ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শতকোটি টাকা আত্মসাতে আ. লীগ নেতা গ্রেফতার, এলাকায় মিষ্টি বিতরণ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
শতকোটি টাকা আত্মসাতে আ. লীগ নেতা গ্রেফতার, এলাকায় মিষ্টি বিতরণ গ্রেফতার আওয়ামী লীগ নেতা হারুন প্রধান

পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ে বেক্সিমকোর প্রায় শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা হারুন প্রধানকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

শনিবার (২৫ মার্চ) দুপুরে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী।

গ্রেফতার হারুন অর রশিদ প্রধান জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের সাতমেড়া বাসামোড় এলাকার মৃত গফুর উদ্দীন প্রধানের ছেলে।

জানা যায়, চলমান বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় দেশ ও জনগণের কল্যাণে দেশের বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক এবং বেক্সিমকো পাওয়ার লিমিটেড ও বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিশিষ্ট শিল্পপতি ওসমান কায়সার চৌধুরীর নেতৃত্বে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দুটি প্রজেক্টের মাধ্যমে ৩০ মেগাওয়াট এবং ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দুইটি সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে স্থানীয় আ.লীগ নেতা হারুনুর রশিদ প্রধানের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণ শুরু করেন। এক পর্যায়ে প্রায় তিন বছর অতিক্রম করলে বেক্সিমকোর পক্ষে ক্রয়কৃত জমি বুঝে চাইলে নানা টালবাহানার মাধ্যমে ভুয়ো দলিল দিয়ে কালক্ষেপণ করে। এ দুইটি প্রকল্পের জন্যে প্রায় শতকোটি টাকা আত্নসাৎ করে হারুন প্রধান ও তার সহযোগীরা। বেক্সিমকো লিমিটেড তাদের কোম্পানির সঙ্গে প্রতারণা ও টাকা উদ্ধারে প্রাথমিক পর্যায়ে একটি প্রজেক্টের পক্ষে ঢাকায় ধানমন্ডি থানায় ১১ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে।

দুটি প্রজেক্টের মধ্যে প্রথম মামলায় একটি প্রজেক্টে বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ৪৬ কোটি ৩৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা আত্নসাৎ করার মামলার দ্বিতীয় আসামি হারুন অর রশিদ প্রধান ওরফে হারুন প্রধানকে পঞ্চগড় থেকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ।

এর আগে গত ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর ঢাকার ধানমন্ডি মডেল থানায় বাবর মিয়াকে (৬০) প্রধান ও হারুন অর রশিদ প্রধানকে (৫৫) দ্বিতীয় করে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করে বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার আল মামুন। এর পর মামলার দ্বিতীয় আসামিসহ সবাই আত্মগোপনে চলে যান। মামলার পর দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকলে পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচলানা করে। এর মধ্যে মামলার দ্বিতীয় আসামি হারুন প্রধানকে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সন্ধায় ঢাকার ডিবি পুলিশ পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়ন থেকে গ্রেফতার করে।

একটি মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, হারুন প্রধানসহ অপর অভিযুক্তরা ১১৫ একর ২৪ শতাংশ জমি বিভিন্ন ভুয়া ও জাল দলিলের মাধ্যমে কোম্পানির নামে ক্রয়ের কথা বলে ওসমান কায়সার চৌধুরী এবং বিভিন্ন মানুষের নামে ১১৪টি ভুয়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি এবং করতোয়া সোলার লিমিটেডের নামে ৩১টি ভুয়া সাব-কবলা দলিলের রেজিস্ট্রি দেখিয়ে, ১৬ একর জমি কোম্পানিকে বুঝিয়ে দেয়। প্রতারণামূলকভাবে তারা তাদের নামে-বেনামে এবং তাদের বিভিন্ন কোম্পানি ও ফার্মের নামে বাদীর সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে ৪৬ কোটি ৩৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করে। অপর আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে দ্বিতীয় প্রকল্পের জন্যে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার আর্থিক বিনিয়োগ বিদেশ থেকে হওয়ায় আন্তর্জাতিক আইনি জটিলতার জন্য এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের নিকট বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় সরাসরি দ্বিতীয় প্রকল্পের নামে কোনো প্রকার মামলা করা সম্ভব হয়নি। তবে বিদেশি প্রকল্পের পক্ষে বেক্সিমকো আলাদা মামলা করার কথা ভাবছে। সে প্রকল্পের স্বার্থে স্থানীয় প্রতারক হারুন প্রধানসহ তার সহযোগী, দলবল ও ভুয়া দলিল তৈরি, রেজিস্ট্রি কাজে জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মোট ১৯২টি মামলার প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি মামলা করা হয়েছে। বাকি ১৯১টি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

আরও জানা যায়, স্থানীয়দের পক্ষে ভয়-ভীতি, জবর দখল, ভুমি প্রতারণার অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয়দের একটি মামলা হয়েছে।

এদিকে হারুন প্রধানকে গ্রেফতারের খবরে মিষ্টি বিতরণ করেছে তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের মাগুরমাড়ি চৌরাস্তা এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ। হারুন প্রধান নিজেকে ওসির ভাই ও আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে এলাকায় বিভিন্নজনের পৈতৃক ভূমি জবর দখল করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তার এমন কাজে ছোট ভাই ওসি হাসিনুর প্রধান তাকে সব সময় সাহস দিয়ে আসতো বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তারুল হক মুকু বাংলানিউজকে বলেন, কোম্পানির জন্য জমি ক্রয় করে দেওয়ার নামে দীর্ঘদিন ধরে বেক্সিমকো কোম্পানির টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল হারুন প্রধান। তার হাত থেকে স্থানীয়রাও রক্ষা পায়নি। তার অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল। তার গ্রেফতারের খবরে তাই স্থানীয়রা মিলে আনন্দে মিষ্টি মুখ করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।