কক্সবাজার: কক্সবাজারে বিমান বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছিলেন শিহাব কবির নাহিদ (৩০) নামে এক যুবক। সেই ঘটনার এক সপ্তাহ পর এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।
নাহিদের বাবা বাদী হয়ে গত সোমবার রাতে কক্সবাজার সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলার এজাহারে আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ না থাকলেও নাহিদের মৃত্যুর জন্য বিমান বাহিনীর সদস্যদের দায়ী করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, ২৪ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে মহিউদ্দিন নামে এক যুবক বাদী নাছিরকে জানান বিমান বাহিনীর এক সদস্যের গুলিতে তাদের একমাত্র ছেলে নাহিদ মারা গেছে, তার মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ দেখেছেন এবং ময়নাতদন্ত শেষে ধর্মীয় প্রক্রিয়ায় দাফন সম্পন্ন করেছেন।
বিমান বাহিনীর সদস্য বা অন্য কারও সঙ্গে নাহিদের বিরোধ ছিল না জানিয়ে এজাহারে বলা হয়, ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় স্থানীয় জাহেদুল ইসলাম নামে এক যুবককে বিমান বাহিনীর সদস্যরা ঘাঁটিতে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে। এ খবরে উত্তেজনা তৈরি হয়। জাহেদ ইস্যুতে স্থানীয়রা ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বিমান বাহিনীর সদস্যরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়ে। ওই সময় উৎসুক জনতার সঙ্গে রাস্তায় কি হচ্ছে দেখতে বের হন নাহিদ। সমিতি পাড়ার নাঈমের বাসার সামনে গেলে নাহিদের মাথায় গুলি লাগে। এ সময় আহত নাহিদকে বিমান বাহিনীর সদস্যরা তুলে ঘাঁটিতে নিয়ে যায়। সেখানে রক্তরক্ষণে মারা যায় নাহিদ।
কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস খান বলেন, নিহতের বাবার বাদী হয়ে দায়ের করা এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে। এর আগে গত ১ মার্চ এ ইস্যুতে আরও একটি মামলা হয়েছে। সেটি করেছে বিমান বাহিনী। যেখানে দুজনের নাম উল্লেখ করে ২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। তবে সেই দুজন কারা তা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ওসি।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিমান বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয় এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে নাহিদ প্রাণ হারান। আহত হন অনন্ত ১৭ জন, যার মধ্যে বিমান বাহিনীর তিনজন রয়েছে।
ঘটনা সম্পর্কে আইএসপিআর এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, কক্সবাজারে অবস্থিত বিমান বাহিনীর ঘাঁটি কক্সবাজার সংলগ্ন সমিতিপাড়ার কিছু স্থানীয় দুর্বৃত্ত বিমান বাহিনী ঘাঁটির ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। বিয়াম স্কুলের পাশে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট থেকে একজন স্থানীয় লোকের মোটরসাইকেলের কাগজপত্র না থাকায় বিমান বাহিনীর প্রভোস্ট কর্তৃক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘাঁটির অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সমিতি পাড়ার আনুমানিক দুই শতাধিকেরও বেশি স্থানীয় লোকজন বিমান বাহিনীর ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হলে বিমান বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট এলাকায় বিমান বাহিনীর সদস্য ও সমিতি পাড়ার কতিপয় দুষ্কৃতকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে কতিপয় কুচক্রী মহলের ইন্ধনে দুর্বৃত্তরা বিমান বাহিনীর সদস্যদের ওপর ইট পাটকেল ছোড়ে। এ সময় দুর্বৃত্তদের ছোড়া ইট পাটকেলের আঘাতে কয়েকজন আহত হন যার মধ্যে বিমান বাহিনীর চার সদস্য রয়েছে।
নাহিদ নামে এক যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় বিমান বাহিনীর গাড়িতে করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আইএসপিআর জানায়, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার্থে বিমান বাহিনীর সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছোড়ে। স্থানীয় জনসাধারণের ওপর কোনো প্রকার তাজা গুলি ছোড়া হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০২৫
আরএ