ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সংগঠনকে সক্রিয় করতে আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ নেয় জঙ্গিরা: র‌্যাব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২৩
সংগঠনকে সক্রিয় করতে আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ নেয় জঙ্গিরা: র‌্যাব

ঢাকা: নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’র গ্রেপ্তার সদস্যরা আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করছিল।  

তারা পুনরায় সংগঠনকে সক্রিয় করতে পার্শ্ববর্তী দেশ ও আফগানিস্তান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর দেশে এসে নতুন কর্মী সংগ্রহসহ সংগঠনের তৎপরতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছিল।

এই জঙ্গি সংগঠনের মূল সমন্বয়কারী আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ইসহাক ওরফে সাইবা (৪১) সহ আরও ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।  

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এর আগে, রোববার (১০ ডিসেম্বর) রাতে নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’র রাজধানীর আশুলিয়া, সাভার, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কারী ও প্রশিক্ষণ শাখার প্রধান আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ইসহাক ওরফে সাইবা (৪১) সহ ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১।

গ্রেপ্তার বাকি জঙ্গি সদস্যরা হলেন- মো. শরিফুল ইসলাম ওরফে মুরাদ (৩১), আশিকুর রহমান ওরফে উসাইমান (২৭), মুহাম্মদ জাকারিয়া ওরফে আবরার(২৪), মো. আল আমিন ওরফে রবিন ওরফে সামুরা (২৪), মো. আবু জর ওরফে মারুফ (১৮)।  

গ্রেপ্তার আসামিরা

অভিযানে তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জিহাদী ও উগ্রবাদী বই এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।  

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার জঙ্গিরা সংগঠনের সদস্যদেরকে বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা, মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সরবরাহ করতেন। শুধু তাই নয়, সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভুল তথ্য দিয়ে আত্মীয়-স্বজন, বিভিন্ন মাদরাসা ও সদস্যদের কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ করতেন তারা।  

তিনি বলেন, এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তারা মসজিদ, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতেন। তারা পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখতেন। সংগঠনের নতুন সদস্যদের তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের জন্য অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠাতেন।  

গ্রেপ্তার আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ইসহাক ওরফে সাইবা দাখিল সম্পন্ন করেছেন। তিনি ২০১৫ সালে সংগঠনের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসার আল ইসলামে যোগদান করেন। সংগঠনে যোগদানের পর তিনি বিভিন্ন পেশার আড়ালে সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। পরে তিনি সংগঠনের রাজধানীর আশুলিয়া, সাভার, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক এবং প্রশিক্ষণ শাখার প্রধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তার সঙ্গে আনসার আল ইসলামের বর্তমান আমিরের আবু ইমরানের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। তার নির্দেশেই তিনি রাজধানীর আশুলিয়া, সাভার, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।  

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজ্জাক ওরফে ইসহাক ওরফে সাইবা অনলাইনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ ও জিহাদে উদ্বুদ্ধ করে সংগঠনের জন্য নতুন সদস্য সংগ্রহ করতেন। তার নির্দেশে সংগঠনের নতুন সদস্যদের গাজীপুর, টঙ্গী ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন আনসার হাউজে তাত্ত্বিক ও শারীরিক কসরতসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। তিনি সামাজিকমাধ্যমের বিভিন্ন গোপনীয় অ্যাপস ব্যবহার করে সংগঠনের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন ও শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে নির্দেশনা নিতেন। সেই আলোকে সংগঠনে তার অনুসারীদের সকল প্রকার দিকনির্দেশনা দিতেন।  

এছাড়াও তিনি সংগঠনের সদস্যদের কাট আউট সিস্টেম সম্পর্কিত বিষয়ে মৌখিক এবং লিখিত প্রশিক্ষণ দিতেন এবং কাট আউট সিস্টেম এর নীতিমালা মেনে চলার নির্দেশনা দিতেন বলে জানায়। তার নির্দেশনায় গ্রেপ্তার শরিফুল সংগঠনের বেশকিছু সদস্যকে তথাকথিত হিজরত ও বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের জন্য অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠিয়ে ছিল বলেও জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন তিনি।  

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, সাইবার নির্দেশনায় পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানো ৪ জন সদস্য এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে সেখানের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হাতে গ্রেপ্তার হয় বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তিনি কাশিমপুর কারাগারে গ্রেপ্তার আনসার আল ইসলামের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতেন। এছাড়াও তিনি আনসার আল ইসলামের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে সমন্বয় করায় সংগঠনটির অন্যতম সমন্বয়ক সাইবা হিসেবে পরিচিত পায়।  

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার আশিকুর রহমান ময়মনসিংহ এলাকায় ‘হিজামার’ ব্যবসা করতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়। তিনি ২০১৮ সালে সংগঠনের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসার আল ইসলামে যোগদান করে। সংগঠনে তিনি দাওয়াতি কার্যক্রম করতেন। পরে তিনি সংগঠনের ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলার অন্যতম প্রধান সেকশন চিফ হিসেবে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। পাশাপাশি তিনি সংগঠনের জিহাদী প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত বিষয়ে অন্যতম সমন্বয়ক ছিল বলে জানা যায়।  

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, আশিকুর রহমান নতুন সদস্যদের সংগঠন ও তথাকথিত জিহাদ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনের জন্য উগ্রবাদী পুস্তিকা সরবরাহ করতেন। গ্রেপ্তার সাইবার নির্দেশনায় তিনি সংগঠনের মাসুলদের অধীন হিসেবে নতুন সদস্যদের বণ্টন করার দায়িত্ব পালন করতেন। আশিকুর সংগঠনের বিভিন্ন সদস্যদের কারাতে প্রশিক্ষণ ও শারীরিক কসরত সম্পর্কিত বিষয়সমূহে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করতেন। এছাড়াও প্রশিক্ষণকালীন সময় শারীরিক সমস্যার চিকিৎসা দিতেন বলে জানায়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার জাকারিয়া ওরফে আবরার ২০২০ সালে সংগঠনের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসার আল ইসলামে যোগদান করে। তিনি ভ্রাম্যমাণ রকমারি ব্যবসার আড়ালে সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম ও নতুন সদস্য সংগ্রহের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন বলে জানা যায়। পরে তিনি রাজধানীর আশুলিয়া, সাভার এবং মানিকগঞ্জ জেলার সংগঠনের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি গ্রেপ্তার আশিকুর রহমানের নির্দেশে কারাতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং ব্ল্যাকবেল্ট অর্জন করেন। তিনি নতুন সদস্য সংগ্রহসহ সদস্যদের সামাজিকমাধ্যমের বিভিন্ন গোপনীয় অ্যাপসের মাধমে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতেন।  

র‌্যাব কমান্ডার জানান, গ্রেপ্তার শরিফুল ২০১৮ সালে গ্রেপ্তার সাইবার মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসার আল ইসলামে যোগদান করে দাওয়াতি কার্যক্রম করতে থাকেন। পরে তিনি সাইবার নির্দেশে সংগঠনের ৪ জন সদস্যসহ ২০১৯ সালের প্রথম দিকে তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও তথাকথিত জিহাদের জন্য অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী দেশে যায় করে। পরে ২০১৯ সালের শেষের দিকে তিনি অন্য সদস্যদের রেখে কৌশলে অবৈধ পথে বাংলাদেশে ফেরত আসেন। বাংলাদেশে আসার পর সেখানে অবস্থানরত সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং পুনরায় সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রমসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করতেন বলে জানায়। তিনি সাইবার নির্দেশনায় সংগঠনের সদস্যদের তথাকথিত হিজরত ও প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠাতেন। ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় সংগঠনের নেতৃস্থানীয়দের নিয়ে সভার আয়োজন করতেন তিনি। তিনি তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য সদস্য নির্বাচন ও প্রেরণ কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করতেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার মো. আল আমিন ওরফে রবিন ওরফে সামুরা ২০১৯ সালে রাকিবের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসার আল ইসলাম সংগঠনটিতে যুক্ত হন। তিনি মাদ্রাসায় শিক্ষকতার আড়ালে সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। পরে তিনি ২০২১ সালে আনসার আল ইসলামের পক্ষ থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র জন্য পার্বত্য এলাকায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ সরবরাহের কাজ করতেন। জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র অর্থ শাখার প্রধান গ্রেপ্তার মোশারফ হোসেন ওরফে রাকিবের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। সে মোশারফ হোসেন ওরফে রাকিবের নির্দেশে কেএনএফের প্রশাসন ও অর্থ শাখার পাসেন মিরাম নামক ব্যক্তির কাছে শারক্বীয়ার প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র কেনার জন্য অর্থ পাঠাতেন বলে জানা যায়। এছাড়াও তার সঙ্গে কুকি চীনের নেতৃস্থানীয়দের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা যায়। অপরদিকে গ্রেপ্তার মো. আবু জর ওরফে মারুফ স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় জালালাইনে অধ্যয়নরত। তিনি ২০২২ সালে গ্রেপ্তার জাকারিয়ার মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে ‘আনসার আল ইসলাম’ সংগঠনটির সাথে যুক্ত হন।  

গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২৩
এসজেএ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।