ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আ.লীগ আমলে অটোরিকশা থেকে বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা চাঁদা আদায় হতো

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৪
আ.লীগ আমলে অটোরিকশা থেকে বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা চাঁদা আদায় হতো

ঢাকা: বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সারা দেশে ৪০ লাখ অটোরিকশা থেকে দৈনিক ১১০ কোটি টাকা করে বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে চাঁদা আদায় হতো বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) জরুরিভিত্তিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ছোট যানবাহন চলাচল নীতিমালা প্রণয়নের দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি হলে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এই চাদাঁবাজির কারণে রাজধানীর প্রধান সড়কসহ দেশের সব সড়ক-মহাসড়ক, নগর-বন্দরে মোটরচালিত অটোরিকশা দৌরাত্ম্য বেড়ে চরম আকার ধারণ করেছে। পতিত আওয়ামী লীগের অনেক এমপি-মন্ত্রীও এই অবৈধ অটোরিকশা পরিচালনা করে অবৈধ চাদাঁবাজিতে যুক্ত ছিলেন। তাই এই খাতের নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। অবাধে আমদানি, স্থানীয় গ্যারেজে সহজে তৈরি করে রাস্তায় নামানোর অবাধ সুযোগ থাকায় এবং দেশে অন্যান্য খাতে সহজে কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায়, স্বল্পপুঁজিতে লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষ অটোরিকশা কিনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। এতে কৃষি খাতে শ্রমিক সংকটসহ কৃষিজ উৎপাদন কমে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে। প্রশিক্ষণবিহীন লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষের হাতে এসব অটোর স্টিয়ারিংয়ের কারণে সড়ক নিরাপত্তায় ভয়ানক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরে দেশের সড়ক থেকে ট্রাফিক পুলিশ উঠে গেলে এসব অটোরিকশা আরও বেপরোয়া হয়ে রাজধানীসহ দেশের প্রধান প্রধান সড়ক-মহাসড়কে অবাধে চলাচল শুরু করে। এতে সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট চরম আকার ধারণ করায় নতুন সরকার ভয়াবহ যানজট কমাতে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক থেকে মোটরচালিত অটোরিকশাসহ অযান্ত্রিক যানবাহন উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়। এমন পরিস্থিতিতে গত ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট ৩ দিনের মধ্যে ঢাকা মহানগরের সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপ করার নির্দেশ দেন। এরই প্রেক্ষিতে সরকার রাজধানী থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উচ্ছেদ করতে গেলে পুরো রাজধানীর লাখ লাখ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক ও মালিকেরা সংগঠিত হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক, রেলপথে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। মাত্র ৩ দিনের মধ্যে রাজধানী থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উচ্ছেদ বা নিয়ন্ত্রণের যে আদেশ হাইকোর্ট দিয়েছেন, আমরা সেই আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী আরও দাবি করেন, দেশের সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে ৪০ লাখ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিবন্ধন ও চালকের হাতে নামমাত্র ফিতে লাইসেন্স দেওয়া গেলে বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হতে পারে।

পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে ৮ দফা সুপারিশ জানায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সুপারিশগুলো হলো—

১. জরুরিভিত্তিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় প্রণীত ‘থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা-২০২১’ এর খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করে গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে।

২. বুয়েট, চুয়েট, রুয়েট ও সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ব্যাটারিচালিত রিকশার বডি মডিফাই করে ব্রেক ও গতির সমতা এনে সড়ক নিরাপত্তায় ঝুঁকিমুক্ত নিশ্চিত করে সার্টিফাইসহ নিবন্ধন নিতে হবে।

৩. সড়কের সক্ষমতা বিবেচনা করে সিলিং নির্ধারণ করে দেশের সব সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে, বিআরটিএ’র নিয়ন্ত্রণে তাদের আওতাধীন এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন দিতে হবে।

৪. প্রতিটি ব্যাটারিচালিত রিকশার চালককে ন্যূনতম ১ সপ্তাহের সড়ক আইন-কানুন, ট্রাফিক চিহ্ন, সড়কে মোটর রিকশা চলাচল পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে মৌলিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রশিক্ষণ সমাপ্তকারীদের নামমাত্র ফি নিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে। হুট করে গ্রাম থেকে এসে প্রশিক্ষণহীন কোনো ব্যক্তি যাতে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে রাস্তায় নামতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. প্রতিটি ব্যাটরিচালিত রিকশায় ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে জিপিএস লাগানো বাধ্যতামূলক করতে হবে। জিপিএস ট্যাকিংয়ের মাধ্যমে গতি নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে। রাজধানীর প্রধান সড়ক, দেশের হাইওয়ে বা উপজেলা ও পৌরসভার প্রধান সড়কের যেটুকু অংশ সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবে সেই সড়কে প্রবেশ করা মাত্র জিপিএসের মাধ্যমে ট্রাফিক বিভাগ অটো জরিমানা আদায় করতে পারবে, এমন পন্থায় তাদের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে।

৬. ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা জাতীয় মহাসড়কে চলাচল কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। রাজধানীসহ দেশের শহরগুলোর প্রধান সড়কে ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে।

৭. জরুরিভিত্তিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও যন্ত্রাংশ আমদানি বন্ধ করতে হবে।

৮. ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে প্রতিটি এলাকার নিবন্ধন প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ ও যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতামত এবং যাত্রী সাধারণের সঙ্গে গণশুনানি করে এলাকাভিত্তিক ভাড়া নির্ধারণ করে দিতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৪
এসসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।