ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘বারবার ডাকলেও গেট খোলেননি দারোয়ান, হুট করে এসে ঘিরে ফেলে দুর্বৃত্তরা’’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫
‘বারবার ডাকলেও গেট খোলেননি দারোয়ান, হুট করে এসে ঘিরে ফেলে দুর্বৃত্তরা’’ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আনোয়ার হোসেন

ঢাকা: রাজধানীর বনশ্রীতে ছিনতাইকারীদের গুলিতে আহত ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল এবং আপাতত তিনি শঙ্কামুক্ত। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আনোয়ার জানিয়েছেন, ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ার আগে তিনি বারবার বাসার দারোয়ানকে ডেকেছিলেন, কিন্তু দারোয়ান গেট খোলেননি।

মুহূর্তের মধ্যেই দুর্বৃত্তরা এসে ঘিরে ফেলে তাকে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ক্যাজুয়েলটি সার্জারি বিভাগের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি এই স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ী। তার বিষয়ে সোমবার (২৪ ফেরুয়ারি) দুপুরে কথা হয় ক্যাজুয়েলটি সার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোস্তাক আহমেদের সঙ্গে।  

তিনি বলেন, আনোয়ার হোসেনের অবস্থা স্ট্যাবল (স্থিতিশীল)। তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। জীবননাশের ঝুঁকি নেই। তার অণ্ডকোষে ক্ষত আছে। সেখানে অস্ত্রোপচার করা হবে। এছাড়া তার শরীরে বুলেটের যেই তিনটি ক্ষত হয়েছিল সেগুলোতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তবে কোনো বুলেট শরীরে পাওয়া যায়নি। এর বাইরে তার শরীরে ধারালো অস্ত্রের কয়েকটি আঘাত রয়েছে। বিশেষ করে কাঁধে একটি বড় আঘাত রয়েছে, সেটির জন্য অর্থোপেডিক্স বিভাগের চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া হবে। আপাতত রোগী শঙ্কামুক্ত আছেন বলে বলা যাচ্ছে।

হাসপাতালে থাকা আনোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাসা বনশ্রী ডি ব্লকের ৭ নম্বর রোডে। সি ব্লকের ৫ নম্বর অ্যাভিনিউ মেইন রোডে আমার জুয়েলারি দোকান। দোকান থেকে বাসায় যেতে এক মিনিট সময় লাগে। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে দোকান বন্ধ করে প্রায় ১৪০ ভরি স্বর্ণালংকার ও এক লাখ টাকা ব্যাগে ভরে বাসার দিকে রওনা হয়েছিলাম। নিজের মোটরসাইকেল চালিয়ে বাসার সামনে গিয়ে গেটে ধাক্কাধাক্কি করে দারোয়ানকে ডাকতে থাকি। ওই মুহূর্তে পাশের গলি থেকে তিনটি মোটরসাইকেলে দুর্বৃত্তরা এসে আমাকে ঘেরাও করে। তখনো আমি কিছু বুঝতে পারিনি। যখন আমার ব্যাগ ধরে টানাটানি করে তখন আমি বাইক ফেলে দৌড় দেই। তখন ওরা বাইক নিয়ে আবার আমার কাছে এসে ঘিরে ফেলে। ব্যাগ ছাড়তে না চাইলে তারা একের পর এক গুলি করতে থাকে।

তিনি বলেন, ঘাতকরা নিশ্চয়ই আগে থেকেই আমাকে অনুসরণ করছিল। গলিতে ওঁৎ পেতে ছিল। তবে তারা সবাই হেলমেট পরা ছিল। কাউকে চিনতে পারিনি।  

বাড়ির দারোয়ানের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আনোয়ার বলেন, আমি দারোয়ানকে গেট খুলতে অনেক ডাকাডাকি করছিলাম। তবে দারোয়ান গেট খোলেনি। আমার এই ঘটনার পেছনে দারোয়ানের দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে। সে সময়মতো গেট খুলে দিলে আমার এই পরিণতি হতো না। এছাড়া আমি কখন বাসায় আসি, বের হই—এসব তথ্যও ওই দারোয়ান তাদের দিয়ে থাকতে পারে বলে আমার সন্দেহ হচ্ছে।

তিনি বলেন, আসন্ন ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন সমিতি থেকে প্রায় ৭০-৮০ লাখ টাকা ঋণ করেছি আমি। এ বছর মেয়েটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করব। এখন তো আমার কিছুই নেই। একেবারে নিঃস্ব আমি।  

রামপুরা থানা পুলিশ জানিয়েছে, গেট খোলার কথা বললেও খোলেননি বিধায় নিরাপত্তাকর্মীকে (দারোয়ান) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে থানায় নেওয়া হয়েছে

আনোয়ার হোসেনের বড় ভাই মো. আমির হোসেন বলেন, দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক তিনি। সন্তান ও স্ত্রী পান্না আক্তারসহ বনশ্রীতে ভাড়া বাসায় থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার পূর্ব কুতুবপুরে।  

প্রায় ১৫-১৬ বছর ধরে স্বর্ণ ব্যবসা করেন তিনি। কিছুদিন আগেও এক জায়গা থেকে ২০ লাখ, আরেক জায়গা থেকে ৯ লাখ টাকা ঋণ করেছেন। এছাড়া আরও বিভিন্ন জায়গায় তিনি ঋণী।

জানা গেছে, এ ঘটনায় রামপুরা থানায় মামলা করেছেন আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী হোসনেয়ারা। এতে আসামি করা হয়েছে ‘অজ্ঞাত ৬-৭ জনকে’।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫
এজেডএস/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।