পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ে মিছিলে পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক ৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যেখানে ৮১ জনের নাম উল্লেখ করে প্রায় ১২শ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
তবে মামলার আগেই শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে ঘটনার পর রাতেই বিশেষ অভিযান চালিয়ে জেলার পাঁচ উপজেলা থেকে বিএনপি ও জামায়াতের ওই ৮ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।
পরে নাশকতা সৃষ্টিসহ পুলিশের উপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা, ককটেল বিস্ফোরণ হামলার অভিযোগে শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) গভীর রাতে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।
রোববার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে পঞ্চগড় পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম সিরাজুল হুদা মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন,পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যভিত্তিতে ৮১ জনের নাম উল্লেখ করে ও ১১শ থেকে ১২শ জনকে অজ্ঞাত রেখে ৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৮জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই মামলায় কোনো নির্দোষ গ্রেফতার হবেন না।
এর আগে শনিবার বিকেলে পঞ্চগড় শহরে পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষ বাধলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। প্রায় আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় পর পুরো এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় পুলিশ-বিএনপির অর্ধশত কর্মী আহত হয়।
এ ঘটনায় আব্দুর রশিদ আরেফিন নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি তুলেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। নিহত আরেফিন ময়দানদীঘি ইউনিয়নের সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক। তার বাড়ি চন্দনপাড়া গ্রামে।
তবে পুলিশ বলছে সংঘর্ষের ঘটনায় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়নি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, শনিবারে গণমিছিলে আরেফিন সক্রিয় অংশ নেয়। পুলিশের অতর্কিত লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেলের আঘাতে তিনি গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক সহকর্মীরা আরেফিনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
ফরহাদ হোসেন আরও বলেন, পুলিশ আমাদের গণমিছিলের উপর হামলা চালায়। উল্টো পুলিশ গভীর রাতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের আটক করছে। কতিপয় অতি উৎসাহিত পুলিশ পঞ্চগড়ের পরিবেশ নষ্ট করল। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
পঞ্চগড় পুলিশ সুপার (এসপি) সিরাজুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, গণমিছিলের নামে বিএনপির নেতাকর্মীরা নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। বাধা দিতে গিলে তারা পুলিশের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশ-বিএনপি কর্মীদের মাঝে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে ১০ থেকে ১২ জন পুলিশ ও বিএনপির ২০ থেকে ২৫জন কর্মী আহত হয়।
বিএনপিকর্মীর মৃত্যুর বিষয়ে এসপি বলেন, আব্দুর রশিদ আরেফিন নামে যে ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে তার হার্টের তিনটি বাইপাস সার্জারি করা ছিল। পুলিশের গুলিতে নয়, স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে তার। ময়নাতদন্ত শেষে সিভিল সার্জন জানিয়েছে স্ট্রোক করে মারা গেছেন তিনি। একটি বিশৃঙ্খলা পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বিষয়টিকে অন্যভাবে নেওয়া হয়েছে।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রোববার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে আব্দুর রশিদ আরেফিনের পরিবারের সদস্যদের কাছে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২২
এসএএইচ