বরিশাল: বরিশালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ বাদী হয়ে মামালাটি করেছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ জানান, সাংবাদিকরা কোনো দলের নয়, তারা তাদের কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। সে কাজে বাধা দেওয়া, সাংবদিকদের মারধর করা এবং তাদের মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া, ক্যামেরা-মোবাইল ভাঙচুর করার মতো সন্ত্রাসী কার্যক্রম কেউ করে পার পেয়ে যাবে সেটাও ঠিক নয়। তাই আমরা আইনগতভাবে যেমন বিষয়টি দেখেছি, তেমনি সন্ত্রাসীর বিচারও বিএনপির সিনিয়র নেতাদের কাছে দাবি করেছি।
তিনি বলেন, মামলায় সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারী ছাত্রদল নেতা সোহেল রাঢ়িসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি ও ১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) দুপুরে বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমনা জানান, সাংবাদিক খালিদ সাইফুল্লাহ বৃহস্পতিবার রাতে একটি লিখিত এজাহার দিয়ে গেছেন, সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। তবে মামলার কোনো আসামিকে এ পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি বলেও জানান তিনি।
এদিকে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের দায় দল নেবে না বলে জানিয়েছেন বরিশালের বিএনপি নেতারা। পাশাপাশি তারা বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আহত দুই সাংবাদিকের খোঁজ-খবরও নিচ্ছেন।
বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি স্থানীয় দৈনিকের ফটো সাংবাদিক নুরুল আমিন রাসেল ও নুরুজ্জামানকে দেখতে যান বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহিন, সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী এনায়েত হোসেন বাচ্চু ও নুরুল আমিন।
এ সময় তারা আহত সাংবাদিকদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন এবং বলেন, সাংবাদিকরা কোনো দলের হলে তাদের পাশে এসে আমরা দাঁড়াতাম না। আমরা আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার রয়েছি। কারও ব্যক্তিগত ঝামেলার দায় দল নেবে না। আর দলের নাম ভাঙিয়ে যদি কেউ কোনো অন্যায় করে তবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরিশালের ঘটনা এরই মধ্যে কেন্দ্র অবগত হয়েছে, তারাই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। তবে আপনারা (সাংবাদিকরা) গোটা দলকে দোষী করবেন না এটা আমাদের প্রত্যাশা। কারণ বিএনপি কখনও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবে না।
এদিকে ঘটনার পরপরই বরিশাল মহানগর বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন আহতদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। সে সঙ্গে সাংবাদিকদের ওপর হামলার এ ঘটনায় নিন্দা ও দুঃখ প্রকাশ করেন।
তিনি এক বিবৃতিতে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে এন আমিন রাসেলসহ কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর হামলা ও মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছেন। পাশাপাশি বিবৃতিতে তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের কোনো দল নেই, হামলাকারীরা ছাত্রদলের কেউ হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বিবৃতিতে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশাল আদালত প্রাঙ্গণে পেশাগত দায়িত্ব পালনে গেলে জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রাঢ়ীর নেতৃত্বে ১২-১৫ জন স্থানীয় দৈনিকের ফটো সাংবাদিক এন আমিন রাসেল ও মনিরুজ্জামানের ওপর হামলা চালানো হয়। তাদের মারধর করাসহ, ক্যামেরা, দুটি মোবাইল ভাঙচুর করা এবং নগদ টাকা পয়সা লুটে নেয় হামলাকারীরা। পাশাপাশি আদালতের প্রধান ফটকেই সাংবাদিকদের একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়।
আর এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক উদ্বেগ জানিয়েছে সাংবাদিক মহল। বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আনিসুর রহমান খান স্বপন বলেন, সাংবাদিকরা কর্মক্ষেত্রে গিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মূখীন হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আদালত প্রাঙ্গণে ও তার সামনে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও তাদের মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা সত্যিই উদ্বেগজনক। দিনের বেলা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে বরিশালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবণতির বিষয়টি যেমন সামনে আসছে, তেমনি আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সে সঙ্গে পুলিশের সামনে এ ঘটনা ঘটিয়ে সন্ত্রাসের জানান দিল হামলাকারীরা। পুলিশ এর দায় এড়াতে পারে না। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি যেসব পুলিশ সদস্যের সামনে এমন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটেছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২৫
এমএস/জেএইচ