মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, অনেক দেশ বাংলাদেশে স্বল্পমূল্যে গরুর মাংস রপ্তানির প্রস্তাব দিচ্ছে। তবে মাংস আমদানি করলে দেশের খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাই সরকার এ বিষয়ে অত্যন্ত সতর্কভাবে অগ্রসর হচ্ছে।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সাভারে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, আমরা কেন মাংস আমদানি করব? বরং দেশেই উৎপাদন খরচ কমিয়ে নিজেদের চাহিদা পূরণের পথে এগোতে হবে। মাংস আমদানি করে আমরা কখনোই দেশের ক্ষতি করতে চাই না। তাই আমদানি নয়, উৎপাদন ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে আমরা মাংস ও ডিমের দাম কমানোর দিকে কাজ করব।
তিনি আরও বলেন, গবেষণার বাজেট ৫ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে— যা দেশের জন্য বড় ক্ষতি। গবেষণায় পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকলে নতুন উদ্ভাবন ও উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। গবেষণার ফলাফল শুধু ইনস্টিটিউট পর্যায়েই সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না; প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এনজিওগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে হবে, যাতে গবেষণার সুফল মাঠপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া যায়।
মানুষ ও প্রাণীর স্বাস্থ্য সম্পর্ক বিষয়ে তিনি বলেন, যে রোগ প্রাণীর হয়, তা মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে— আবার মানুষের রোগও প্রাণীর মধ্যে ছড়াতে পারে। তাই ‘ওয়ান হেলথ’ ধারণাকে গুরুত্বের সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি প্রাণীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আরও গভীর গবেষণা প্রয়োজন। দেশীয় জাতসমূহের সংরক্ষণ ও উন্নয়নেও আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরে ফরিদা আখতার বলেন, প্রাণিসম্পদ খাতে গবেষণার পরিধি বাড়াতে হবে। উন্নত দেশগুলো নিজেদের গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে না এনে উল্টো উন্নয়নশীল দেশগুলোর গবাদিপশুর ওপর দায় চাপাচ্ছে— এটি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। উন্নত দেশগুলো গাড়িতে জ্বালানি পুড়িয়ে পরিবেশের ক্ষতি করছে, অথচ আমাদের গবাদিপশুকে তারা গ্রিনহাউজ গ্যাস বৃদ্ধির জন্য দায়ী করছে।
অনুষ্ঠানে বিএলআরআই’র মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মোহাম্মদ জাবের।
তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ খাতে কাজের যে বিশাল ক্ষেত্র রয়েছে, তা আমরা অনেক সময় উপলব্ধি করি না। প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে দুটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে—একটি হলো প্রাণীর সুস্থতা, অন্যটি হলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। নিয়মিত প্রাণীর ভ্যাকসিনেশন নিশ্চিত করতে হবে। খামার পর্যায়ে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রাণী অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন সেটি জবাই করে ফেলা হয়, আর সেই মাংস খেয়ে মানুষও অসুস্থ হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রাণীর জন্য নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। প্রাণীর খাবারের দাম বাড়ার কারণে পণ্যের দামও বাড়ছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে কেন দাম বেশি, তারা খাদ্য হিসেবে কী ব্যবহার করছে— এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন। পাশাপাশি দেশীয় প্রাণীর সংরক্ষণ ও মানোন্নয়নেও কাজ করা জরুরি। গবেষণার প্রভাব ও ফলাফল যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করতে না পারার কারণেই গবেষণায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো যাচ্ছে না। তাই এ বিষয়ে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।
কর্মশালায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ানও বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, খামারি, উদ্যোক্তা, গবেষক ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এসকে/এমজে