ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মেহেরপুরে বিনোদন কেন্দ্রে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৪
মেহেরপুরে বিনোদন কেন্দ্রে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়

মেহেরপুর: ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বিনোদনের জন্য জেলার ঐতিহাসিক মুজিবনগর, ব্রিটিশ বেনিয়াদের আমঝুপি কুঠিবাড়ি ও ভাটপাড়া কুঠিবাড়ি এবং জেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ঢল নেমেছে। জেলার স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি এসব বিনোদন কেন্দ্রে দূরদূরান্ত থেকে আসেন বিনোদন প্রেমীরা।

দৈনন্দিন জীবনে শত ব্যস্ততা মানুষের মধ্যে নেমে আসে অস্বস্তি। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত অস্বস্তি মানুষের মনকে ভরিয়ে দেয় জীর্ণতায়। মানুষ তার জীর্ণতা দুর করতে খোঁজে নীল আকাশের নিচে একটু সুশীতল যায়গা।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঈদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে স্বাধীনতার সূতিকাগার ঐতিহাসিক মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স, ইংরেজদের স্মৃতিবিজড়িত আমঝুপি নীলকুঠি ও ভাটপাড়া ডিসি ইকোপার্কসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলো। পরিবার-পরিজন-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আনন্দে সময় কাটানোর মধ্য দিয়েই জেলাবাসী ও পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ জেলার বিনোদন প্রেমীরা ভাগাভাগি করছেন ঈদের আনন্দ।
পবিত্র ঈদ ও নতুন বছর আগমন উপলক্ষে জেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলোকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে।

ঐতিহাসিক মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সে ঘুরতে আসা চুয়াডাঙ্গার আব্দুস সালাম ও রোজিনা আক্তার জানান, মুক্ত পরিবেশে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার ক্ষেত্রে মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সের বিকল্প নেই। এখানে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়।

গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রামের গৃহবধূ আনিসা ও তার বড় জা রোকসানা খানম বলেন, সারাজীবন তো ঘরের মধ্যে বন্দী থাকি। ঈদের সময় পরিবারের অন্যান্য লোকজনও এক সঙ্গে হই। তাই সবাইকে নিয়ে একটু বিনোদন করাই মূল লক্ষ্য। মুজিবনগর এসে মনে হচ্ছে যেনো কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবি। ভালো লাগেছে এখানে।  

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা থেকে আসা নাহিদা আক্তার তামান্না বলেন, মুজিবনগরে আগেও ঘুরতে এসেছি। এখন মনে হচ্ছে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। ফলে এখন বসার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আর ঈদের সময় এখানে অনেক মানুষ আসে তাই ঘুরতে এখানে অনেক ভালো লাগে।

গাংনী উপজেলার মালশাদহ গ্রামের আরেক দর্শনার্থী মাইনুল ইসলাম রনি বলেন, ব্যস্ততার কারণে অবসরই মেলেনা তাই ঈদের ছুটিতে একটু অবসর পেয়েছি তাই চলে আসলাম।

মেহেরপুর শহরের রাজু আলী বলেন, ক্লান্ত জীবনকে একটু বিশ্রাম দিতেই তিনি পরিবারসহ এখানে এসেছেন।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার সাতমাইল গ্রামের আবু সালেহ তার পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন ঈদের ঘুরাঘুরি করতে মেহেরপুরের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। তিনি মুজিবনগর ছাড়াও আমঝুপি নীলকুঠি ও গাংনীর ভাটপাড়া ডিসি ইকোপার্ক ঘুরেছেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে। তিনি বলেন, স্ত্রী ও তার ছেলে রুপম হোসেনকে ঐতিহাসিক এ স্থানগুলো দেখাতে পেরে বেশ গর্বিত। কারণ, এখানে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের যেমন গৌরবান্বিত ইতিহাস, তেমনি রয়েছে ব্রিটিশ বেনিয়াদের নির্মম অত্যাচারের স্মৃতিচিহৃ। তাই বিনোদন পিয়াসীদের আকর্ষণের অন্যতম জায়গা ঐতিহাসিক মুজিবনগর কমপ্লেক্স, ভাটপাড়া ডিসি ইকোপার্ক ও আমঝুপি নীলকুঠি।

মুজিবনগর কমপ্লেক্সে আনসারদের নেতৃত্বে পাহারায় আছেন অর্ধশতাধিক আনসার সদস্য। ঈদ-পরবর্তী অতিরিক্ত লোক সমাগমে যে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য এখানে নজরদারি রেখেছে মুজিবনগর থানা পুলিশ।

এদিকে গাংনী উপজেলা শহর থেকে মাত্র ছয় কিলোমিটার দুরের পথ ভাটপাড়া ডিসি ইকোপার্ক। ব্রিটিশ বেনিয়াদের নীলকুঠি সেজেছে নতুন রূপে। এখানে এখন ভ্রমণ পিপাষূদের মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য রয়েছে বিনোদনের নানা উপকরণ। কেবল কার, আজব গুহা, ট্রেন ভ্রমণ, ঘোড়াই চড়া, নৌকা ভ্রমণ, শিশুদের মোটরসাইকেল চালানো থেকে শুরু করে সব ধরনের বিনোদন ব্যবস্থা।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক শামীম হোসেন বলেছেন, ভ্রমণ পিপাষুদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মেহেরপুর-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ডাক্তার এএসএম নাজমুল হক সাগর বলেন, মানুষের মধ্যে নতুন আমেজ তৈরি হয়েছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি বিনোদন পিপাষু হয়ে উঠেছেন। এবার মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছেন।  

বাংলাদেশ সময়:১৮৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।