ঝালকাঠি: অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করতেই নবজাতক কন্যা শিশুটি এদিক-সেদিক তাকাতে চাইছে। মুখে দিচ্ছে নিজের হাত।
নবজাতক কান্না শুরু করতেই তার সঙ্গে আত্মীয়-স্বজন সবাই গুমরে কেঁদে উঠলো। নবজাতকের জন্মের পরে আনন্দের পরিবর্তে আহাজারি ও বিলাপে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। সবাই নবজাতকের বাবা শহীদ সেলিম তালুকদারকে স্মরণ করে বিলাপ করতে থাকেন।
ছাত্রজনতার আন্দোলনে নলছিটির শহীদ সেলিম তালুকদারের স্ত্রী সুমী আক্তার ফুটফুটে এই কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। শনিবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টার দিকে শহরের একটি ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কন্যা সন্তানটি দুনিয়ার আলো দেখতে পায়।
জানা গেছে, নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার বাসিন্দা সেলিম তালুকদার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ৩১ জুলাই শহীদ হন। অথচ এর তিনদিন পরই ছিল (৪ আগস্ট) তার প্রথম বিবাহবার্ষিকী। ৫ আগস্ট পরীক্ষায় ধরা পড়ে সেলিমের স্ত্রী সুমী আক্তার অন্তঃসত্ত্বা।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে সুমী আক্তারের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শহরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান দুনিয়ার আলো দেখলেও সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারেননি সেলিম তালুকদার।
সেলিম তালুকদার (২৮) বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক শেষ করে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই রাজধানীর ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সামনে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ৩১ জুলাই রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ২ আগস্ট সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয় সেলিম তালুকদারকে।
সেলিমের স্ত্রী সুমী জানান, ওইদিন সকালে বাড্ডা লিংক রোডের কুমিল্লাপাড়ার বাসা থেকে বের হয়ে আন্দোলনে যোগ দেন সেলিম। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষের মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলিবিদ্ধ হন।
সুমি আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী শহীদ হয়েছেন। তার স্মৃতি হিসেবে এই সন্তানই আমার কাছে থাকবে। আমার একটাই চাওয়া আমার সন্তানকে যেন কারও কাছে হাত পাততে না হয়। আমি যতদিন বাঁচবো শহীদ সেলিমের স্ত্রী হিসেবে বাঁচবো। সন্তানকে তার পরিচয় দেব। ’
ছেলের শোকে এখনো কাতর মা সেলিনা বেগম। তিনি বলেন, এখন যদি সেলিম বেঁচে থাকতো তাহলে প্রথম কন্যা সন্তান, কত আনন্দ পেত। তা সেলিমের ভাগ্যে নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২৫
আরএ