মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে স্কুল পড়ুয়া তরুণীকে উত্ত্যক্ত করার অপরাধে গ্রাম্য সালিশের আগের দিন বাড়ি থেকে সন্ত্রাসী কায়দায় অপহরণ করতে এসে পরিবারের সদস্যদের প্রতিরোধে গুরুতর আহত হয়েছে বখাটে আতাউর। বর্তমানে সে এখন সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এদিকে, কমলগঞ্জ থানার পুলিশ তরুণীর বাবা হুমায়ুনকে ফোনে ডেকে এনে বখাটেকে আহত করার অপরাধে আটক করে মৌলভীবাজার জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে রোবারর (১৯ জানুয়ারি) সকাল ১০টায়।
জানা গেছে, কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের হুমায়ুন মিয়ার মেয়ে ১০ম শ্রেণির ছাত্রী। একই গ্রামের হুমায়ুনের ভাই হারুন মিয়ার ছেলে রাজমিন্ত্রি আতাউর রহমান (৩০) মেয়েটিকে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে উত্ত্যক্ত করে। মেয়েটি বিবাহিত চাচাতো ভাইয়ের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের অবহিত করে। মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার বিষয়টি তার পরিবারের সদস্যরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কমলগঞ্জ থানায় লিখিতভাবে অবহিত করে। এর প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় সালিশ বৈঠক বসার সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে বখাটে আতাউর রোববার (১৯ জানুয়ারি) ভোরে মোটরসাইকেল যোগে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার অপর সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে তরুণীকে অপহরণ করতে যায় হুমায়ুনের বাড়িতে। এ সময় হুমায়ুন ও তার পরিবারের লোকজন আতাউর ও তার সঙ্গীদের দেশীয় অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধ করে। তাদের প্রতিরোধে আতাউরের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে ও আতাউরের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুত্বর আহত করে। হামলায় আতাউর গুরুতর আহত হলে তার আত্মীয়-স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করে।
স্কুলছাত্রী রিয়া মা বলেন, ঘটনার রাতে তার স্বামী মুন্সিবাজার অবস্থান করার সময় কমলগঞ্জ থানা থেকে তাকে ফোন করে বিষয়টি সর্ম্পকে জানার জন্য ডেকে নিয়ে আতাউরের ওপর হামলার কারণে আটক করে পরদিন মৌলভীবাজার জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) দিলারা বেগম, নানু মিয়া, লতিফ মিয়া ও লাল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, আতাউর পেশায় একজন রাজ মিন্ত্রি। আগে আওয়ামী লীগে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। সে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির লাঠিয়াল হিসেবে তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। তার ভয়ে এলাকার কেউ কথা বলতে পারেনা।
তারা আরো বলেন, সে আগে বৃন্দাবনপুর ও রামেশ্বরপুর গ্রামে ২টি বিয়ে করেছিল। তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তারা তাকে তালাক দিয়ে চলে যায়। এছাড়া তার অত্যাচারে মইনউদ্দিনের পরিবারে বাড়ি-ঘর ফেলে রেখে বর্তমানে গিয়াসনগর এলাকায় বসবাস করছে। তারা বলেন, হুমায়ুনের স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে স্কুলে যাওয়া- আসার সময় বিরক্ত করার অভিযোগে ২০ জানুয়ারি এলাকায় সালিশ বৈঠক করার কথা ছিল, কিন্তু তার আগেই সন্ত্রাসী নিয়ে তার মেয়েকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করলে হুমায়ুন ও তার পরিবারের সদস্যরা তাকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে আহত করেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ওয়াতির মিয়া বলেন, আতাউর খুব খারাপ লোক। এলাকায় যত অন্যায় অপকর্ম আছে সবগুলোর সঙ্গে সে জড়িত। তার নেতৃত্বে সব ধরনের কাজ এ এলাকায় হয়। আমরা বিচারি হয়েও তার বিচার করতে পারি না। সে আগে যুবলীগ করতো এখন বিএনপি করে। আমরা চাই পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবে। তিনি আরও বলেন, আইন হাতে নেওয়া ঠিক হয়নি হুমায়ুনের। আতাউরকে মারা ঠিক হয়নি।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত শামীম আকনজি বলেন, মেয়ের পরিবার থেকে একটি অভিযোগ করা হলে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা দেখে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন। অপরদিকে, আতাউর রহমানকে তারা রাস্তায় আটক করে গুরুতর আহত করে হুমায়ুন। রোববার আতাউরের পরিবার এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ হুমায়ুনকে আটক করে সোমবার জেলহাজতে পাঠায়।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৫
বিবিবি/জেএইচ