ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

১০ বছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি দ্বিগুণের বেশি, পাট নেমেছে অর্ধেকে

জাফর আহমদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২৩
১০ বছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি দ্বিগুণের বেশি, পাট নেমেছে অর্ধেকে

ঢাকা: সরকারের বিভিন্ন রকম সুবিধা, প্রণোদনা, উদ্যমী উদ্যোক্তা আর সস্তা শ্রমে গত ১০ বছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি দ্বিগুণ ছাড়িয়েছে গেছে। অন্যদিকে অব্যাহত অবহেলা ও বাজার সংকুচিত হওয়ায় পাট রপ্তানি আয় অর্ধেকে নেমেছে।

দেশের এক সময়ের প্রধান রপ্তানি পণ্য সোনালী আঁশ ও পাটজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় মোট আয়ের অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের দুই প্রান্তিকে (জুলাই-ডিসেম্বর) তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে হয়েছে ২২ দশমিক ৯৯৭ বিলিয়ন ডলারের। যা ছয় মাসের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ২০ শতাংশ। ছয় মাসে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ২৭ দশমিক ৩১১ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে মোট রপ্তানি আয়ের ১ দশমিক ৮০ শতাংশ, বা ৪৯৬ মিলিয়ন ডলার।

দশ বছর আগে ২০১২-১৩ অর্থ বছরের জুলাই-জুন ছয় মাসে রপ্তানি আয়ে তৈরি পোশাক ছিল ৭৯ শতাংশ বা ৯ দশমিক ৯৪৭ বিলিয়ন ডলার। এ সময়ে মোট রপ্তানি আয় ছিল ১২ দশমিক ৬০০ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি আয় হয়েছিল ৫০২ মিলিয়ন ডলারের। যা মোট রপ্তানি আয়ে ৪ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হিসাবে পাটে প্রকৃত রপ্তানি আরও কম।

এক দশক সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি কমার পাশাপাশি মোট রপ্তানি আয়ে পাটের অংশও অর্ধেক নেমে এসেছে। একই ভাবে প্রতি বছরই তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তথ্য বলে, ২০২১-১২ অর্থবছরে মোট ৫২ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৪২ দশমিক ৬১৩ বিলিয়ন ডলার ছিল তৈরি পোশাক। আর পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি ছিল ১ দশমিক ১২৮ বিলিয়ন ডলারের। দশ বছর আগে ২০১১-১২ অর্থবছরে ২৪ দশমিক ৩০২ বিলিয়ন ডলার মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে তৈরি পোশাক ছিল ১৯ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। একই বছরে পাট ও পাটজাত পণ্য হয়েছিল ৯৬৭ বিলিয়ন ডলারের।

প্লাস্টিক ও কৃত্রিম আঁশ জাত পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, দাম তুলনামূলক কম হওয়া ও দেশে পাটজাত পণ্য তৈরিতে বৈচিত্র্য আনা সম্ভব না হওয়ার কারণে বৈশ্বিক বাজারে পাটের চাহিদা হারায়। এ ছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্য বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনি। এর ফলে পাটও তার ঐতিহ্য হারাতে থাকে।

অন্যদিকে তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের অদম্য মানসিকতা ও দক্ষতা, সস্তা শ্রম ও রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পৃষ্ঠপোষকতার কারণে প্রতি বছরেই তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। এর ফলে তৈরি পোশাক দেশের বৈদেশিক বড় বৈদেশিক আয়ের খাতে পরিণত হয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্প এ খাতে কর্মসংস্থানও হয়েছে বেশি সংখ্যক মানুষের। পল্লী ও শহরের দারিদ্রপ্রবণ এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের বড় খাতে পরিণত হয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প। যে নারী পরিবারের বোঝা হতো, সেই নারী এখন বৈদেশিক আয়ের অন্যতম হাতে পরিণত হয়েছে। শহর থেকে পল্লী অঞ্চলে অর্থ পাঠানোর গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। যা পল্লী অঞ্চলের ক্ষয় ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।

তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের একাগ্রতা ও আধুনিক মানসিকতা এ খাতের উত্তরোত্তর অগ্রগতি হচ্ছে বলে মনে করেন নিট তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) কার্যনির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তৈরি পোশাক উৎপাদন রপ্তানির সাথে জড়িত সবাই নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে নিবেদিত। ব্যবসা শুরু করেছে মানে, এ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। প্রতিষ্ঠিত হতে হলে কোথায় কী করতে হবে, তা খুঁজে বের করেছে। তৈরি পোশাকের বাজারে যারা কম্পিটেটর তাদের পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে সে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।

তিনি বলেন, সরকারের নীতি সহায়তা তৈরি পোশাক শিল্পের এগিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তৈরি পোশাক শিল্পে একেকটি বাধা সামনে এগিয়ে যেতে সাহস জুগিয়েছে। পোশাক শিল্পে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কোটা সুবিধা উঠে যাওয়া ও রানা প্লাজা ধসের ফলে যে ক্রাইসিস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলার পথ তৈরি করতে গিয়ে এগিয়ে গেছে এ শিল্প এগিয়ে যাওয়ার শক্তি জুগিয়েছে।

সকল সরকার অব্যাহত অবহেলার মাধ্যমে পাট শিল্পকে ধ্বংস করেছে বলে মনে করেন পাট শিল্প রক্ষা আধুনিকায়ন আন্দোলনের অন্যতম নেতা, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি) সভাপতি শহিদুল্লাহ চৌধুরী। প্রবীণ এ শ্রমিক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, এক সময়ে পাট রপ্তানি হতো ১২ লাখ বেল। এখন তা নেমে এসেছে ৪ লাখ বেলে। আধুনিকায়ন না করে বেসরকারি করার নামে পাটকলগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এর ফলে একদিকে দেশের ঐতিহ্যের সাথে ওতপ্রোত সম্পর্কের পাট থেকে রপ্তানি আয় কমেছে, কর্মসংস্থান কমেছে, অর্থকরী ফসল হিসাবে পাটের উৎপাদন কমেছে এবং সর্বোপরি পরিবেশকে ধ্বংস করা হয়েছে। একই সময়ে ভারতে পাটের উৎপাদন বেড়েছে, তিনি যোগ করেন।

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের মতো অন্য আরও পাঁচটি শিল্প এগিয়ে যেতে পারে। পাট, চামড়া শিল্প, হিমায়িত চিংড়ি, আউট সোর্সিং, কৃষিজাত পণ্য ও সেবা রপ্তানি বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। এ জন্য সরকারের নীতি সহায়তার পাশাপাশি পাট শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের আরও বেশি মনোযোগের প্রয়োজন। বিশেষ করে পাট শিল্পকে এগিয়ে যেতে আধুনিকায়ন ও গবেষণায় মনোযোগ দিতে হবে। প্রতিবেশী দেশ ভারত অ্যান্টি ডাম্পিং করে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্য বাজারে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। আবার তারাই বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট আমদানি করে। আমরা পাট উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে, পাটের ঐতিহ্যধারক দেশ হওয়ার পরও পিছিয়ে পড়েছি। এ সব বিষয় মাথায় রেখেই পাট শিল্পকে নিয়ে ভাবতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২৩
জেএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।