সাতক্ষীরা: ‘দীর্ঘ এক দশকের লড়াইয়ে আমাদের দুই হাজারের বেশি সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন এবং ২০ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। এই রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সাতক্ষীরার শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে জুলাই অভ্যুত্থানে সাতক্ষীরার শহীদ পরিবার, আহত ও কারাবরণকারীদের সম্মাননা প্রদান ও দোয়া অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
সাতক্ষীরার মানুষের সংগ্রামী ভূমিকার প্রশংসা করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমার দেখা সবচেয়ে আন্তরিক, অতিথিপরায়ণ ও ইতিবাচক মানসিকতার মানুষ যদি থেকে থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে সাতক্ষীরা জেলার মানুষ। দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই জেলার মানুষ রাজনৈতিক কারণে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়ে আসছে। রাজনৈতিক ট্যাগিংয়ের মাধ্যমে যেভাবে সাতক্ষীরার মানুষকে নিপীড়ন ও দমন করা হয়েছে, তা ইতিহাসে বিরল।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সাতক্ষীরার মানুষ সবসময় পাশে থেকেছে। দক্ষিণবঙ্গের মানুষের এই আত্মত্যাগ ও অবদান আমাদের ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আমরা এমন এক রাজনৈতিক ট্রান্সফরমেশনের দিকে যাচ্ছি, যেখানে জনগণ আর প্রজা থাকবে না। বরং নাগরিক হিসেবে তাদের অধিকার ফিরে পাবে।
হাসনাত বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি, জাতিগত সমৃদ্ধি ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নতির জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে। যারা ক্ষমতায় বসেছিল, তারাই বারবার জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমাদের এখন পরিবর্তনের সময়। ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের সরব অবস্থান নিতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে আওয়ামী দখলদার মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। আওয়ামী জাহিলিয়াতের সময় থেকে আমরা দেশকে পরিত্রাণ দিয়েছি। তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যেন আর কখনো ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসিত না হয়।
নতুন রাজনৈতিক দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগামীকাল আমরা নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণা করতে যাচ্ছি। আমরা প্রত্যাশা করি, গণতন্ত্রকামী প্রতিটি রাজনৈতিক দল, ব্যক্তিত্ব ও মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে শামিল হবে। আমাদের রাজনৈতিক দল এদেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রাখবে এবং আর কখনো যেন জালিমের শাসন কায়েম না হয় সে লক্ষ্যে কাজ করবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সাতক্ষীরা জেলা কমিটির উদ্যোগে বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে এই কর্মসূচি শুরু হয়। শেষ হয় বিকেল ৪টায়। অনুষ্ঠানে জেলার শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত ও কারাবরণকারীদের সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সাতক্ষীরা জেলা কমিটির আহ্বায়ক আরাফাত হোসাইন। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মুখ্য সংগঠক আল শাহরিয়ার, মুখপাত্র মোহিনী তাবাচ্ছুম, সংগঠক হাসিবুল হাসান রুমন, যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুম বিল্লাহ ও মিজানুর রহমান, যুগ্ম সদস্য সচিব নাজমুল হাসান রনি, রিজাউন পারভেজসহ জেলার সব উপজেলার ছাত্র প্রতিনিধি।
শেষে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৫
এমআরএম