নিজের ব্যবহারের জন্যও কিনতে এসেছেন কেউ কেউ।
কবির আহম্মদ নামে এক ব্যবসায়ী জানান, শীত শুরু হয়েছে, মানুষ কম্বল ও গরম কাপড় কেনার জন্য আসতে শুরু করেছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী সপ্তাহে মধ্যে বিকি-কিনি আরও বাড়বে।
ফেনী শহরের গ্রান্ড হক টাওয়ারে গিয়ে দেখা যায়, দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়। তাদের বেশির ভাগ এসেছেন শীতের কাপড় কিনতে। পুরুষরা ব্লেজার, জ্যাকেট কিনতে এসেছেন। নারীদের অনেকেই এসেছেন সোয়েটার ও চাদর কিনতে। হালকা কাপড়ের চেয়ে মোটা কাপড়ের দিকেই ঝুঁকছেন তারা। বেচাবিক্রি বেশি হওয়ায় খুশি বিক্রেতারাও।
শহরের শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কের পাশের অভিজাত ব্র্যান্ড শপগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও বেড়েছে ক্রেতাদের ভিড়। বিক্রেতারা জানান, ব্লেজার, জ্যাকেট, সোয়েটার, কোটি, চাদরসহ তারা বিভিন্ন ধরনের শীতের পোশাক বিক্রি করছেন। গত কয়েক দিনে ক্রেতাদের সংখ্যা বেড়েছে।
এদিকে শহরের দর্জির দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায় ব্লেজারের সেলাইও বেড়েছে কয়েকগুণ। শীতে মানুষ নিজেকে কিছুটা কেতাদুরস্থ রাখতে চায়, সে কারণেই ব্লেজার পরেন তারা। শহরের শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কের পপি টেইলার্সের এক কর্মকর্তা জানান, শীত উপলক্ষে লোকজন ব্লেজার বানাতে আসছে তাদের প্রতিষ্ঠানে। গত ১ সপ্তাহে ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে।
এদিকে পাড়া-মহল্লার লেপ তোষক তৈরির দোকানগুলোতেও বেড়েছে মানুষের পদচারণা। শহরের দাউদপুর এলাকার কবির আহম্মদ এক দোকানি বলেন, শীতকালে এখনো কিছু মানুষ গায়ে লেপ মুড়িয়ে ঘুমাতে পছন্দ করেন। আর সে কারণেই শীত এলে লেপ তৈরি বেড়ে যায়। এছাড়া অনেকে তোষকও অর্ডার দিয়ে তৈরি করেনে।
তিনি বলেন সর্বনিম্ন ৬শ থেকে শুরু করে সর্বোচ্ছ ৭ হাজার টাকার মধ্যে এসব লেপ-তোষক তৈরি করেন তারা। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত ব্র্যান্ডশপ সব খানেই শীত কাপড়ের বিকি-কিনির ধুম পড়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২২
এসএইচডি/এমএমজেড