ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দক্ষিণ আফ্রিকায় নিহত ৫ বাংলাদেশি

সন্তানের লাশের জন্য বাবা-মায়ের অপেক্ষা-আহাজারি

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩
সন্তানের লাশের জন্য বাবা-মায়ের অপেক্ষা-আহাজারি

ফেনী: দক্ষিণ আফ্রিকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের বাড়ি ফেনীতে চলছে স্বজনদের আহাজারি। সন্তানদের মরদেহের জন্য অপেক্ষারত স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে আকাশ-বাতাস।

সরকারের কাছে স্বজনদের একটাই চাওয়া, লাশটা যেন দ্রুত আসে। জীবিত সন্তানকে না পেলেও মরদেহটা নিজেদের কাছে এনে কবরস্থ করতে চায় স্বজনহারা মানুষগুলো।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ৬টার দিকে দেশটির জোহানেসবার্গ থেকে কেপটাউনে যাওয়ার পথে বাফেলো এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই পাঁচজন নিহত হন। আহত আরও দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।  

দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- ফেনী সদর উপজেলার বিরলী গ্রামের ইসমাইল হোসেন, দাগনভূঞা উপজেলার মোমারিজপুর গ্রামের দীন মোহাম্মদ রাজু ও দক্ষিণ নেয়াজপুর গ্রামের মোস্তফা কামাল নোফেল, সোনাগাজী উপজেলার দক্ষিণ চর মজলিশপুর গ্রামের আবুল হোসেন ও তার ছেলে নাদিম হোসেন। সবার বাড়িতে গিয়ে দেখা মিলল স্বজনের আহাজারি।  

পরিবারগুলো জানিয়েছে, ভাগ্য বদলের আশায় দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে এখন তাদের দেশে ফিরতে হচ্ছে লাশ হয়ে। মরদেহ দ্রুত ফেরত আনতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।

শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে জেলার সোনাগাজী উপজেলার দক্ষিণ চর মজলিশপুর গ্রামের নিহত আবুল হোসেন ও ছেলে নাদিম হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকাবহ চিত্র। সন্তানের জন্য অঝোরে চোখের পানি ফেলছেন মা-বাবা। স্বজনেরা চান, সরকারি ব্যবস্থায় দ্রুত যেন মরদেহ দেশে আনা হয়।

আমার মানিকের সুখের জন্য জীবনের ৩৭টি বছর প্রবাসে কাটাইলাম, কখনো কষ্ট দেই নাই। এমনসব কথা বলে বিলাপ করছেন আবুল হোসেনের পিতা জামাল উদ্দিন ও মাতা জান্নাতুল ফেরদৌস।

তাদের আহাজারি থামাতে ঘরের মধ্যে ভিড় করছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। সবার চোখের কোনে জল। কেউ যেন তাদের বিলাপ আর কান্না থামাতে পারছেন না।

ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের বিরলী গ্রামের ইসমাইল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনেরা আপনজন হারানোর শোকে কাতর। নিহতের বাবা শরীয়ত উল্লাহ বলেন, আমার ছেলে অবিবাহিত। দুই মাস পরেই দেশে আসার কথা ছিল। তাকে বিয়ে করানোর প্রস্তুতিও চলছিল। সে ১১ বছর ধরে আফ্রিকায়। ছেলের লাশ দ্রুত ফেরত আনতে সরকারের কাছে দাবি জানাই।

দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঁঞা ইউনিয়নের মোমারিজপুর গ্রামের আবদুল মন্নান মিলনের ছেলে মোস্তফা। কয়েক বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় যান তিনি। কিন্তু এখন তার মৃত্যুতে বয়স্ক মা-বাবাকে দেখভাল ও সংসারের হাল ধরার মতো আর কেউই থাকলো না। মোস্তফার স্বজনরাও লাশ ফেরত আনতে সরকারের কাছে একই আবেদন জানিয়েছেন।

কথা হয় একই উপজেলার জয়লস্কর ইউনিয়নের দক্ষিণ নেয়াজপুর গ্রামের হকু মিঞার পরিবারের সঙ্গে। তার ছেলে মোস্তফা কামাল নোফেল কয়েক বছর আগে বেশ কয়েক লাখ টাকা খরচ করে আফ্রিকায় যান। এখন ছেলের মৃত্যু সংবাদে হকু মিঞাসহ ভেঙে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। নোপেলের ছোট দুই বোন ভাই হারানোর শোকে কাতর। লাশ যেন দ্রুত দেশে পাঠানো হয়, সরকারের কাছে সেই আবেদন জানান তারা।

এ বিষয়ে ফেনী জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু সেলিম মাহমুদ-উল-হাসান বলেন, আমরা দূতাবাসে যোগাযোগ রাখছি। মরদেহ ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। আশা রাখছি স্বজনরা দ্রুত মরদেহ পাবেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩
এসএইচডি/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।