রাজশাহী: রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদ্য ঘোষিত মহানগর ও জেলা কমিটি বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।
কমিটি প্রত্যাখ্যান করে শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে মহানগরীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় যে, সদ্য ঘোষিত কমিটিতে আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দলের নেতাকর্মীরা স্থান পেয়েছেন। তাই কমিটি বাতিলে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। এছাড়া সংবাদ সম্মেলন থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিন সরকার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মারকেও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। এসব ঘোষণা শেষে নতুন কমিটি গঠনের জোর দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রাজশাহী কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের রশিদ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ১০ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত রাজশাহীর শিক্ষার্থী ও জনসাধারণ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাজশাহী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে রাজপথে লড়াই করেছে, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে অকুতোভয় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এ আন্দোলনে রাজশাহীর গর্বিত দুই কৃতি সন্তান আলী রায়হান ও সাকিব আঞ্জুম নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও ক্ষোভের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি- একটি স্বার্থান্বেষী মহল জুলাই বিপ্লবের প্রকৃত নায়কদের মাইনাস করে, ৫ আগস্টের পর সুবিধাভোগী কিছু অনুপ্রবেশকারীর মাধ্যমে প্রহসনের ‘পকেট কমিটি’ গঠন করেছে। '
সংবাদ সম্মেলন করা শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জুবায়ের রশিদ দাবি করেন, এ কমিটিগুলোতে প্রকৃত আন্দোলনের সাহসী, বিপ্লবী এবং নির্ভরযোগ্য নেতৃত্বকে বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনাবিরোধী, বহিরাগত এবং বিতর্কিতদের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনবিরোধী এসব ব্যক্তি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাজারে চাঁদাবাজি, ক্ষমতার দখল এবং সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত।
এ সময় অন্য শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ফাতিন মাহাদী ও মাহিন সরকার মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এ কমিটি গঠন করেছেন। আরও উদ্বেগের বিষয়, এ কমিটির নেতৃত্বে এমন অনেককে রাখা হয়েছে, যারা সরাসরি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এমনকি আওয়ামী লীগের শরিক দল জাসদের ছাত্র সংগঠনের মূল নেতৃত্বও এ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। একজন হত্যা মামলার আসামিকেও শীর্ষ একটি পদে রাখা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা রাজশাহীর ছাত্র সমাজ এই অবৈধ পকেট কমিটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ কমিটি বাতিল করার জন্য কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরিফ সোহেল, আবদুল হান্নান মাসুদ, হাসনাত আবদুল্লাহ, উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ভাইয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। ’
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী কলেজ বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আবদুর রহিম, রাজশাহী বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাফিউল ইসলাম, রাজশাহী সিটি কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আবু শাকিল আকাশসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘কমিটি গঠনের বিষয়ে তাদের কোনো হাত নেই। কেন্দ্র থেকে যাচাই-বাছাই করে কমিটি করেছে। আন্দোলনের সময় মাঠে যারা ত্যাগী, তাদেরই রাখা হয়েছে। আর এভাবে কতবারই তো অবাঞ্ছিত করা হয়েছে। যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তাদের অধিকাংশই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাই এটা কেন করা হলো; তা নিয়ে কারও মধ্যে সংশয় থাকার কথা নয়। ’
এর আগে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী মহানগর আহ্বায়ক কমিটি করা হয়।
নতুন কমিটিতে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আল আশরারুল ইমামকে (তানিম) আহ্বায়ক ও রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী হজরত আনাসকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সংখ্যা ১১৫।
কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেলের সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কমিটির তালিকা ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়। আগামী ছয় মাসের জন্য এ আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলেও ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৫
এসএস/আরআইএস