ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ চৈত্র ১৪৩১, ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৪ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আজও ঢাকা ছাড়ছে নগরবাসী, সদরঘাটে যাত্রীদের স্বস্তি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২৫
আজও ঢাকা ছাড়ছে নগরবাসী, সদরঘাটে যাত্রীদের স্বস্তি

ঢাকা: ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিনেও প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ঢাকা ছাড়ছে নগরবাসী। এ দিন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যাত্রী বেশি থাকলেও অতিরিক্ত কোনো চাপ ছিল না।

গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারের ঈদযাত্রা সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক ছিল বলে জানায় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।

সদরঘাটে আসা যাত্রীরা বলেন, এবছর ছুটি বেশি হওয়াতে সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে ঢাকা ছাড়ছে। কোনোরকম ভোগান্তি ছাড়াই নিজ নিজ গন্তব্যে যাচ্ছে নগরবাসী। এ ছাড়া নির্দিষ্ট সময়সূচি ও সব নিয়ম মেনেই ঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়া হচ্ছে। ফলে অনেকটা স্বস্তি নিয়েই রাজধানী ছাড়ছে সাধারণ মানুষ।

মঙ্গলবার (০১ এপ্রিল) রাজধানীর একমাত্র নৌবন্দর সদরঘাটের লঞ্চের কর্মচারী ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

সরজমিনে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, আপনজনদের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। বিকেল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সদরঘাট টার্মিনালে যাত্রীদের পদচারনায় ও লঞ্চ স্টাফদের হাক ডাকে মুখরিত হয়ে উঠে লঞ্চ টার্মিনাল। স্বাভাবিকের সময়ের তুলনায় পন্টুনে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। তবে কোনো রকমের দুর্ভোগ ছাড়াই যাত্রীরা লঞ্চে উঠতে পারছেন। পন্টুনে বাঁধা সারি সারি লঞ্চ। চাঁদপুরগামী লঞ্চগুলোতে যাত্রীর কিছুটা চাপ থাকলেও বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা রুটের লঞ্চগুলো অনেকটাই ফাঁকা। তবে ঈদের দিনের তুলনায় এদিন যাত্রী অনেক বেশি। প্রতিটি লঞ্চ ধারণক্ষমতা অনুযায়ী যাত্রী নিচ্ছে। পাশাপাশি সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিচ্ছে।  

লঞ্চ মালিক-শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ২০২২ সালের জুনে পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চের যাত্রী কমেছে। এ অঞ্চলের মানুষ এখন বাসেই কম সময়ে গন্তব্যে যেতে পারেন। তবে ভোলা ও হাতিয়ায় লঞ্চ ছাড়া বিকল্প নেই। তাই বরাবরের মতোই এ দুটি গন্তব্যে চাপ রয়েছে। এবার ভোলা ও নোয়াখালীর হাতিয়ার লঞ্চগুলোতে বরাবরের মতোই যাত্রী চাহিদা রয়েছে। এ দুটি গন্তব্যের লঞ্চে সকাল থেকেই যাত্রী ওঠা শুরু হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা ও লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, আজ ঈদের দ্বিতীয় দিন সকালে থেকেই যাত্রীতের চাপ ছিল। দুপুরের পর থেকে সেটা আরও বেড়েছে। চাপ বাড়লেও কোনো রকমের দুর্ঘটনা এখনও ঘটেনি। সকলে স্বস্তিতে লঞ্চে উঠতে পারছেন। লঞ্চগুলোও নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত যাত্রী ও ভাড়া কোনো লঞ্চে নেই। ফলে সকলে নিরাপদে বাড়ি যাচ্ছেন এবং ফিরতেও পারবেন।

এম ভি কর্ণফুলী ১১ কেবিন ম্যানেজার মো. শরিফ বাংলানিউজকে বলেন, আজকে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যাত্রী বেশি আছে। গতকাল ঈদ ছিল, গতকাল যে যাত্রী গেছে তার থেকে আজকে অনেক বেশি যাত্রী। আমাদের ১০২টি কেবিনের মধ্যে ৭০টি কেবিন বুকিং হয়েছে। ডেকও ভরে গেছে। আমরা অতিরিক্ত কোনো ভাড়া বা যাত্রী নিচ্ছি না।

কর্ণফুলীর যাত্রী রাজু আহমেদ বলেন, ঢাকাতে ব্যবসার করি, তাই ঈদের আগে বাড়ি যাওয়া হয় না। পরিবারের সদস্যদের আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি, আজ বাড়ি যাব আশা করি ছুটি শেষে ঢাকা ফিরব। আজকে যাত্রীদের চাপ আছে। সড়কে কোনো যানজট ছিল না। কোনো রকম দুর্ভোগ ছাড়াই লঞ্চে চলে আছি। একটু আগেই চলে আসছি। যাতে ডেকে ভালো একটা জায়গা পাই। লঞ্চ তো ছাড়বে সাড়ে ৮টায়। এবছর বাড়ি কোনো ভাড়ার কথা কেউ বলেনি।

ঢাকা-বেতুয়া লাইনে যাবে এম ভি টিপু ১৪। লঞ্চটির কেরানি মো. সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের মোট ১৫৭টি কেবিনের মধ্যে ১৩২টি বুক হয়েছে। আজকে ঈদের দ্বিতীয় দিন, সে অনুযায়ী যে যাত্রী, সেটা সন্তোষজনক। ঈদের পর আর কত যাত্রী হবে? শুক্রবার থেকেই ফিরতি যাত্রা শুরু হবে। যাওয়ার চাপ কমবে, এখন আসার চাপ বাড়বে।

এমভি টিপু-১৪ এর যাত্রী মো : রাসেল হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকাতে ঈদ করেছি। এখন গ্রামে যাচ্ছি বাবার সাথে কয়েকটা দিন কাটাতে। এবার ছুটি বেশি তাই ধীরে সুস্থে বাড়ি যাচ্ছি। ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তাঘাটও ফাঁকা ছিল, তেমন কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি।

ঢাকা-শৌলা-মুলাদী-ঢাকা পথে যাত্রী পরিবহন করে এম ভি মিতালী-৪। এ লঞ্চের যাত্রী সোহেল রানা বাংলানিউজকে জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর তাদের অঞ্চলের অধিকাংশ যাত্রী বাসে যাতায়াত করেন। আর যাদের সঙ্গে কিছু মালামাল থাকে তারাই মূলত লঞ্চে যাতায়াত করেন।

এম ভি মিতালী-৪ এর ব্যবস্থাপক আরিফুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আজকে টার্মিনালে প্রচুর যাত্রী। ঈদের পর এত যাত্রী হবে আশা করিনি। সাধারণত আমরা ঈদের পরদিন প্রায় ফাঁকা লঞ্চ নিয়েই ছেড়ে যায়। এবছর ভালোই যাত্রী পাওয়া গেছে। মূলত ঈদে লম্বা ছুটির জন্য এটা হয়েছে।  

তাসরিফ লঞ্চের কেবিন ইনচার্জ আরিফ হোসেন বলেন, এবার ঈদে টানা নয় দিনের ছুটি পেয়েছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। তাই আজও ঢাকা ছাড়ছে নগরবাসী। এবছর দীর্ঘ ছুটি থাকার কারণে বাড়ি ফেরার অনেক সময় পাওয়ায় এক সঙ্গে যাত্রীদের চাপ পড়ছে না। স্বস্তিতে ঈদযাত্রা করতে পারছেন যাত্রীরা। ঈদ মৌসুম হলেও কেবিনে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হয়নি। বরং আগাম বুকিং ছাড়া ঘাটে গিয়ে কেবিন পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিটিসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীর প্রায় ৩৫ শতাংশ নৌপথে যেতেন। এখন সেটি প্রায় ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে। তখন ঢাকা থেকে ৪২টি নৌপথে ২২৫টির মত লঞ্চ চলাচল করত। এখন প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৬৫টি লঞ্চ চলে বিভিন্ন পথে।

তারা আরও জানান, ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, নৌ-পুলিশ ও বিএনসিসিসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এবার ঈদের আগে বেশ কয়েকদিন ছুটি থাকায় যাত্রীরা ধীরে ধীরে ঢাকা ছাড়ছে। আশা করছি, নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন যাত্রীরা।

লঞ্চ টার্মিনালে ট্রাফিক ও নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণের অফিসে বিএস এস এম মামুন বাংলানিউজকে জানান, সকাল ৬টা থেকে আজ সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দেশে ৪২টি নৌরুটে ঢাকা থেকে লঞ্চ ছেড়ে গেছে ৫০টি, ঢাকাতে এসেছে ৬৫টি লঞ্চ। আজ রাতের সব মিলিয়ে ৯৫টির মতো লঞ্চ ঢাকা ছেড়ে যাবে। গতকাল ঢকা থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে ছেড়ে গেছে ১১২টি লঞ্চ এসেছে ১১৬টি লঞ্চ। আজ ঈদের দ্বিতীয় দিন তাই গতকাল ঈদের দিন থেকে আজকে যাত্রী অনেক বেশি। এবছর ছুটি বেশি হওয়ায় এখনও মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। আগামী শুক্রবার থেকে ঈদের ফিরতি যাত্রা শুরু হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২৫
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।