ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ ভাদ্র ১৪৩২, ১৯ আগস্ট ২০২৫, ২৪ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

মাকে হত্যা করে ফ্রিজে রেখে ডাকাতির নাটক সাজালেন ছেলে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:০৬, নভেম্বর ১২, ২০২৪
মাকে হত্যা করে ফ্রিজে রেখে ডাকাতির নাটক সাজালেন ছেলে

বগুড়া: বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় মা উম্মে সালমা খাতুনকে (৫০) শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ডিপ ফ্রিজে তুলে রাখে ছোট ছেলে মো. সাদ বিন আজিজুর রহমান (১৯)। পরে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ডাকাতির নাটক সাজান তিনি।

 

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে র‌্যাব-১২ বগুড়া ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. এহতেশামুল হক খান।

নিহত উম্মে সালমা উপজেলার ডিএস ফাজিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ ও উপজেলা মসজিদের খতিব এবং ইমাম-মুয়াজ্জিন সমিতির সভাপতি আজিজার রহমানের স্ত্রী। এছাড়াও আজিজার রহমানের হজ্ব কাফেলার একটি এজেন্সি রয়েছে।

এর আগে রোববার (১০ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলা সদরের সিও অফিস বাসস্ট্যান্ড থেকে পশ্চিমে বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়ক সংলগ্ন ‘আজিজয়া মঞ্জিল’ নামে চার তলা একটি বাড়িতে এ হত্যার ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, মাদরাসা শিক্ষক আজিজার রহমানের তিন ছেলে-মেয়ে। বড় ছেলে এবং মেয়ে ঢাকায় থাকেন। ছোট ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমান বাবা-মার সঙ্গে দুপচাঁচিয়ায় বসবাস করেন। সাদ ডিএস ফাজিল মাদরাসার কামিল শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। আজিজিয়া মঞ্জিলের তৃতীয় তলায় সপরিবারে বসবাস করেন মাদরাসা শিক্ষক আজিজার রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. এহতেশামুল হক খান বলেন, হাত খরচের টাকা নিয়ে সাদ বিন আজিজুর রহমানের সঙ্গে তার মা উম্মে সালমা খাতুনের ঝগড়া বিবাদ চলে আসছিল। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ি থেকে ৫০০-১০০০ টাকা হাতিয়ে নিতেন সাদ। ঘটনার দিন সাদ হাত খরচের টাকা চেয়ে না পাওয়ায় তার মাকে হত্যার পর মরদেহটি ডিপ ফ্রিজে রেখে দেন।  

ওইদিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নিহতের সাদ বাড়িতে গিয়ে তার মাকে না পাওয়ার কথা তার বাবাসহ স্বজনদের জানান তিনি। এরপর খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ডিপ ফ্রিজের ভেতরে তার মায়ের হাত-পা বাঁধা মরদেহ দেখতে দেখা যায়। এছাড়া ঘরে রাখা স্টিলের আলমারিতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটার চিহ্ন এবং নিচে কুড়াল পড়ে থাকতে দেখে পরিবারের সদস্যরা ঘটনাটি ডাকাত দলের কাজ বলে সন্দেহ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। তবে বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা কিংবা স্বর্ণালংকার খোয়া না যাওয়ায় এমনকি নিহতের কানে থাকা স্বর্ণের দুল অক্ষত থাকায় পুলিশের সন্দেহ হয়। পরে ওইদিন রাতে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়। পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সাদ তার মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

তিনি আরো বলেন, ঘটনার দিন হাত খরচের টাকা চেয়ে না পেয়ে মায়ের সঙ্গে সাদ বিন আজিজুর রহমানের বাকবিতণ্ডা হয় এবং তিনি নাস্তা না খেয়েই মাদরাসায় চলে যান। বেলা ১১টার দিকে ক্লাসের বিরতি হলে সাদ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাড়িতে ঢুকে তার মাকে কুমড়া কাটতে দেখেন। তখন পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সাদ পেছন থেকে তার মায়ের নাক ও মুখ চেপে ধরেন। এসময় ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে কুমড়া কাটার বটি দিয়ে সাদের তর্জনীর আঙুল কেটে যায়। কিন্তু তার পরও সাদ দুই হাত দিয়ে নাক ও মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে তার মায়ের মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর ওড়না দিয়ে মায়ের দুই হাত বেঁধে মরদেহটি ডিপ ফ্রিজের মধ্যে রাখেন। পরে ঘটনাটি ডাকাতি বলে প্রমাণের জন্য সে কুড়াল দিয়ে আলমারিতে কোঁপিয়ে প্রধান ফটকে তালা দিয়ে বাইরে চলে যান। কিছুক্ষণ পরে আবার তালা খুলে ভেতরে ঢুকে তার মাকে খুঁজে না পাওয়ার কথা ফোনে বাবাসহ স্বজনদের জানান।

দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদুল ইসলাম বলেন, উম্মে সালমা খাতুন হত্যাকাণ্ডে এখনও মামলা হয়নি। তবে নিহতের বড় ছেলে বাদী হয়ে এজাহার করবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২৪
কেইউএ/এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।