ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কয়লা সংকট, ভাটায় পুড়ছে কাঠ-লাকড়ি!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২২
কয়লা সংকট, ভাটায় পুড়ছে কাঠ-লাকড়ি!

ফরিদপুর: ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বৈধ লাইসেন্স না থাকা এবং কাঠ পোড়ানোর কারণে দুইটি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এ সময় ভাটায় বানিয়ে রাখা কাঁচা ইটও বিনষ্ট করা হয়েছে বলে দাবি করেন ভাটা মালিকরা।

রোববার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলার চতুল ইউনিয়নের পোয়াইল গ্রামে রাজ ব্রিকসে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ওই ইট ভাটার মালিক বোয়ালমারী পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুর শুকুর শেখ। তার বড় ছেলে শাহিনুজ্জামানের দাবি, ভাটার লাইসেন্স আপডেট থাকার পরও কোনো অগ্রিম নোটিশ বা ঘোষণা ছাড়াই পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের ভাটার চিমনি, ক্লীম ও কাঁচা ইট বিনষ্ট করেছে। এতে তাদের প্রায় ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জানা গেছে, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় রাজ ব্রিকস-১, রাজ ব্রিকস-২, মেসার্স রাজ ব্রিকস, মেসার্স গোল্ডেন ব্রিকস, মেসার্স বন্যা ব্রিকস, জুয়েল ব্রিকস, মেসার্স সফি ব্রিকস, মেসার্স জে কে এ ব্রিকস, মেসার্স বিউটি ব্রিকস, স্টার ব্রিকস ফিল্ড, মেসার্স ভাই ভাই ব্রিকস, মেসার্স এম এস আর ব্রিকস, মেসার্স কে এইচ এস ব্রিকস, মেসার্স বি এস কে ব্রিকস, এস এম এ ব্রিকস, এম এম এস ব্রিকসসহ বৈধ-অবৈধ ১৬টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে বি এস কে ব্রিকস ও এস এম এ ব্রিকস নামে দুইটি ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেছে।

এছাড়া বোয়ালমারীর পাশ্ববর্তী উপজেলা আলফাডাঙ্গায় এ আর বি ব্রিকস, মেসার্স তাকি ব্রিকস ও আলফাডাঙ্গা ব্রিকস নামে তিনটি ইটভাটা রয়েছে।

জ্বালানির সংকট ও উচ্চমূল্যের কারণে চলতি ভরা মৌসুমে এখনও উৎপাদনে যেতে পারেনি বেশিরভাগ ভাটাগুলো। কেউ ১৫দিন বা এক সপ্তাহ আগে থেকে ভাটায় আগুন দিয়েছেন। তবে যেসব ভাটা চালু হয়েছে সেগুলোতে জ্বালানি হিসেবে কয়লার সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ ও লাকড়ি। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি উজাড় হচ্ছে বাগানের গাছপালা। ইটভাটার মালিকদের দাবি, কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ ভাটায় কাঠ পোড়াতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

বোয়ালমারী উপজেলার কয়েকটি ইটভাটা ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা ইট তৈরি করে রাখা হয়েছে কিন্তু জ্বালানির অভাবে চালু হওয়া সব ভাটায় এখনও আগুন দেওয়া সম্ভব হয়নি। কোনো কোনো ভাটার সামনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে লাকড়ি। আর শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ইট তৈরি এবং রোদে শুকানোর কাজে। চালু থাকা ১৪টি ভাটার মধ্যে অন্তত ১১টি ভাটায় আগুন দেওয়া হয়েছে। এর সবগুলোতে কয়লার সঙ্গে কাঠ-লাকড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে। কয়েকটি ভাটায় দূরে গোপনে কাঠ-লাকড়ি ক্রয় করে রাখতে দেখা গেছে।

ভাটা মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর জ্বালানির অভাব ও উচ্চমূল্যের কারণে ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ ধীরে গতিতে চলছে। গত বছর যেখানে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায় এক টন কয়লা পাওয়া যেত, বর্তমানে সেটি কিনতে লাগছে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তারপারে আবার বাড়তি টাকা দিয়েও কয়লা পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া ডলার সংকটের কারণে এলসি করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার শ্রমিকদের প্রতিদিন মুজুরি এখন ৭০০-৮০০ টাকার বেশি দেওয়া লাগে। বিভিন্ন কারণে ইতোমধ্যে এ উপজেলার দুইটি ভাটা বন্ধ হয়ে গেছে।

আলফাডাঙ্গার এ আর ব্রিকসের ম্যানেজার জামিল আহমেদ জানান, এ বছর কয়লার দাম এত বেশি যে, তা দিয়ে ইটভাটা চালানো অসম্ভব হয়ে উঠেছে। আমার ইটভাটায় গত শুক্রবার আগুন দেওয়া হয়েছে। এখন কয়লার সঙ্গে কিছু কাঠ দিয়ে ইট পুড়ানো হচ্ছে। পরবর্তীতে আর কয়লা ছাড়া কাঠ পোড়ানো সম্ভব হবে না। আগামীতে ইটভাটা রাখবেন কিনা সেটা নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন তিনি।

বোয়ালমারী ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও মেসার্স রাজ ব্রিকসের মালিক শ্যামল সাহা বলেন, ইটের ব্যবসা আগের মতো নেই। এ উপজেলায় কয়েকটি ভাটায় ইতোমধ্যে ইট পোড়ানো শুরু হয়েছে। কিন্তু কয়লা সংকট ও দাম বেশি হওয়ার কারণে আমরা ভালোভাবে সেগুলো পোড়াতে পারছি না। নিয়মানুযায়ী ইট পোড়াতে গেলে যে টাকা খরচ হচ্ছে তাতে আসল টাকাও উঠবে না। অনেকেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ভাটা করেছেন। তাদের অবস্থা আরও খারাপের দিকে। কয়লার দাম সমন্বয় করে ইটের দাম ধরায় বাজারও কমে গেছে। তবে কিছু ইটভাটায় কয়লার সঙ্গে ভাটার মালিকরা কিছু লাকড়ি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন।

অভিযান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়ম বহিভুত পরিচালনা ছাড়া প্রশাসন কোনো ভাটায় অভিযান করেন না। এ উপজেলায় প্রশাসন যে ভাটাটি ভেঙ্গে দিয়েছে সেটা হয়তো আইনের বাইরে পরিচালনা হচ্ছিল।

ফরিদপুর জর্জ কোর্টের আইনজীবি পরিবেশ কর্মী অ্যাডভোকেট গাজী শাহিদুজ্জামান লিটন বলেন, কোনো কোনো ইটভাটায় কাঠ ব্যবহার এবং তিন ফসলি জমির মাটির উপরিভাগ (টব চয়েল) কেটেও ব্যবহার করার বিষয়টি জানতে পেরেছি। যা পরিবেশে মারাত্বক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এ বিষয়ে প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।

ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, সদর দপ্তরের বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নওরীন হকের নেতৃত্বে ফরিদপুর সদর, মধুখালী, বোয়ালমারী ও ভাংগা উপজেলায় ইতোমধ্যে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯) লঙ্ঘনের দায়ে ছয়টি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করে দুইটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া চারটি ভাটায় ১৫ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অভিযানে র‌্যাব, পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উপস্থিত ছিল। অবৈধ ভাটায় অভিযান অব্যহত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।