ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া পাস হলে তা হবে ‘কালো আইন’: টিআইবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২৩
সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া পাস হলে তা হবে ‘কালো আইন’: টিআইবি

ঢাকা: মত প্রকাশ ও স্বাধীন সাংবাদিকতা ঝুঁকির মুখেই থেকে যাওয়ায় মন্ত্রিসভা অনুমোদিত সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রত্যাখ্যান করল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।  

সংস্থাটি মনে করছে খসড়াটি আইনে পরিণত হলে, ডিজিটাল মাধ্যমে মত ও তথ্য প্রকাশ করলে ব্যক্তি আইনি হেনস্তার শিকার হবেন।

আর এটি হবে কালো আইন।

বুধবার (৩০ আগস্ট) টিআইবির ধানমণ্ডির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অবস্থানের কথা তুলে ধরে সংস্থাটি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যেভাবে কালো আইন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল, সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়াটি পাস হলে সেটিও কালো আইন হবে।

তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কিছু পরিবর্তন এনে শাস্তি বাড়ানো-কমানোর নামে শুধু খোলস পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু মূল বিষয়বস্তু অপরিবর্তিত রয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাইবার সিস্টেমকে নিরাপদ না করে সাইবার সিস্টেম ব্যবহার করে মতপ্রকাশ, তথ্যপ্রকাশ, চিন্তার প্রকাশের জায়গায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আইনের মূল উদ্দেশ্য ও বিষয়বস্তু যদি হয় সাইবার নিরাপত্তা, সেখানে মানুষের মত প্রকাশ, বাক ও চিন্তার স্বাধীনতা খর্ব করে, এমন উপাদান থাকার সুযোগ নেই। যদি ডিজিটাল মাধ্যমে মত বা তথ্য প্রকাশের কারণে কারো মানহানি হয় বা যদি প্রতারণা, জালিয়াতি ও অর্থ পাচার ইত্যাদি অপরাধ সংঘটিত হয়, তার জন্য প্রচলিত আইনে বিচারের ব্যবস্থা রয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনে এর বিচার করার পেছনে কোনো গ্রহণযোগ্য যুক্তি আছে বলে আমরা মনে করি না।  

সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমসহ সকল অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে আর্ন্তজাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে খসড়া আইনটি ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মন্জুর-ই-আলম এ সংক্রান্ত উপস্থাপনা তুলে ধরেন।  

এতে বলা হয়- প্রস্তাবিত আইনের ধারা ৮, ৯, ১০, ও ১১- অনুযায়ী সাইবার নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ডেটা বা ইনফর্মেশন দুটোই অপসারণ করার জন্য বিটিআরসিকে বলবেন।  ৮(২) ধারায় বলা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করলে কোনো তথ্য উপাত্ত দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ কিংবা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ন করে বা জাতিগত বিদ্বেষ বা ঘৃণা সঞ্চার করে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পদক্ষেপ নিতে পারবে। এসব বিষয়ের কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা এই আইনে নেই, তাই এখানে ব্যাখ্যা এবং অপব্যাখ্যা করার যথেষ্ট সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাখ্যার ওপর নির্ভর করতে হবে, যা খুবই বিপজ্জনক।

অনেক ক্ষেত্রে কারাদণ্ড বাদ দিয়ে অর্থদণ্ডের কথা বলা হয়েছে, যা সাংবিধানিক অধিকারকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই আইনে অপরাধ তদন্ত এবং আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশকে ঢালাও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সাইবার অপরাধসংক্রান্ত কারিগরি জ্ঞান বা বিশেষায়িত সক্ষমতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আছে কি-না সেটি পর্যালোচনা করা দরকার। একইসঙ্গে বিচারিক নজরদারির কথা বলা হয়নি।  

আমল অযোগ্য কিংবা জামিনযোগ্য ধারা হলেও আমাদের চিন্তার অনেক বিষয় আছে, কারণ পুলিশের গ্রেপ্তার করার অনুমতি থেকেই যাচ্ছে। জামিন নিতে হবে উচ্চ আদালত থেকে। এক্ষেত্রে ধারার বিধান পরিবর্তন করলেও আমরা কিন্তু একই জায়গায় আছি, কারণ পুলিশ মনে করবে এবং অ্যারেস্ট করবে।

অধিকন্তু বিচারিক নজরদারি করার ক্ষেত্রে যে সক্ষমতা দরকার, তা আছে কি না, সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে। কারণ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা ও পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকলে তারা কীসের ওপর ভিত্তি করে ওয়ারেন্ট ইস্যু করবে, সেটিও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।

সর্বোপরি শুধুমাত্র ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব না করে সাইবার স্পেসে যেসব অপরাধ ও জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে, তা মনিটরিং করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।  

সাইবার অপরাধ শুধু দেশের সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ না, বরং এটির আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল আছে। বাংলাদেশে অন্যান্য দেশ থেকে অনেক ধরনের সাইবার হামলা হয়েছে, এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হ্যাক করে টাকাও চুরি করা হয়েছে। প্রকৃত সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে এসব বিষয়ে আমাদের নজর দেওয়া উচিত।

উপস্থাপনায় আরও বলা হয়, ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পর থেকে রাজনৈতিক কর্মীদের মাধ্যমে কিংবা ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণেই হোক না কেন, আইনটির যথেচ্ছ অপব্যবহার হওয়ায় এটি হয়রানির হাতিয়ারে পরিণত হয়। দেশে ও বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে একটা পর্যায় গিয়ে দেখা গেল যে, এটি সংশোধন অযোগ্য। তখন থেকেই টিআইবি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে।  

এক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের ওপর প্রাধান্য দেওয়া হয়- আইনের অপব্যবহার ও সাইবার নিরাপত্তা। এই দুটি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়েই টিআইবি সাইবার নিরাপত্তা-সংক্রান্ত একটি আইন প্রণয়নের কথা বলেছে। প্রস্তাবিত আইনটির নাম সাইবার নিরাপত্তা দেওয়ায় কিছুটা আশার সঞ্চার করলেও, খসড়া প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা গেল, মূলত শিরোনামের পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু উদ্বেগের জায়গাগুলোতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি, যা খুবই হতাশার।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে টিআইবির উপদেষ্টা, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, ডেটা প্রোটেকশন অফিসার ড. মো. তরিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২৩
ইইউডি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।