ঢাকা: রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলের ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ছালেহ উদ্দিন।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকাল ৪টায় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের সামনে উপস্থিত সাংবাদিক ও জনতার উদ্দেশে তিনি এই কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি এটিকে দুর্ঘটনা বলবো না। একটি অবৈধ সমাবেশের মাধ্যমে কয়েক হাজার ছাত্রবেশী সন্ত্রাসী, যারা এলাকার আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে চায়, তারা সংঘবদ্ধ হয়ে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা করেছে। সীমিত পুলিশ সদস্য নিয়ে প্রথমে আমি যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় তাদের আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তারা আমাদের প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে লাঠিসোটা নিয়ে, সঙ্গে জনতা একত্রিত হয়ে এই মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা করেছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে কলেজের ভেতরে প্রবেশ করেছি। আমরা বিভিন্ন তলার বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করেছি। এখানে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। এখানে কোটি কোটি টাকার সম্পদ লোপাট হয়েছে। যেটা খুবই ন্যক্কারজনক। একটি স্বার্থন্বেষী মহল এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে আমরা মনে করি।
তিনি আরো বলেন, আমরা এই ধরনের কোনো ঘটনা আর বরদাস্ত করবো না। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো। এই ঘটনায় মামলা হবে এবং পরবর্তী যে আইনানুগ প্রক্রিয়াগুলো আছে সেগুলোতে আপনারা (এলাকাবাসী) সহযোগিতা করবেন।
তিনি আরো বলেন, এই ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের কোনো সম্পদ কেউ যদি নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রাখার সংবাদ থাকে, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে গোপনে আমাদের জানাবেন। আমরা সেখান থেকে তা উদ্ধার করে জড়িতকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসবো।
এর আগে বেলা ১২টার দিকে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের সামনে ওই কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মুহূর্তেই যাত্রাবাড়ী-ডেমরা সড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন।
বিকাল ৩টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের সামনে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী, স্থানীয় বাসিন্দা ও উৎসুক জনতা রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে সেনাবাহিনী, র্যাব, এপিবিএন ও পুলিশের কয়েকশ সদস্য রয়েছেন। তবে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের আশপাশে দেখা যায়নি।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে লাঠিসোঁটা হাতে সোহরাওয়ার্দী কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে জড়ো হয়। পরে তারা মিছিল নিয়ে কবি নজরুল কলেজের সামনে আসেন। এ সময় নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ মাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানালে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন।
পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ডেমরা সড়ক সংলগ্ন মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালায়। এসময় মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়।
পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেলে মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর ঘটনায় রোববার ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল। পূর্বঘোষিত সেই ‘সুপার সানডে’ কর্মসূচির মধ্যে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ও পাশের সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় মোল্লা কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
ওই সময় সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রে অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ওই হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে সোমবার মোল্লা কলেজে হামলা চালালেন সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৪
এসসি/এমএম