ঢাকা, বুধবার, ২২ মাঘ ১৪৩১, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ঐতিহ্যে টিকে আছে ২৫০ বছরের পুরোনো ভাসমান ‘ধানের হাট’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫
ঐতিহ্যে টিকে আছে ২৫০ বছরের পুরোনো ভাসমান ‘ধানের হাট’

বরিশাল: প্রায় ২৫০ বছরের ঐতিহ্য এখনো আঁকড়ে ধরে রেখেছে বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সন্ধ্যা নদী। এ নদীতেই এখনো ভাসমান ধানের হাটে বেচাকেনা হয় কয়েক হাজার মণ ধান।

যে ধান কিনে নিয়ে বানানো হয় মানুষের খাবারের উপযোগী চাল।

আর ভাসমান হাটের ধান-চালের জন্যই আয়তনের দিক থেকে বরিশালের সব থেকে ছোট উপজেলা বানারীপাড়া বেশ বিখ্যাত। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মিল কারখানা গড়ে ওঠায় এখন আর আগের জৌলুস নেই বলে দাবি স্থানীয়দের। তারপরও সপ্তাহে চারদিন সকাল ৭টা থেকে সূর্যাস্ত অবধি বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর পশ্চিম প্রান্তে দান্ডুয়াটের ভাসানমহলে ধানের হাট বসে নিয়মিত। আর ঠিক হাটের দিনগুলোতে সরগরম হয়ে ওঠে নদীর বুক।

আড়তদার আ. রশিদ ফকির বাংলানিউজকে বলেন, সপ্তাহে চারদিন হাটের মধ্যে শনিবার ও মঙ্গলবার মূল হাট হলেও রোববার এবং বুধবার হচ্ছে গালা (বর্ধিত সময়)।  আড়াইশত বছর ধরে এখানে হাজার হাজার মণ ধান কেনা-বেচা হয়। যা পটুয়াখালীর কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী, বরিশাল সদর, বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ, বরগুনার পাথরঘাটা, ভোলা, ঝালকাঠিসহ বিভিন্ন এলাকার ধান বানারীপাড়ার দান্ডুয়াটের ভাসান মহলে কেনা-বেচা হয়।

তিনি বলেন, আগের কাঠের বড় বড় নৌকায় ধান নিয়ে আসা হতো। আমাদের ছোটবেলাতে এই হাটে গয়না, সওদাগরি নৌকা দেখেছি কিন্তু এখন আসে ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে।  যদিও আগের থেকে বেচাবিক্রির পরিমাণ কমেছে,তবে এখনও পঞ্চাশ থেকে সর্বোচ্চ দুইশতটির মতো ট্রলার ধান নিয়ে হাটের দিনগুলোতে এখানে আসে।

আর সে ট্রলার থেকেই হাজার হাজার মণ ধান কিনে নিয়ে যান ক্রেতারা এমনটাই জানালেন রফিক নামে অপর এক ব্যাপারী। তিনি বলেন, কাগজে কলমে হিসেব না কষলেও বর্তমান প্রতি হাটে পাঁচ থেকে ছয় হাজার মণ ধান বিক্রি হয়, তবে আগে পরিমাণটা এতই ছিল যে মাপ কেউ বলতে পারতো না।

এদিকে ধানের মাপ জানা গেলেও হাটের সঠিক বয়স জানা নেই কারও।  কথার যুক্তিতে এ হাট প্রায় আড়াইশত বছরের ঐতিহ্য বলে দাবি স্থানীয়দের।  

স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, আমার দাদার কাছ থেকে শুনেছি, তার দাদার আমলে এ হাটের জৌলুসের কথা। তাহলে নিঃসন্দেহে সন্ধ্যা নদীর বুকে ভাসমান এ হাটটি আড়াইশ বছরের পুরোনো।

হাট ঘুরে জানা গেছে, ব্যাপারীরা এ হাটে ধান নিয়ে আসার পরে আড়তদারদের মারফতে কুটিয়ালদের কাছে তা বিক্রি হয়। আর সেখানে আড়তদারি পান আড়তদাররা। এর বাইরে এ হাটে কোনো খরচ গুনতে হয় না কাউকে। তাই ব্যবসায়ীদের কাছে এ হাট অনেকটা নিরাপদও।

ঝালকাঠির বাসিন্দা ও ব্যাপারী আমিনুল ইসলাম বলেন, কেনা-বেচা করতে গিয়ে খাজনাসহ নানা বাজনায় ফসলের দাম বাড়ে। কিন্তু ভাসমান-এ হাটে সেই ভোগান্তি নেই। এখানে প্রতি হাটবারে বর্তমানে পাঁচ থেকে দশ হাজার মণ ধান ওঠে। যেখান থেকে কুটিয়ালার পছন্দমতো একশত-দেড়শত মণ ধান একবারে কিনে নিয়ে যায়।

আর বর্তমান সময়ে এক জায়গাতে এ অঞ্চলের জনপ্রিয় প্রায় সব প্রকারের ধান পাওয়া যাওয়ায় হাটবারগুলোতে দিনজুড়ে কুটিয়ালদের উপস্থিতিও থাকে লক্ষণীয়।  

রফিক কুটিয়াল জানান, এখানে আমন-ইরিসহ সব মৌসুমের মোটা ও চিকন জাতের সব প্রকারের ধান পাওয়া যায়।  প্রকার ভেদে মণপ্রতি ধান ১১ শত থেকে ১৪ টাকা দরে বেচাবিক্রি হয়। সেসব ধান কুটিয়ালরা নিয়ে সিদ্ধ করে শুকিয়ে চাল বানিয়ে আবার অন্য হাটে বিক্রি করে থাকে।

বানারীপাড়া উপ‌জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বায়েজিদুর রহমান এ হাটের বিষ‌য়ে ব‌লেন, সড়ক যোগা‌যোগ ব‌্যবস্থার উন্নয়‌নের কার‌ণে সন্ধ‌্যা নদীর ভাসমান ধানের হাট ছোট হ‌য়ে আস‌ছে। ত‌বে মানু‌ষের আগ্রহ থাক‌লে অবশ‌্যই এ বিষ‌য়ে উপ‌জেলা প্রশাসন প্রচার ও প্রসা‌রের জন‌্য কাজ কর‌বে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫
এমএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।