ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রতিশ্রুতি রাখেননি জনপ্রতিনিধিরা, রাস্তা নিজেরাই তৈরি করছেন গ্রামবাসী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৩
প্রতিশ্রুতি রাখেননি জনপ্রতিনিধিরা, রাস্তা নিজেরাই তৈরি করছেন গ্রামবাসী

সিরাজগঞ্জ: একের পর এক জনপ্রতিনিধি এসে শুধু কথাই দিয়ে গেছেন, কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতিই রাখেননি তারা। তাদের আশ্বাসে গত পঞ্চাশ বছর ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষার প্রহর গুণে পায়ে হাঁটার রাস্তাও পায়নি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পাঁচ গ্রামের অন্তত ১০ হাজার মানুষ।

 

অবশেষে নিজেরাই চাঁদা তুলে শ্রম দিয়ে নিজেদের সেই রাস্তা তৈরি করছেন গ্রামবাসী। চলাচলের দুর্ভোগ থেকে গ্রামবাসীকে মুক্তি দিতে আল মাহমুদ নামে স্থানীয় একজন প্রকৌশলী উদ্যোগ নেন। তার নেতৃত্বে গ্রামবাসীর আর্থিক সহায়তা ও শ্রমে ১২ ফুট প্রশস্তের দেড় কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণকাজ চলছে এখন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের চর বেলতৈল থেকে জালালপুর ইউনিয়নের মূলকান্দী মোল্লাপাড়া পর্যন্ত একটি কাঁচা রাস্তার জন্য বছরে পর বছর দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এ মানুষগুলো। এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে বেলতৈল, মূলকান্দী মোল্লা পাড়াগ্রাম, টোকপাড়া, গাবের পাড়া, চৌবাড়ীয়া গ্রামের মানুষ।  

এ বিষয়ে চচর বেলতৈল গ্রামের বৃদ্ধ ফটিক খাঁ, মধু মিয়া ও আলতাফ মোল্লাসহ অনেকেই বলেন, বর্ষাকালে এসব গ্রামের মানুষ নৌকায় চলাচল করলেও শুষ্ক মৌসুমে হেঁটে যাবারও পথ নেই। শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যেতে নিত্যদিন কষ্ট পেতে হয়। কৃষিপণ্য হাঁট-বাজারে সরবরাহ ও শহর থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনার ভোগান্তি ছিল সীমাহীন। সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া। ইতোপূর্বে অনেক নেতা, জনপ্রতিনিধি বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও রাস্তা নির্মাণ হয়নি।

গ্রামবাসী আরও বলেন, সম্প্রতি অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূকে সন্তান প্রসবের জন্য কোলে করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে পা পিছলে পড়ে যান এবং সাথে সাথেই সন্তান প্রসব হয়ে মারা যায়। গৃহবধূ এখনও রয়েছেন চিকিৎসাধীন। এ দুর্ঘটনার খবরে স্থানীয় সমাজকর্মী ইঞ্জিনিয়ার আল মাহমুদকে নাড়া দেয়। তিনি রাস্তার জন্য ছুটে যান সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে।

কিন্তু তাৎক্ষণিক সরকারি সহায়তায় রাস্তা নির্মাণ সম্ভব নয় জেনে গ্রামবাসীর চাঁদা ও শ্রমেই রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক শেষে গ্রামবাসীকে সংগঠিত করেন  শুরু হয় ১২ ফিট প্রশস্তের প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ কাজ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে. দুই সপ্তাহ ধরে ভেকু মেশিনে পাশের সরু খাল থেকে মাটি তুলে সড়ক নির্মাণকাজ চলছে।

সমাজকর্মী ইঞ্জিনিয়ার আল মাহমুদ জানান, বছরখানেক আগেও তার নিজ গ্রামেও চলার কোন পথ ছিলো না। ওই সময় তার বাবা অসুস্থ হলে সময় মতো হাসপাতালে নিতে পারেননি। তার বাবা মারা যায়। সম্প্রতি রাস্তা না থাকায় কোলে করে হাসপাতালে নেওয়ার দুর্ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূর সন্তান মারা যায়। এ দুর্ঘটনা আমাকে পীড়া দিয়েছে। বাবার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। তাই গ্রামবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে তাদের টাকা দিয়েই রাস্তা নির্মাণ করছি।

বেলতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রামবাসী উদ্যোগে রাস্তাটি তৈরি হচ্ছে। তাদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। ওই রাস্তার উপর প্রকল্প দিয়ে আরও সুন্দর করা এবং পরবর্তীতে পাকাকরণের চেষ্টা করব।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৩
এসএএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।